ঘুরে এলাম চোখ ধাঁধানো দুবাই

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৫৮ এএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফাইজা রাফা, সংবাদকর্মী

মধ্যপ্রাচ্যের একটি মুসলিম দেশ দুবাই। দেশটি যথাযথ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। মরুর বুকে আকর্ষণীয় স্থাপনা গড়ে তুলেছে। ৫০ বছরের উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। এই অল্প সময়ে এত কিছু আসলেই অবাক করার মতো। আকর্ষণীয় স্থাপনাগুলো নির্মাণের মাধ্যমে দুবাই সরকার পৃথিবীব্যাপী সাড়া ফেলে দিয়েছে। প্রতি বছর প্রচুর সংখ্যক পর্যটক দেশটিতে ঘুরতে যান।

বিজ্ঞাপন

২৮ আগস্ট, আমি হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউএস-বাংলা বিমানে সন্ধ্যা ৬টায় দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই। স্থানীয় সময় ১১টায় পৌঁছে যায় দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। দেশটির বিমানবন্দর আসলে অনেক বড় এবং অসাধারণ নজর কাড়ার মতো।

বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর হচ্ছে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ইমিগ্রেশন শেষ করে চলে আসলাম ট্যাক্সি কাউন্টারে। ট্যাক্সিতে চড়ে চলে যাই আমার গন্তব্যস্থল হোটেল রেডিসন ব্লু ওয়াটার ফ্রন্টে। ট্যাক্সিতে চড়ে যাওয়ার সময় দেখলাম আলোকিত দুবাই শহর। উচু উচু বিল্ডিং ইমারত আলোকিত একটি শহর।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ঘুরে এলাম চোখ ধাঁধানো দুবাই

রাস্তায় ঘোরার সময় বিভিন্ন ধরনের জিনিস চোখে পড়ে। তবে একটি বিষয় আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে সেটা হচ্ছে দুবাইয়ের ট্রাফিক ব্যবস্থা। তাদের ট্রাফিক ব্যবস্থা খুবই উন্নত। আইন মানে আইন আইন, ভঙ্গ করলে মোটা অংকের জরিমানা। দুবাইতে ট্রাফিক জ্যাম সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিটের। তার চেয়ে বেশি দেখিনি। তাদের রেড সিগনাল মানে রেড সিগনাল।

রাস্তা যতই ফাঁকা হোক কেউ রেড সিগন্যাল অমান্য করে কোথাও যায় না। রাস্তায় খুব একটা ট্রাফিক পুলিশেরও দেখা মেলে না। চারদিকে ক্যামেরা বসানো এবং তার মাধ্যমে সব কিছু পর্যবক্ষণ করা হচ্ছে। ব্যস্ত নগরীতে খুব একটা ট্রাফিক জাম পোহাতে হয়নি। যাইহোক এসব সুন্দর জিনিস দেখতে দেখতে চলে এলাম আমার হোটেলে। তখন রাত প্রায় ২টা বাজে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ঘুরে এলাম চোখ ধাঁধানো দুবাই

প্রথম দিন: দুবাই ভ্রমণের শুরুটা ছিল সিটি টুর অর্থাৎ নগর ঘুরে দেখা। দুবাই বেড়াতে গেলে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে আপনারা এই সিটি টুরের ব্যবস্থা করতে পারেন। কোনোটা ৪ ঘণ্টা। আবার ৮ ঘণ্টারও হতে পারে।

নগর ঘুরে দেখার মাধ্যমে আপনি দুবাই নগরী সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানতে পারবেন এবং বেশ কিছু জায়গায় আপনাদের নিয়ে ঘুরে দেখাবে। প্রথম দিন দুবাই মিউজিয়াম, দুবাই ফ্রেম দুবাই, মসজিদ, জুমেরা বিচ, মেরিনা ক্রুজ, বুর্জ আল আরব আরো বেশ কিছু জায়গা ঘুরেছি।

বিজ্ঞাপন

যার মধ্যে দুবাই মিউজিয়ামের আকৃতি ছিল আকৃষ্ট করার মতো। গোলাকার বৃত্তের মতো একটি প্রেমের আকারে মিউজিয়ামটি তৈরি করা হয়েছে। যা দেখতে আসলেই ব্যতিক্রমী। সিটি টুর শেষে রাতে আমরা চলে যাই দুবাই মল ঘুরতে। দুবাই মহল অনেক সুন্দর অনেক বড় এবং একটু এক্সটেন্সিভ।

দুবাই মলের একটু সামনেই হচ্ছে বুর্জ খলিফা৷ রাতের বেলা বুর্জ-খলিফা দেখতে অসাধারণ। অনেক সুন্দর আলোর ঝলকানি। বুর্জ খলিফা সামনে রাতের বেলা প্রতি আধা ঘণ্টা পরপর ওয়াটার ড্যান্স দেখা যায়। রাতের বেলা দুবাই শহরের লাইটিং এক অন্যরকম। অসাধারণ সৌন্দর্যপূর্ণ। সেদিনের দুবাই মল সিটি এবং বুর্জ খলিফা দেখা শেষে ফিরে যায় হোটেলে।

