পুলিশ বললো কিছু ব্যতিক্রমও আছে, সবাই জানে না

পাসপোর্ট সময় মতো ডেলিভারি না দিতে পারার কারণ জানা সত্ত্বেও পুলিশ কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করে শুধু বলে দিলাম। নাগরিকের নিরাপত্তা, অধিকার এবং বাধ্যবাধকতা এই তিনটি কাজই তো করার জন্য আছেন অথচ তার একটাও এখন আগের মতো হচ্ছে না কারণ কী, জানতে পারি? আমার প্রশ্নে চমকে গেলেও তার গ্রহণযোগ্য তেমন কিছু বলার ছিল না, শুধু বললেন অস্থায়ী একটি পাসপোর্ট এয়ারপোর্ট পুলিশ থেকে নিতে।
অস্থায়ী পাসপোর্ট শুধু একবারই ব্যবহার করা যায় স্বল্প মেয়াদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে। এটা নাগরিকদের বিশেষ কারণে দেওয়া হয়ে থাকে এবং এ পাসপোর্ট ৭২ ঘণ্টার আগে পাওয়া সম্ভব নয়।
ভ্রমণের আগের দিন আমি এবং মারিয়া আমাদের বর্তমান পাসপোর্ট নিয়ে বিমানবন্দরে পুলিশ পাস-কন্ট্রোলে গেলে তারা বললো যেহেতু আমরা ডিসেম্বরের তিন তারিখে সুইডেনে ফিরব সেক্ষেত্রে অস্থায়ী পাসপোর্টের দরকার নাই। আমি বললাম তাহলে তোমার হেড অফিস, ফরেন মিনিস্ট্রি, থ্যাই অ্যাম্বাসি এমনকি সব রাষ্ট্রের হোম পেজে লেখা রয়েছে কমপক্ষে ছয় মাসের ভ্যালিড পাসপোর্ট থাকতে হবে?
পুলিশ বললো কিছু ব্যতিক্রম আছে যা সবাই জানে না, তাছাড়া সুইডিস নাগরিকদের জন্য বিশেষ নিয়ম-কানুন রয়েছে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে। যাইহোক পরের দিন সকালে বাড়ি থেকে টাক্সি করে রওনা দিলাম থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে।
বিমানবন্দরে জনাথানকে বিদায় দিলাম, সে থাই এয়ার ওয়েজে করে রওনা দিলো ব্যাংককের উদ্দেশ্যে। আমরা ঘণ্টাখানেক পরে ট্যুই বিমানবন্দরে রওনা দিলাম পুকেটের উদ্দেশ্যে। টানা ১৩ ঘণ্টা পর এসে ল্যান্ড করলাম পুকেটে। পুকেটে সকাল সবে ছয়টা বাজে মানে সুইডেনে তখন রাত বারটা।
চেকিংয়ের পর্ব শেষ হতেই দেখি বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের গাইড। গাড়িতে উঠে পড়লাম ঝটপট করে। গাড়ি চলতে শুরু করলো দ্বীপের মধ্য দিয়ে। দুই পাশের পরিবেশ দেখে মনের জানালা খুলে গেলো, মনে হতে লাগলো এই তো সেদিন আমি তোমাকে দেখেছি। ঢাকার অদূরে মাগুরা থেকে যখন নহাটা গ্রামে ভ্যান বা রিকশা করে গ্রামের বাড়ি যেতাম ঠিক তেমন একটি অনুভূতি এসেছিল ক্ষণিকের জন্য।
কিছুক্ষণ যেতে দেখি রাস্তার ধারে ডাব, আম, জামরুল, থাইল্যান্ডের লিচু, নানা রকমের কলা। ড্রাইভারকে বললাম গাড়ি থামাও। গাড়ি থেমে গেলো, হঠাৎ সবাই একটু অবাক হয়ে গেলো! গাড়ি কেন থামালাম। পুরো গাড়িতে দশজন মতো হবে, বললাম সবাইকে একটি করে ডাব দাও। যাত্রীরা তো অবাক! চেনা নেই, জানা নেই, হুট তরে ডাব খেতে দিলো, না চাইতেই!
