বাড়িতে পা দিতেই অন্যরকম মনে হলো
অমিয় দাশ, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র
এর পরেরবার এলে তোকে কদমা খাওয়াবো। নন্দ সাহার তৈরি মজাদার কদমা। আমি ‘আচ্ছা’ বলে ঘাড় নাড়লাম। লোকমান ভাই চোখের পলকে দ্রুতগতিতে বড় রাস্তার দিকে হুড়মুড় করে তার সাইকেল চালিয়ে চলে গেলেন, যেন তার ভীষণ তাড়া আছে।
এরপর থেকে নিয়ম করে প্রতি বুধবার স্কুলের ছুটির পর বাড়িতে এসে হাতমুখ ধুয়ে, খেয়ে, ফুটবল মাঠে খেলতে যাওয়ার আগে ঈশরাত আপুদের বাড়ি গিয়ে খামটা নিয়ে লোকমান ভাইকে পৌঁছে দিতাম। পিয়নের কাজটা আমার একদম পাকাপাকি হয়ে গেলো।
দানাদার বা বাতাসা খেতে খেতে প্রতি সপ্তাহের খামটা লোকমান ভাইয়ের জিম্মায় পৌঁছে দেওয়া একটি এক্সাইটিং কাজ বলে মনে হতো। টমীকে গিয়ে একটু আদর করা, তারপর কদমা খেতে খেতে ফুটবল মাঠে গিয়ে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলার জন্য উপস্থিত হওয়া, একটা রুটিন হয়ে গেলো।
এভাবে বেশ কয়মাস চললো। এক বুধবারে আমি পিয়নের ডিউটি করতে গিয়েছি ঈশরাত আপুদের বাড়িতে। বাড়িতে পা দিতেই একটু অন্যরকম মনে হলো। বাড়ির উঠানের থেকে বারান্দার সবকিছু বেশ পরিপাটি করে গোছানো। উঠানের ওপর রোদে শুকানোর জন্য টানানো তারের ওপর কোনো ধোয়া জামাকাপড়, শুকনো বা ভেজা লুঙ্গি, শাড়ি বা কোনো কিছুই ঝুলছে না।
যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জিনিসপত্র পরিপাটি করে সাজানো। লোকজনের কথাবার্তায় বাড়িটা বেশ জমজমাট। রান্নাঘরে ঈশরাত আপুর মায়ের সাথে রান্নাবান্নাতে জোগাল দিচ্ছে ওপাড়ার আর এক নারীরা। বারান্দায় যেখানে বসে ঈশরাত আপু পড়াশোনা করে, সেখানে চারজন লোক ঈশরাত আপুর আব্বার সাথে বসে কথা বলছে।
আমি ওদের বাড়ির গেটের বেকী বেড়া পার হতেই থেমে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আর এক পাও এগোতে সাহস হলো না। আমাকে ঠিক ঈশরাত আপুর আব্বা দেখে ফেললেন। বললেন, ‘কিরে দীপ্ত, কেমন আছিস?’
আগের পর্ব পড়ুন
আমি একটু এগিয়ে গিয়ে বললাম, ‘ভালো আছি আঙ্কেল। ঈশরাত আপু বাড়িতে আছে?’
বারান্দায় বসা সবাই একবার আমাকে পরখ করে দেখে নিলো। মেহমানদের একজন অল্প বয়সী। লোকমান ভাইয়ের থেকে দু চার বছরের বড় হবে বোধ হয়। তার প্যান্ট শার্ট পরা। বাকি তিনজন পায়জামা পাঞ্জাবি পরা। একজনের মাথায় মকমলের খয়েরী রঙের টুপী পরা। মনে হচ্ছে লোকটা এইমাত্র কাশ্মীর থেকে ভেড়া চরানো ছেড়ে উঠে এসেছে।
টেলিভিশনের একটা বিদেশি অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম, কাশ্মীরে ভেড়ার রাখালরা ওরকম টুপী পরে পাহাড়ি শীতের জায়গায় ভেড়া চরায়। ঈশরাত আপুর বাবাও বেশ একটা জম্পেশ, আর ইস্ত্রি করা পাঞ্জাবি পরে বসে কথা বলছিলেন।
ঈশরাত আপুর আব্বা বললেন, ‘ঈশরাত আজকে একটু ব্যস্ত আছে। মেহমান এসেছে, কালকে আসিস।’
‘আচ্ছা’ বলেই ঘুরে দাঁড়িয়ে ওদের বাড়ির থেকে বের হওয়ার জন্য হাঁটা শুরু করলাম। গুঞ্জন কানে এলো,
‘ছওয়ালডা কিডা?‘
ঈশরাত আপুর আব্বার গলা শুনলাম, ‘আমাদের প্রতিবেশীর ছেলে। মাঝে মাঝে ঈশরাতের কাছে পড়াশোনা দেখিয়ে নিতে আসে।’
‘ও আচ্ছা‘, বললো প্রশ্নকারী।
ভাবলাম, আমার কাছে কোনো বইপত্র, খাতা নেই। তাহলে ঈশরাত আপুর বাবা ওটা বললেন, যদি আবার মেহমানরা আরও কিছু একটা জিজ্ঞেস করে বসে? তাড়াতাড়ি স্থান ত্যাগ করছি এমন সময় দেখলাম ঈশরাত আপু ওদের রাস্তার দিকের জানালা খুলে হাত ইশারা করে আস্তে আস্তে বললো,
‘কাল আসিস, কেমন?‘
এমআরএম/এমএস