ঘুরে এলাম চোখ ধাঁধানো দুবাই

বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয় দিন: এরপর চলে যাই আবারো বুর্জ খলিফাতে। বুর্জ আল খলিফা হচ্ছে বিশ্বের সর্বোচ্চ উচ্চতার ইমারত। ১৪৮ তলার বৃহৎ উচ্চতার একটি ইমারত। সেদিন বুর্জ আল খলিফা উচ্চতায় অর্থাৎ ১২৬ তলায় উঠে যাই। ১২৬ তালার ওপর থেকে দুবাই শহরকে দেখতে পেয়ে আমার ভীষণ ভালো লাগছিল। পুরো দুবাই শহরটাকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম।

বুর্জ আল খলিফা টপ ফ্লোর দেখার পরে আমরা চলে আসি দুবাই মিউজিয়ামে ফিস অ্যাকুরিয়াম। বুর্জ খলিফা উচ্চতায় ওঠা এবং ফিশ অ্যাকুরিয়াম দুইটার জন্য কিন্তু আলাদাভাবে টিকিট কাটতে হয় এবং দুইটা জায়গার দূরত্ব অনেকটা কাছাকাছি। দুবাইয়ের ফিশ অ্যাকুরিয়াম দুবাই মলে অবস্থিত এবং এটা একটি বড় অ্যাকুরিয়াম।

অ্যাকুরিয়ামে মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রজাতি, নানান প্রজাতির মাছ দেখেছি। তাছাড়া সেখানে পেঙ্গুইন দেখারও সুযোগ রয়েছে। অ্যাকুরিয়াম থেকে বের হয়ে দুবাই মলের নিচতলায় রয়েছে সৌন্দর্য্যপূর্ণ একটি ঝরণা যা আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করতে বাধ্য। দুবাই মল এবং বুজ খলিফা এসব দেখতে কিন্তু অনেক সময় প্রয়োজন। যার কারণে আমাদের দ্বিতীয় দিন দুবাই মল এবং বুর্জ খলিফার আশপাশেই কেটেছে।

বিজ্ঞাপন

ঘুরে এলাম চোখ ধাঁধানো দুবাই

তৃতীয় দিন: আমি চলে যাই গোল্ডের বাজারের যার নাম গোল্ড সুক। দুবাইয়ের সোনা দিয়ে বানানো গহনা অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাংলাদেশের অনেকে দুবাই বেড়াতে গেলে কিছু না কিছু হলে সোনা নিয়ে আসেন। বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন বিভিন্ন আকৃতির বিভিন্ন ধরনের সোনা দিয়ে তৈরি গহনা রয়েছে। সোনা দিয়ে তৈরি গহনাগুলো দেখতে অনেক চকচক করছিল তা দেখে বেশ ভালো লাগছিল। গোল্ড সুকের পর্ব শেষ করে আমরা চলে যাই দুবাই সিটি সেন্টারে সেখানে কিছু টুকটাক শপিং করি। শপিং শেষ করে চলে আসি জুমেরা বিচে কিছুক্ষণ সেখানে থাকার পর ফিরে আসি হোটেলে।

চতুর্থ দিন: দুবাই ভ্রমণের চতুর্থ দিনটি ছিল আমার জন্য স্মরণীয়। সেদিন আমি মাঠে গিয়ে বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা এশিয়া কাপ ২০২২ খেলা দেখেছি। দুর্ভাগ্যজনিত কারণে বাংলাদেশ সেদিন জিততে পারেনি। তবে মাঠে বসে খেলা দেখার আনন্দ ছিল অন্যরকম। যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। মাঠে বসে খেলা দেখার মজাটাই আলাদা। প্রচুর বাঙালি দর্শক ছিল সেখানে খেলা দেখার জন্য।

বিজ্ঞাপন

পঞ্চম দিন: এই দিনটি ছিল খুবই আনন্দপূর্ণ। সেদিন দেখতে যাই ডলফিন শো এবং পাখির শো দেখতে। যেখানে ডলফিন নানান আকৃতিতে তারা নৃত্য দেখাচ্ছিল। পাখির শো কম ছিল না কোনো অংশে। অন্যরকম সুন্দর। সেখানে পাখিরা নানা ভঙ্গিমায় নানাভাবে অনেক কিছু দেখাচ্ছিল। দর্শকরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখছিলেন। ডলফিন এবং বার্ড শো ছিল ভিন্নধর্মী এবং অত্যন্ত আনন্দদায়ক।

