নতুন আইওএম প্রধান

অভিবাসীরা ‘মানুষ’, তাদের সমস্যা হিসাবে দেখা উচিত নয়

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:১৫ এএম, ০৪ অক্টোবর ২০২৩
আইওএম এর ৭২ বছরের ইতিহাসে প্রথম কোনো নারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন অ্যামি পোপ। ছবি: এক্স @IOMchief

আইওএম প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে জেনেভায় প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন অ্যামি পোপ। এ সময় তিনি সমুদ্রে অভিবাসী নৌকাডুবি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ১১তম প্রধান হিসেবে ১ অক্টোবর থেকে দায়িত্ব নিয়েছেন অ্যামি পোপ। সেই সঙ্গে জাতিংঘের এই সংস্থাটির ৭২ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি চলতি বছরের ১৫ মে-এ জেনেভাতে আইওএম কাউন্সিলের ষষ্ঠ বিশেষ অধিবেশনে প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন।

দায়িত্ব নিয়ে সোমবার (২ অক্টোবর) আইওএম এর জেনেভা কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, অভিবাসীরা প্রথমত মানুষ তাদেরকে সমস্যা হিসাবে দেখা উচিত নয়। এই পার্থক্যটি বোঝা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আজ থেকে ঠিক ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের ৩ অক্টোবর ইতালি উপকূলে অভিবাসী নৌকডুবিতে নিহত ৩৬৮ জনেরও বেশি অভিবাসীকে স্মরণ করেন৷ বলেন, এই ধরনের ঘটনাগুলোকে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত করা হচ্ছে। এটি উদ্বেগজনক। ভুক্তভোগীদের অভিবাসী, শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী হিসাবে চিহ্নিত করার আগে তাদের জীবনের মূল্যায়ন করা উচিত। আমরা যা বলি ও করি এবং যেসব সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করি তার পেছনে মূল কারণ হলো মানুষের মর্যাদাকে স্বীকৃতি দেওয়া।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, অভিবাসন শিগগিরই শেষ হবে না। জলবায়ু বিপর্যয়, সংঘাত, নিপীড়ন এবং অন্যান্য অস্থিতিশীল পরিস্থিতির বিশাল প্রভাবের কারণে লাতিন আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকা পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে প্রায় ২৮ কোটি মানুষ অভিবাসী হয়েছেন। আমরা জানি এরই মধ্যে চলতি বছর জলবায়ু প্রভাবের ফাঁকে কয়েক মিলিয়ন লোক নিজ জায়গা থেকে সরে গেছে। আরও কয়েক মিলিয়ন লোক রয়েছে যারা অত্যন্ত জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে বসবাস করেন।

অ্যামি পোপ জানান, জলবায়ু পরিবর্তনই, সংঘাত-দ্বন্দ্ব, চাকরির ভবিষ্যৎ, প্রতিবেশী বা সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতাসহ নানা কারণে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ বিশ্বের এক অঞ্চল থেকে অন্য কোনো অঞ্চলে উন্নত জীবন খুঁজছেন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত মাসে প্রায় চার লাখ ৭০ হাজার অনিবন্ধিত ভেনেজুয়েলান অভিবাসীদের বৈধভাবে কাজ করার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তটি অভিবাসনকে উৎসাহিত করতে পারে কিনা জানতে চাওয়া হয় আইওএম প্রধানের কাছে।

জবাবে তিনি বলেন, যদি চাকরি না থাকে তবে তারা আসবে না? তাই জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার লক্ষ্য ধরা হয়েছে, আরও বেশি সংখ্যক মানুষের জন্য নিয়মিত ও বাস্তবসম্মত অভিবাসন রূটের আহ্বান জানানো।

সংবাদ সম্মেলনে অ্যামি পোপ বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনের ফলাফল তুলে ধরেন। যেখানে অভিবাসন কীভাবে দারিদ্র্য হ্রাসের জন্য একটি ‘শক্তিশালী’ মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে সেটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আইওএম প্রধান বলেন, আজ স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, নির্মাণ, হোটেলসহ বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৩০টি খাত শূন্য পদ পূরণের জন্য লড়াই করছে। প্রকৃতপক্ষে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে অসাধারণ উন্নতি ঘটলেও শ্রমের ঘাটতি মেটানোর জন্য এটি তেমন কোনো অগ্রগতি সাধন করেনি। করলেও সেই কাজগুলোর অনেক কাজ একটি মেশিন ভালভাবে সম্পন্ন করতে পারবে না স্প্যানিশ মডেল।

স্প্যানিশ সরকার অভিবাসন নীতিতে শ্রম সমস্যাকে কিভাবে গ্রহণ করেছে তা উল্লেখ করে, অ্যামি পোপ জোর দিয়ে বলেন, অর্থনীতির যেসব খাত বছরের পর বছর ধরে অভিবাসীদের উল্লেখযোগ্য প্রবাহ দেখেছিল তারা অতিরিক্তভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

কারণ অভিবাসনের ফলে লোকেরা আরও ভাল হওয়ার চেষ্টা করেছে। এটি উদ্ভাবন ক্ষমতা বড়িয়েছে, শ্রম সরবরাহকে ঠিক রেখেছে এবং বার্ধক্যে থাকা জনগোষ্ঠীর অভাব পূরণ করেছে। ‘অভিবাসন’ সামগ্রিকভাবে একটি সুযোগ।

বিজ্ঞাপন

আইওএম প্রধানের তার কর্ম পরিকল্পনার অগ্রাধিকার হিসেবে আগামী রবিবার আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করতে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবার উদ্দেশে রওনা হবেন। তারপর তিনি কেনিয়া, সোমালিয়া এবং জিবুতি সফর করবেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পৃথিবীর ৮০ শতাংশেরও বেশি অভিবাসন আফ্রিকায় ঘটে।

তিনি সরকার ছাড়াও স্থানীয় সম্প্রদায়, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে অভিবাসন সমাধানের জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে চান।

বিজ্ঞাপন

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

অ্যামি পোপ বলেন, আপনার আলোচনার টেবিলে প্রাইভেট সেক্টরও থাকতে হবে। কারণ বেসরকারি খাতগুলো আমাদের প্রায়শই বলে দেখুন, আমাদের চাকরি কোটা খালি আছে। আমাদের সেগুলো পূরণ করার জন্য লোক নেই। আমাদের সমস্যা থেকে বের হতে সাহায্য করুন।

এমআরএম/এএসএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - jagofeature@gmail.com