আমি শুধু ডাব নয় অনেক কিছু কিনলাম। মেয়ে এবং তার মা মুগ্ধ হয়ে আমাকে দেখছে, দেখছে আমার নতুন রূপ। হঠাৎ জেসিকা প্রশ্ন করলো বাবা তুমি কি তোমার নিজ দেশের কথা ভাবছো? বললাম, ‘কিছুটা’। নিজেকে আবেগের থেকে সরিয়ে টেলিফোনটা ধরে কিছু ছবি কিছু ভিডিও করতে করতে হোটেলে এসে চেকিংয়ের পর্ব শেষ করতেই জনাথানের টেলিফোন। সেও উঠেছে তার হোটেলে। দুই ঘণ্টা পর একসঙ্গে লাঞ্চ করবো বলে সময় এবং স্থান ধার্য করে ওয়াটসঅ্যাপে থাই ট্যুর নামে একটি গ্রুপ খুলেছে।
প্রথম দেখা পুরো পরিবার বহু বছর পর এবং একসঙ্গে তাও ২৭ এবং ২১ বছরের ছেলে-মেয়ে এক সঙ্গে আন্দামান দ্বীপ পুঞ্জগুলো ঘুরব, মজা করব, ভাবতেই একটু অন্যরকম মনে হতে লাগলো। জনাথান ক্রাবি দ্বীপের যে রেস্টুরেন্ট পছন্দ করেছে তার নাম ফ্যামিলি রেস্টুরেন্ট অনেক ধরনের খাবারের অর্ডার দিয়েছে। বেশির ভাগই শাকসবজি এবং মাছের।
খাবারগুলো মজা করেই সবাই খেলাম যদিও জেসিকা কিছুটা সাবধানতার সঙ্গে প্রথম দিনের খাবারগুলো খেল। খাবার টেবিলেই পরিকল্পনা শুরু হয়ে গেলো কবে, কখন, কোথায় কীভাবে যেতে হবে এবং কার কী করা বা দেখার শখ সেটা যেন ওয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করি যেন করে কারো কোনো দেখা বা ঘোরার স্বপ্ন অপূর্ণ না থাকে।
মজার ব্যাপার হলো সবাই পছন্দ করেছে দ্বীপ ঘুরবে, প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটাবে, সাগর আর পাহাড়ের সঙ্গে পুরোটা সময় কাটাবে। পানির পিপাসা লাগলে ডাবের পানি আর ক্ষিদে লাগলে থাই সি ফুড এবং সন্ধ্যা হলে হেটেলে ফিরে গোসল শেষে এক সঙ্গে ডিনার, তারপর গ্রামের বাজারগুলো একটু ঘুরে দেখা, একটু এদের জীবন ব্যবস্থাকে বুঝতে চেষ্টা করা, তারপর ক্লান্তিকে শান্ত করতে ঘুম।
সাগরের ঢেউ ফ্যানের বাতাস সব মিলে রাত হঠাৎ কখন যে সকাল হয়ে গেলো জানা হলো না। সাগরের পাড়ে ভোরের বায়ু সত্যি নিদারুণ এক অপূর্ব মনোমুগ্ধকর অনুভূতি। সূর্য দেখার আগে স্রষ্টার প্রতি কিছুক্ষণ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সূর্যকে সঙ্গে রেখে আজ চারটি অ্যাইলান্ড তাদের নিজ নিজ গুণাগুণ নিয়ে হাজির হয়েছে। পাহাড় কথা বলে না, কথা বলতে সাহায্য করে।সাগর দেখে না, সে দেখায়।
প্রতিটি পাহাড় দাঁড়িয়ে রয়েছে আদেশের অপেক্ষায়। সাগর হাজার চেষ্টা করেও তার দায়িত্ব থেকে বিচলিত হতে পারছে না। শুকনো ভেজা নানা ধরনের বালুর কণাগুলো ঝক ঝক করে পাহাড়ের চারপাশ চমৎকার পরিবেশে শীতল পাটির রূপ ধারণ করে অপেক্ষা করছে কখন পর্যটকরা সেখানে আসবে আর শান্ত শীতল হয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। কেউ সাদা দেহকে পুড়িয়ে করছে ব্রাউন। কেও ব্রাউন থেকে কালো। আমি তেমন কয়েকটি দ্বীপে সময় কাটিয়েছি।
যেসব বিচ আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে ভ্রমণ করেছি তার মধ্যে রয়েছে রাইলি বিচ, চিকেন দ্বীপ, হং দ্বীপ, মানকি দ্বীপ, জেমস বন্ড দ্বীপ, বাম্বু দ্বীপ, লাঙ্কবি দ্বীপ, পিপি দ্বীপ, মায়া বে বিচ, ট্যুব এবং মোর দ্বীপ।
চলবে...
এমআরএম/জেআইএম