ঘুরে এলাম চোখ ধাঁধানো দুবাই

ষষ্ঠ দিন: আমি চলে যাই ডেজার্ট সাফারি পার্ক অর্থাৎ মরুভূমিতে। মরুভূমি দেখাটা ছিল এক ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা। যেহেতু কখনো মরুভূমি দেখা হয়নি তাই প্রথমবার মরুভূমি দেখতে যাওয়ার আকর্ষণটা ছিল অন্যরকম। চারদিকে ধুধু বালুচর প্রচণ্ড রোদের মধ্যে আমরা সেখানে অবস্থান করি। মরুভূমিতে সবচেয়ে আনন্দদায়ক জিনিস ছিল উটের পিঠে চড়া। বাংলাদেশের উটের পিঠে চড়ে কোথাও ভ্রমণ করার সুযোগ নেই তাই মরুভূমিতে উটের পিঠে প্রথমবার চলে বেশ মজা পাচ্ছিলাম। প্রথমবার এ রকম মরুভূমি দেখে বেশ ভালো লাগছিল তবে সেখানে প্রচণ্ড গরম লাগছিল। ডেজার্ট সাফারি পর্ব শেষ করে আবার চলে আসি শহরে। তবে একটা কথা বলে রাখা ভালো, ডেজার্ট সাফারি জন্য কিন্তু আলাদাভাবে টিকেট কাটতে হয় আমি অনলাইনে টিকিট বুকিং করেছিলাম।

দুবাইতে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরার জন্য একটা দিক খেয়াল রাখলে আপনি খুব সহজেই কম খরচে ঘোরাঘুরি করতে পারবেন। তার মধ্যে প্রথমেই হচ্ছে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগে গুগলের সার্চ করে ওই দেশ সম্পর্কে জেনে নেওয়া। তারপর আপনি কোথায় কোথায় যেতে চান সেটা সিলেক্ট করে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট বুকিং করলে আপনার খরচটাও অনেকটাই কমানো সম্ভব।

আমি একটা জিনিস খেয়াল করেছি তারা সবসময় সময়মতো কাজ করে ৷ কোথাও যদি বুকিং করেন তারা সময়ের বাইরে যায় না। আমি এখন পর্যন্ত যতগুলো জায়গায় ঘুরেছি সব জায়গাতেই আমাদের হোটেল থেকে পিকআপ করেছে এবং সেটা খুবই সময়মতো।

দুবাইয়ের আবহাওয়া অত্যন্ত গরম। তাই সবসময় নিজেদের সঙ্গে পানি, শরবত, ছাতা, টুপি রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। আর দুবাইয়ের খাবার-দাবার সম্পর্কে যদি আমি বলি, তাহলে একেক স্থানে একেক রকম। তবে বাংলাদেশিদের মতো আমরা যারা আছি নরমালে ভাত ডাল খেয়ে অভ্যস্ত তাদের জন্য সেখানে একটু কষ্ট হয়ে যায়।

সেখানে আপনি বেশিরভাগ সময় বিরিয়ানি পাবেন। বাংলাদেশের মতো সাদা ভাত এবং ডাল পাওয়া খুবই কষ্টকর। তাই খাবারের ক্ষেত্রে এই জিনিসটা একটু মাথায় রাখতে হবে। আপনি খুব সহজেই ইন্ডিয়ান অথবা পাকিস্তানের রেস্টুরেন্ট পেয়ে যাবেন কিন্তু সেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন ধরনের বিরিয়ানি পাবেন।

ঘুরে এলাম চোখ ধাঁধানো দুবাই

দুবাইয়ের কোথাও যাতায়াতের জন্য ট্যাক্সি এবং মেট্রো রেল রয়েছে। লোকাল বাসে যাতায়াত খরচ তুলনায় কিছুটা কম। ট্যাক্সি ভাড়া কিছুটা বেশি। বুর্জ আল খলিফা ফিশ অ্যাকুরিয়াম ডলফিন শোয়ে সব ধরনের জিনিস আছে। এগুলোর টিকিট যদি অনলাইনে এজেন্সির মাধ্যমে বুকিং করা সম্ভব হয় তাহলে খরচটা অনেকটা কমানো সম্ভব। তা না হলে ইনস্ট্যান্ট টিকিট কাটলে খরচ অনেকটাই বেড়ে যায়।

সপ্তম দিন: এবার ফেরার পালা। দুবাইয়ের অনেক মনোমুগ্ধ স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে আবারো আমায় ফিরে যেতে হচ্ছে আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। অনেক কিছু দেখেছি। অনেক উপভোগ করেছি। দুবাই আসলেই আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছে। অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেক কিছু শিখেছি।

আমার এই লেখাটার মাধ্যমে অনেকেই দুবাই সম্পর্কে জানতে পারবেন। আর কেউ যদি দুবাই যেতে চান আশা করি এই লেখাটা অনেকের কাজে লাগবে।

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

লেখক
ফাইজা রাফা

সংবাদকর্মী/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - jagofeature@gmail.com