মালয়েশিয়া শ্রমবাজার নিয়ে অপপ্রচার, হাই কমিশনের প্রতিবাদ

বাংলাদেশিকর্মী নিয়োগ চুক্তি (এমওইউ) সংশোধন ইস্যুতে সংবাদমাধ্যম মালয়েশিয়াকিনি ও ফ্রি মালয়েশিয়াটুডেতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভুল ব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তিকর শিরোনাম নিয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে ও প্রেস রিলিজে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৩ জুলাই প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ হুমকি দিয়েছে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করবে, যদি মালয়েশিয়া চুক্তির পরিবর্তন না করে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, বাংলাদেশ সরকার মালয়েশিয়াকে এমওইউ পরিবর্তনের জন্য চাপ দিচ্ছে এবং না করলে কর্মী পাঠানো বন্ধ করে দেবে—যা হাই কমিশনের মতে, পুরোপুরি অসত্য, ভ্রান্ত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
হাইকমিশন জানিয়েছে, এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
২ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘জাপানের শ্রমবাজার: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে ড. নজরুল কেবল বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চুক্তির কাঠামো বিশ্লেষণ করে বলেন, বর্তমান এমওইউ অনুযায়ী রিক্রুটিং এজেন্সি বাছাইয়ের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ মালয়েশিয়ার হাতে রয়েছে এবং দেশে ক্রমবর্ধমানভাবে দাবি উঠছে যেন সব এজেন্সির জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়। তবে তিনি কোথাও মালয়েশিয়াকে হুমকি দেননি বা চুক্তি পরিবর্তন না করলে ‘শ্রমিক পাঠানো বন্ধ’ করা হবে—এমন কোনো মন্তব্য করেননি।
এদিকে সেমিনারে থাকা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, উপদেষ্টা জাপানে কর্মসংস্থান সম্পর্কে সরকারের গৃহীত কার্যক্রম ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরার পর বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ে মিডিয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত হাইপ তোলার বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি মালয়েশিয়া সম্পর্কে অতিরঞ্জিত প্রচার করা সম্পর্কে বলেছেন।
মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে কি কি উল্লেখ আছে, সেগুলো উভয় দেশকে মেনে চলতে হচ্ছে এবং কোনো এক পক্ষ সমঝোতা স্মারক মেনে না চললে কি হবে সে সম্পর্কে তিনি বলেছেন। মালয়েশিয়া সম্পর্কে অতিরঞ্জিত নিউজ করার ফলে বিদেশ গমনেচ্ছু যুবরা প্রতারণার ফাঁদে পড়ে। এজন্য নিউজ করার আগে বেশ ভেবে চিন্তে নিউজ করা দরকার বলে অনেকে মনে করেন।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়া সম্পর্কে হরহামেশাই এ ধরনের নিউজ প্রচারের ফলে মালয়েশিয়া আপত্তি জানিয়ে আসছে।
৫ জুলাই হাইকমিশনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে আরও স্পষ্ট করেছে, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে গভীর, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থাভিত্তিক। এই সম্পর্কের অন্যতম স্তম্ভ হলো অভিবাসন খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা। কয়েকদশক ধরে বাংলাদেশি শ্রমিকরা মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন এবং এই প্রক্রিয়াকে আরও ন্যায়সঙ্গত, স্বচ্ছ ও বৈষম্যহীন করতে দুই দেশই কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ হাই কমিশন মনে করে, এমন বিকৃত তথ্যসংবলিত ও মনগড়া সংবাদ প্রতিবেদন শুধু দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে না বরং অভিবাসন সংলাপের ইতিবাচক ধারাকেও ব্যাহত করে। এই প্রেক্ষাপটে তারা দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা ও যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্বার্থে এবং শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সব সময়ই সংলাপ, বোঝাপড়া ও সমন্বয়ের পথেই বিশ্বাসী। বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে হাই কমিশন সকল সংশ্লিষ্ট মহলকে বাস্তবতাভিত্তিক তথ্য ও গঠনমূলক আলোচনার ওপর জোর দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।
এমআরএম/জেআইএম