নাগরিকত্বের শর্ত শিথিল করছে আয়ারল্যান্ড

সৈয়দ আতিকুর রব, আয়ারল্যান্ড থেকে
আয়ারল্যান্ডে জন্ম নেয়া বিদেশি নাগরিক শিশু-সন্তানদের জন্য নাগরিকত্ব পাওয়ার শর্ত শিথিল করার উদ্যোগ নিয়েছে আইরিশ সরকার। এ বিষয়ক একটি বিলে মন্ত্রিসভার অনুমোদন চেয়েছেন আইরিশ জাস্টিজ মিনিস্টার।
প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভায় গৃহীত হলে যেসব বিদেশি নাগরিকের সন্তান আয়ারল্যান্ডে জন্ম নেবে তাদের আইরিশ নাগরিকত্ব পাওয়া আগের চেয়ে সহজ হবে।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, আয়ারল্যান্ডে জন্ম নেয়া শিশুদের- যাদের পিতা-মাতা আইরিশ নাগরিক নয়, নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়। সেক্ষেত্রে তাদের পূর্ববর্তী ৮ বছরের মধ্যে অন্তত চার বছর এবং আবেদন করার আগে সর্বশেষ এক বছর বিরতিহীন আয়ারল্যান্ডে বসবাস করতে হবে। তবে এবার এই সময়সীমা কমিয়ে নাগরিকত্ব প্রক্রিয়া সহজ করতে চান দেশটির জাস্টিজ মিনিস্টার হেলেন ম্যা কেনি।
নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী বসবাস করার শর্ত ৫ বছর থেকে কমিয়ে ৩ বছর করা হবে। এর ফলে যেসব বিদেশি নাগরিকের শিশু সন্তানরা জন্মসূত্রে আইরিশ নাগরিকত্ব পেতে চায় তারা আরো সহজে সেটি পাবে।
তবে আইরিশ জাস্টিজ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইনের এই সংশোধনী শুধুমাত্র বৈধ বিদেশিদের সন্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। অবৈধ বিদেশিদের সন্তানরা আয়ারল্যান্ডে জন্ম নিলেও নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে না। সহসা এই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনাও নেই।
পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে একজন এমপির উত্থাপিত বিলটির বিষয়ে জাস্টিজ মিনিস্টার ও লেবার পার্টির সিনেটর ইভানা বাচিক নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর এই প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
গত ডিসেম্বরে আইরিশ পার্লামেন্টে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়া সংক্রান্ত একটি বিল নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক হয়েছিল। সে সময় সিনেটর ইভানা বাচিক বলেছিলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, যে শিশুরা আয়ারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করে, এখানেই বেড়ে ওঠে এবং অন্য কোনো দেশের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক নেই- আইরিশ নাগরিকত্ব দেয়া না হলে এমন শিশুরা রাষ্ট্রহীন অবস্থায় বড় হতে থাকবে।
তিনি বলেন, তারা পরিবারের সঙ্গে আয়ারল্যান্ড থেকে বের করে দেয়ার ঝুঁকিতে থাকে। একজন অভিবাসী বা আশ্রয়প্রার্থীর বৈধতার আবেদন পাওয়ার পর তাকে ফেরত পাঠানো নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক দিন লেগে যায়। এতদিনে একটি শিশু জন্মের পর এখানেই বেড়ে ওঠে এবং শিক্ষা গ্রহণ করে।
ওই বিতর্কে জাস্টিজ মিনিস্টার হেলেন ম্যা কেনি বলেছিলেন, তিনি সিনেটর বাচিকসহ অন্যদের সঙ্গে বিষয়টি সমাধানে কাজ করতে চান।
সিনেটর বাচিক মঙ্গলবার জার্নালের সঙ্গে এক সাক্ষাতে বলেছেন, এমন একটি ইতিবাচক উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত হতে পেরে আমি ভীষণ আনন্দিত। এর মাধ্যমে আয়ারল্যান্ডে জন্ম নেয়াদের জন্য আইনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখতে পাব আমরা।
এর আগে, ২০০৪ সালে এক গণভোটের মাধ্যমে জন্মসূত্রে আইরিশ নাগরিকত্ব পাওয়া নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল। দেশটির সংবিধানে আনা সংশোধনীতে বলা হয়েছিল, জন্ম নিয়েই কোনো শিশু আয়ারল্যান্ডের নাগরিকত্ব পাবে না, যদি না তাদের পিতা-মাতার কোনো একজন আইরিশ নাগরিক হন।
এমআরএম/এএসএম