লাগেজ ভোগান্তি

ওমর ফারুকী শিপন
ওমর ফারুকী শিপন ওমর ফারুকী শিপন , সিঙ্গাপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৫:৩৭ পিএম, ০২ জানুয়ারি ২০২১

লাগেজ প্রবাসীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভ্রমণ-প্রিয় মানুষের নিত্যসঙ্গী বলা চলে। বিশেষ করে বিদেশ থেকে দেশে যাওয়ার আগে যে জিনিসটা সবার আগে কেনা হয় সেটা হলো লাগেজ। এটি কেনা হলে আস্তে আস্তে কেনাকাটা শুরু করি।

সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরার সময় প্রতিটি বিমানেই নির্ধারণ করে দেয় ৪০ কেজি মালামাল বুকিং দিয়ে নেয়া যাবে। এর বেশি বহন করা যায় না। তবে সঙ্গে করে ১০ কেজি বহন করা যায়। এজন্য মালামাল কেনার সময় একটু হিসেব করতে হয়।

অনেক সময় ৪০ কেজির উপরে মালামাল হলে বিমানবন্দরে রেখে যেতে হয়। কিংবা বুকিং-এর সময় নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। গত বছর আমি আর আমার এক পরিচিত বড় ভাই বাংলাদেশে যাওয়ার সময় নিজেদের মালামাল বিমানবন্দরে রেখে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম।

মালামাল বেশি হওয়ার কারণ আমরাই দায়ী। যেখানে বিমান টিকিটে উল্লেখ করা থাকে বুকিং ৪০ কেজি আর হাতে বহন করা যাবে মাত্র ১০ কেজি। সেখানে আমরা বুকিং-এর জন্য ৬০ কেজি হাতে বহনের জন্য ২০ কেজি নিয়ে যাই।

এই অতিরিক্ত মালামাল নেয়ার কারণ পরিচিতিজনদের তার ভালোবাসার মানুষের জন্য পাঠানো উপহার। দেশে যাওয়ার সময় কেউ যদি বলে আমার সন্তানের জন্য এক প্যাকেট চকলেট পাঠাব কিংবা নব্যবিবাহিত বউয়ের জন্য উপহার, বৃদ্ধ পিতামাতার জন্য কিছু পাঠাব তখন কেউ না করতে পারে না।

এভাবে বিশজন যদি এক কেজি করে পণ্য দেয় তাহলে ২০ কেজি। তাছাড়া অনেক সময় অনেকেই এক কেজির কথা বলে ২কেজি কিংবা ৩ কেজি দিয়ে যায়। কিন্তু কাউকে ফেরত পাঠানো যায় না। তাই অনেক প্রবাসীর মালামাল বিমানবন্দরে নির্ধারিত ওজনের চেয়ে বেশি হয়।

তবে আমি নিজে দেখেছি মালামাল বেশি হলে অনেকেই বন্ধুদের উপহার না ফেলে নিজের মালামাল ফেলে যায়। তাদের ভাবনা আমার মালামালের চেয়ে প্রিয়জনদের জন্য পাঠানো উপহার বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

যাক সে কথা মূল প্রসঙ্গে আসি। আমার পরিচিত এক ভাই মোহন (কাল্পনিক নাম) প্রতি বছর বিশাল বড় লাগেজ কিনে নিয়ে আসেন। কিন্তু গত ১২ বছর যাবত তিনি দেশে যান না। তার এই লাগেজ অন্যরা ব্যবহার করে। গতবছর আমিও দেশে যাবার সময় তার লাগেজ ব্যবহার করেছিলাম।

বিজ্ঞাপন

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

কিন্তু সিঙ্গাপুর ফেরার পর তিনি লাগেজের ক্রুটি পান। চাকা কাজ করছে না। তিনি মন খারাপ করে লাগেজ ফেলে দেন। তিনি যেহেতু দেশে যান না।সেহেতু প্রতিবছর তার লাগেজ কেউ না কেউ ব্যবহার করবে এটাই স্বাভাবিক।

এই নিয়ে মোহন ভাইয়ের কোনো আক্ষেপ নেই। বরং প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে তুমুল আগ্রহ নিয়ে লাগেজ কিনে হাসিমুখে রুমে ফেরেন। গতকালও বিশাল এক লাগেজ কিনে বাসায় ফিরলেন। তার লাগেজ কেনা দেখে অনেকেই মুখ টিপে হাসে। কিন্তু তিনি কিছুই বলেন না। বরং সবার হাসিটা উপভোগ করেন।

তার লাগেজ দেখে আমি নিশ্চিত হলাম এবারও দেশে গেলে আর আমাকে লাগেজ কিনতে হবে না। একেকজন মানুষ একেকরকম কাজ করে আনন্দ পায় তিনিও হয়ত প্রতিবছর লাগেজ কিনে আনন্দ পান। যখন আমরা তার লাগেজ নিয়ে দেশে যাই তখন হয়ত তিনি এক ধরনের সুখানুভূতি অনুভব করেন। যা টাকা দিয়ে কেনা যায় না।

এমআরএম/এমকেএইচ

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - jagofeature@gmail.com