হাসনাতকে নিয়ে সারজিস
মবের মধ্যে ঢুকে মারামারি থামানোর কথা বলতে হেডম লাগে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রোববার (২৬ জানুয়ারি) রাতে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা চলছিল। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ পরিণত হয়। পরিস্থিতি শান্ত করতে রাত সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে উপস্থিত হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। কিন্তু সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে তিনি ব্যর্থ হয়ে সেখান থেকে ফিরে যান। এ ঘটনার ভিডিও রাতেই ভাইরাল হয়ে যায়।
এ নিয়ে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে হাসনাতের সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।
সারজিস স্ট্যাটাসে লিখেন, আশেপাশে এমন বহুত শত্রু আছে, যারা সুযোগ পেলে খুন করে ফেলবে। এইটা জানার পরেও মবের মধ্যে ঢুকে মারামারি থামানোর কথা বলতে হেডম লাগে। অন্য কেউ এই সাহস করে নাই। সাহস করেছে হাসনাত আব্দুল্লাহ। সাহসটা করার জন্যে হাসনাতকে মাথায় তুলে ফেলতে হবে, সেটা বলছি না। তবে ন্যূনতম অ্যাপ্রিশিয়েটটা অন্তত করতে শেখেন। হয়তো ফলাফল প্রত্যাশিত হয়নি, কিন্তু এর চেয়েও খারাপ কিছু হতে পারতো ৷ সবচেয়ে বড় কথা উদ্দেশ্য সৎ ছিল ৷
- আরও পড়ুন
- শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আলোচনার চেষ্টা করতে গিয়ে তোপের মুখে হাসনাত
- সাত কলেজ ও ঢাবি শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
- সায়েন্সল্যাব ছেড়ে ঢাবি প্রো-ভিসির বাসভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা
তিনি লিখেন, এই ছেলেটার (হাসনাত) সমস্যা হলো—এর মাথা গরম আর সবসময় গ্রেটার পারসপেক্টিভ চিন্তা করে। কিন্তু সত্যি এটাই যে, মাথা গরম বলেই সেই জুলাইয়ে ভিসি চত্বরে গায়েবানা জানাজা শেষে— যখন সবাই পুলিশের টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড আর ছররা বুলেটে দিগ্বিদিক ছুটে যাচ্ছিল, তখন এই ছেলেটা সর্বপ্রথম স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ওই পুলিশের দিকে দুই হাত প্রশস্ত করে এগিয়ে যায়। আর বলে ‘we are open to killed!’
‘ঠিক যেমনিভাবে গতকাল গিয়েছিল। এই ছেলেটাই সেই জুলাইয়ে হাসিনার বিরুদ্ধে রাজাকার রাজাকার মিছিলের সামনের সারিতে মাঝখানে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, যখন অনেকেই নিজেকে সেফ জোনে রেখেছিল। এই ছেলেটাই সর্বপ্রথম এবং একা সচিবালয়ে আনসার লীগের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে এবং পরবর্তীকালে ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় সচিবালয় অনেকটা সুরক্ষিত হয়ে ওঠে।’
‘এই মাথা গরম ক্ষ্যাপা ছেলেটার দোষ হচ্ছে—যখনই কোথাও অস্থিতিশীল অবস্থা দেখা দেয়, ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যায়, তখনই এ কোনো কিছু চিন্তা না করে সমাধানের জন্য ছুটে যায় ৷ হোক সেটা ক্যাম্পাস, রাজপথ কিংবা অন্য কোথাও।’
হাসনাতের সেই ভিডিওটি শেয়ার করে নেতিবাচক মন্তব্যকারীদের উদ্দেশে সারজিস বলেন, আপনারা যারা শুধু ঘরে বসে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলতে পারেন, তাদের মতো সেফ গেম প্লে না করতে পারাটা হাসনাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা। কিন্তু তিক্ত সত্য এটাই যে, এই মাথা গরম স্বভাবওয়ালা ক্ষ্যাপা তরুণ প্রজন্মের কারণেই এই নতুন বাংলাদেশ।
- আরও পড়ুন
- ফ্যাসিবাদের পক্ষে যে কলম লিখবে আমরা সে কলম ভেঙে দেবো
- ঢাবি প্রো-ভিসিকে সরাতে ৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম ৭ কলেজ শিক্ষার্থীদের
‘কতজনের এখন কতরকম স্বার্থ আর ধান্ধা সেটা আমরা বুঝি, অপ্রত্যাশিত কিছু হলে এরা যে আবার গর্তে যাবে সেটাও জানি ৷ কিন্তু দিনশেষে চোখের সামনে রক্ত আর হাজারো জীবনের বিনিময়ে অর্জিত নতুন স্বাধীনতা রক্ষা করতে হাসনাতরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ৷’
‘আপনাদের মতো গুটিকয়েক ভণ্ড, সুবিধাবাজ, কালপ্রিট কি বললো আর কি বিহেভ করলো তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না ৷ হাসিনার পোষারা এর চেয়ে কম বলেনি বা করেনি ৷ মিনিমাম কমনসেন্স থাকলে বোঝা উচিত কারা করসে, কেন করসে। রকেট সাইন্স না বোঝাটা।’
‘We are Hasnat & proud to be a fellow-fighter of Hasnat(আমরা হাসনাত এবং তার সহযোদ্ধা হতে পেরে গর্বিত)।’
এমকেআর/এএসএম