মা ছাড়া প্রবাস জীবন

জমির হোসেন
জমির হোসেন জমির হোসেন , ইতালি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:০৫ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০২০

মা, এমনই এক মানুষ যাকে ছাড়া একদম চলে না। জীবনের শুরু থেকে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তার পাশে থাকা চাই। সেই মা যদি না থাকে তখন কেমন লাগে? এ আর বলার অবকাশ নেই। শূন্য মন, জগৎ সংসার হয়ে যায় অন্ধকার। সেই মাকে ছাড়া ষোলটি বছর কেটে গেল প্রবাসে।

শুধু তাই নয়। মহাখুশির দিন ঈদসহ অন্যান্য সময় কাটে মা’কে ছাড়া। জীবন থেকে প্রায় দুইযুগ অতিবাহিত হলো আমার জন্মধাত্রী সেই মায়ের সানিধ্যহীন। প্রতিটি আনন্দক্ষণে ভেসে ওঠে জননীর প্রতিচ্ছবি। বিষণ্নতায় আমার মন বোবা কান্না করে নিভৃতে। কিন্তু প্রকৃতির কি নির্মম পরিহাস জন্মালে মৃত্যুবরণ করতে হয়। তাইতো আমাকে ছেড়ে মা না ফেরার দেশে চলে গেছে। আর কখনো আসবে না, বলবে না খোকা কেমন আছিস?

বিজ্ঞাপন

কিছু সুখ যেন সুখই থেকে যায়। যা কাউকে স্পর্শ করে না। শুধু স্মৃতির পরতে পরতে দুঃখগুলো ভাসমান থাকে। এ পৃথিবীতে মায়ের স্নেহ-মমতা ছাড়া বেড়ে ওঠা আমার ছোট দৃষ্টিতে শুধু বেকার এবং ব্যর্থতা। যেখানে মায়ের আদর নেই সেখানে হাহাকার ছাড়া আর কী থাকতে পারে? যন্ত্রণার এক সাগর অতিক্রম ছাড়া আর কিছুই না।

তাইতো কিছু আনন্দের মুহূর্ত আমাকে দারুণভাবে পীড়া দেয়। যেন এই সুখ আমার জন্য নয়। আমার কিশোরকালে মায়ের অকালমৃত্যু ঘটে। লিভার সিরোসিস নামক মারাত্মক ব্যাধি আমার প্রিয় মাকে না ফেরার দেশে নিয়ে যায়। আমাকে একা করে, শূন্য করে। মায়ের অপূর্ণতা যেন আমাকে প্রতিনিয়ত শাস্তি দেয়। জননীর ভালোবাসা ত্রিভূবনে আর কারো কাছে মিলবে না।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

কারণ মায়ের ভালোবাসা কারো কাছ থেকে পেতে স্বার্থের বলি হতে হয়। তাই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা একমাত্র মা ব্যতীত এই দুনিয়ায় পাওয়া যায় না। স্বার্থের শেষ চূড়ায় থাকে গভীর ভালোবাসা। কিন্তু মায়ের বেলায় থাকে সীমাহীন নিঃস্বার্থ। জন্মের পর বেশ কয়েক বছর মাকে ডাকতে পেরেছি বটে, কিন্তু সে ডাকে মায়ের প্রতি যতটুকু ভালোবাসা থাকা দরকার সেটা হয়ে ওঠেনি শুধু বয়স কম থাকার কারণে।

আর যখন বয়স বাড়লো, বুঝতে শিখলাম ঠিক তখন মৃত্যুদূত এসে হাজির হলো আমার প্রিয় মায়ের কাছে। মাকে আর তৃপ্তিভরে ডাকার সৌভাগ্য আমার হয়নি। এটি ভাগ্য নাকি মায়ের ভালোবাসার সাথে জন্ম-জন্মান্তরের দেয়াল। যা ভেদ করে সেই ভালোবাসাকে অনন্তকালেও পাওয়া সম্ভব নয়।

স্বার্থহীন শুভাকাঙ্ক্ষী অন্ধকার জগৎ থেকে আলোতে এনেছেন সেই প্রিয় মাকে স্রষ্টা কেন দূরে নিয়ে গেলেন? যেখানে আমার মন মতো প্রবেশ করতে পারি না। বন্দি না হয়েও জনম জনম বন্দি সেখানে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এ জীবনের জন্য এটি অপরিসীম অপূর্ণতা। এ বিষয়ে লেখার শুরু থাকলেও সমাপ্তি নেই।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

প্রবাসে এমনিতেই একা সময় কাটাতে হয়। বিষণ্নতার ছোঁয়া প্রতিটি মুহূর্তে হৃদয়ে আঘাত হানে নীরবে। কাউকে বোঝানোর মতো ভাষা নেই। একি এক যন্ত্রণা মনে, যা হৃদপিণ্ডকে মাঝে মাঝেই স্পর্শ করে। তবু নীরবে সহ্য করতে হয়। সৃষ্টির কাছে বড়ই অসহায় আমরা সবাই। তবু তিনি আমার সৃষ্টিকর্তা, পরম করুণাময়। একটি সংসার স্বাবলম্বী থাকে মাতা-পিতার সমন্বয়ে।

কিন্তু এর মধ্যে একজন যদি অন্যত্র চলে যান তবে সেই সংসার অর্ধমেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়ে। সময়ের পথচলা যত বেশি দৃঢ় হয় ততই সংসারে নানা তিক্ততা বাড়তে থাকে। আর ঝরেপড়া মানুষটি যদি হয় প্রিয় মা, তবে ওই সংসার সম্পূর্ণ মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়ে। সময় যত যায় বৈরি বাতাসের প্রভাব বৃদ্ধি হতে থাকে। ছিন্নমূল করে দেয় পরিবারের সুখ। এমনিতেই প্রবাসে থাকা কষ্টকর, তারপরে আবার মা-বিহীন। তাও না ফেরার দেশে চলে যাওয়া মা!

প্রবাস মানেই একাকী জীবন। সব থেকেও যেন কেউ নেই। আর যদি একেবারেই না থাকে সেটা কিভাবে মেনে নেয়া সম্ভব। আমি ভাবতে পারি না। ভীষণ কান্না পায়। আমি কাঁদি।

বিজ্ঞাপন

এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - jagofeature@gmail.com