ভিসানীতি ঘোষণার পর বিএনপির মাথা বেশি খারাপ: তথ্যমন্ত্রী

মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর বিএনপির মাথা আরও বেশি খারাপ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পদাক ড. হাছান মাহমুদ।

শনিবার (১০ জুন) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাবেক সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও সাবেক বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল আলমের মৃত্যুতে আয়োজিত শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ সিরাজুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজ মাঠে এ শোকসভার আয়োজন করে।

তিনি বলেন, বিএনপির এখন দুই ভীতি, একটা হচ্ছে নির্বাচন ভীতি, আরেকটা হচ্ছে মানুষ। সেজন্য বিএনপি মহাসচিবসহ তাদের নেতাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বিশেষ করে মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর বিএনপির মাথা আরও বেশি খারাপ হয়েছে। কারণ এখন বিএনপি আর নির্বাচন প্রতিহত এবং বর্জন করার কথা বলতে পারবে না, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, দয়া করে নির্বাচনের খেলা থেকে পালিয়ে যাবেন না। নির্বাচনে আসুন, অংশগ্রহণ করে আপনাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করুন। আপনারা ১০ শতাংশ ভোট পান কি না সেটি পরখ করে দেখুন। আগামী নির্বাচন আমরা ওয়াকওভার চাই না, নির্বাচনী খেলায় আপনারা আসুন, আমরা খেলে বিজয় লাভ করতে চাই, আওয়ামী লীগ খেলে আপনাদের গোল দিতে চায়। আর বিএনপি খেলা থেকে পালিয়ে যেতে চায়।

তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল বলেছেন সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নাকি আওয়ামী লীগ ১০ শতাংশ ভোটও পাবে না। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনের সময় জিয়াউর রহমান আমাদের ওপর স্টিম রোলার চালিয়েছিল। চট্টগ্রাম শহরে বিএনপির ক্যাডারদের দা, কিরিচ আর লোহার রডসহ নামিয়ে দিয়ে মহড়া দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ঠিকমতো ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। সেই নির্বাচনেও আমরা ৩৩/৩৪ শতাংশ ভোট পেয়েছি। আসলে আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ করে তাহলে তারাই ১০ শতাংশের বেশি ভোট পাবে না।

আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি সাড়ে তিন হাজার মানুষ পুড়িয়েছে। এর মধ্যে ৫০০ জন আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। চার হাজারের মতো গাড়ি পুড়িয়েছে এবং মানুষের সম্পত্তি জ্বালিয়ে দিয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। বিএনপির এজন্য মানুষের কাছে যেতে ভয়। বিএনপিকে কেন মানুষ ভোট দেবে? তারা এখন ঘাপটি মেরে বসে আছে। তারা আবার বের হয়ে জনগণের ওপর হামলা চালাবে। তারা জানে নির্বাচনে জিতবে না, এখন চেষ্টা করবে দেশে গন্ডগোল লাগানোর। গন্ডগোল লাগিয়ে দেশে একটা বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করবে। কিন্তু জনগণ তাদের সেই সুযোগ আর দেবে না।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য আছে। সেই পার্থক্য প্রয়াত মোসলেম উদ্দিন আহমদ ও নুরুল আলমের জীবন সম্পর্কে যদি আলোচনা করি তাহলে আমরা দেখতে পাই। এখন অনেকেই রেডিমেড নেতা হতে চাই, টাকা দিয়ে রাজনীতি কিনতে চান। আওয়ামী লীগের রাজনীতি কখনো টাকার কাছে বিক্রি হয় না, হবে না এবং বিক্রি হতে দেব না। রেডিমেড নেতা হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নয়, সেজন্য হচ্ছে বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টি। সেখানেই হচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টির পার্থক্য।

তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন, অনেক প্রার্থী আসবে, নানা ধরনের কথা বলবেঅ তাদের জিজ্ঞাসা করবেন, আমরা যে রাস্তাগুলো করেছি সেগুলোতে গর্ত হলে সেগুলো তারা ভরাট করতে পারবে কি না। যাদের গর্ত ভরাট করার যোগ্যতা নেই তারা নানা সমালোচনা করে। আমাদের করা রাস্তা দিয়ে ফোর হুইলার গাড়ি চালিয়ে গিয়ে বলেন কোনো উন্নয়ন হয়নি। যারা এরকম বলবে তাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে বলতে হবে আগের মতো কাদা মাড়িয়ে হেঁটে যাও। বোয়ালখালী উপজেলার উন্নয়নের জন্য আমি সবসময় চেষ্টা করি সহায়তা করার। বোয়ালখালীবাসীর অনেক প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। ভাঙন রোধে কর্ণফুলী নদীর তীরে ব্লক বসানো হয়েছে। রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, মোসলেম উদ্দিন আহমদের অনেক স্বপ্ন ছিল। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কালুরঘাট সেতু। কালুরঘাট সেতু এরই মধ্যে নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। একনেকের প্রাথমিক স্তর অনুমোদন হয়েছে, চূড়ান্ত অনুমোদনও ইনশাল্লাহ হবে। সড়ক এবং রেল- দুটি মিলেই একটি সেতু হবে। কালুরঘাট সেতুর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজেই গুরুত্ব সহকারে দেখছেন।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ক্ষমতায় থাকলে বিনয়ী হতে হয়, বিনয়ের কোনো বিকল্প নেই। সব ভালো কাজ করেও যুবলীগ ছাত্রলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগ বা অন্য কোনো অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজনের ঔদ্ধত্য আচরণের কারণে আমাদের সব সাফল্য ম্লান হতে পারে না। কেউ দলের নাম ভাঙিয়ে দল এবং সরকারের বদনাম করলে দল তাদের দায়িত্ব নেবে না, দলে তাদের কোনো জায়গা হবে না। নতুন কোনো দাবি-দাওয়া নয়, এতদিন যাবৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যেসব উন্নয়ন করেছে জনগণের কাছে সেটি প্রচার করুন।

বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ এমপি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি এস এম আবুল কালাম।

ইকবাল হোসেন/ইএ/জেআইএম