এই শীতে অসহায় মানুষের খোঁজ নিয়েছি কি?

শীতকে বলা হয় ইবাদত-বন্দেগির বসন্তকাল। এ শীতে ইবাদতের সুযোগ অনেক বেশি। একদিকে দিন ছোট অন্যদিকে রাত বড়। ছোট দিনে রোজা পালন সহজ আবার বড় রাতে ইবাদত-বন্দেগি, তাহাজ্জুদ ও ঘুম সব কিছুই সুন্দরভাবে পালন করা যায়। শীতের আরেকটি বড় ইবাদত হলো অসহায় মানুষকে শীতবস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করা। তাহলে এ শীতে অসহায় মানুষের খোঁজ নিয়েছি কি?
অসহায় মানুষের প্রকার থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেন বাড়ি-ঘর হারানো মানুষরা। যারা নিজেদের বাড়ি ঘর হারিয়ে অন্য দেশে বা অন্য অঞ্চলে অন্যের দ্বারা আশ্রিত। যাদেরকে আমরা বলে থাকি শরণার্থী।
খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করা এসব অসহায় শরণার্থীরা কোনো রকম তাবু খাটিয়ে বসবাস করে। বিশ্বের অধিকাংশ শরণার্থীর বসবাস তুষারপাত হওয়া অঞ্চলগুলোতে। মৌসুমভেদে শীত, খড়া ও বৃষ্টি তাদের জন্য চরম কষ্টের। এ শীতে তারা কেমন আছে?
ইউরোপের দেশগুলোতে এমনিতে বছরের বেশিরভাগ সময়ই তুষারপাত হয়ে থাকে। বাস্তবেই তীব্র শীতে তাদের জীবন একেবারে নাজেহাল। সে খবর জানে না অনেকেই।
বর্তমান সময়ে যুদ্ধ-বিগ্রহসহ নানা করণে নানা ধর্ম বর্ণের অসংখ্য মানুষ বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে শরণার্থী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একদিকে তাদের রয়েছে খাবার ও বাসস্থানের কষ্ট। অন্য দিকে প্রচণ্ড শীতে রয়েছে শীতবস্ত্রের কষ্ট। যে কষ্টের অনুভূতির কথা লিখে বা বলে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
বিশ্বব্যাপী শরণার্থী শিবিরের প্রতিটি ক্যাম্পে সীমাহীন অনিশ্চয়তায় কোন রকমে বেঁচে থাকার একটা উপলক্ষের আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তারা। নিজ দেশ, ভিটে-মাটি, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, সহায়-সম্পদ হারিয়ে ফেলা মানুষগুলোর কষ্ট ভুক্তভোগী ছাড়া অনুধাবন করা সহজ নয়।
ইউএনসিআর-এর রিপোর্টের অংকে শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬০ মিলিয়নেরও বেশি। এরমধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার মানুষই বেশি। শুধু তুরস্কের সিরিয়ান রিফিউজি ক্যাম্পেই আছে ৩৬ লাখেরও বেশি শরণার্থী।
এ পরিসংখ্যানের বাইরে বাংলাদেশে আছে মিয়ানমারের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। কোনো দেশ বা রাষ্ট্রের পক্ষে এককভাবে এ অধিক সংখ্যক শরণার্থীর শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা করা সত্যিই অস্বাভাবিক।
আল্লাহ তাআলা শরণার্থীদের তুলনায় স্বাধীনভাবে নিজ নিজ জনপদে বসবাসকারীদের অনেক ভালো রেখেছেন। তাই যারা ভালো আছেন, এ ভালো থাকাটা তাদের জন্য মহান আল্লাহর এক মহান নেয়ামত ও রহমত।
তাই ভালো থাকা মানুষগুলোর উচিত, ভালো থাকার নেয়ামত ও রহমতের শুকরিয়া স্বরূপ অসহায় মানুষ ও শরণার্থীদের অভাব ও দুঃখরোধে সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। তাদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা।
বাড়ির পাশে যে কোনো অসহায় প্রতিবেশির খোঁজ নেয়া। যাদের অতিরিক্ত শীতের কাপড় আছে প্রতিবেশি বস্ত্রহীন মানুষকে তা দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া। এটা মানুষের নৈতিক দায়িত্ব।
আবার যদি কেউ একান্তই কোনো শরণার্থী শিবিরে বা শরণার্থীদের কাছে যাওয়ার কিংবা তাদের কাছে সাহায্য পৌঁছানোর আগ্রহ পোষণ করে তাও সম্ভব। তথ্য-প্রযুক্তির এ সময়ে অসহায় শরণার্থীদের সহযোগিতা কোনো কঠিন বিষয় নয়। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার।
অনেক আন্তর্জাতিক (ট্রাস্টেড) সেবামূলক প্রতিষ্ঠান অফলাইন ও অনলাইনে শরণার্থী শিবিরে ডোনেশন সংগ্রহ করে তা পৌঁছে দিচ্ছে।
সম্প্রতি সিরিয়ার অসহায় মানুষের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছেন আমেরিকান স্কলার ইয়াসির কাজি। শরণার্থী ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাইলে তা যে কারও জন্য অনেক সহজ।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক সেবামূলক সংগঠনই অসহায় দরিদ্র মানুষসহ বিভিন্ন দেশের শরণার্থী শিবিরে বিতরণ করছেন শীতবস্ত্র ও ত্রাণ। শীতের এ কঠিন সময়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে জয় হোক মানবতার।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিশ্বব্যাপী অসহায় যে কোনো মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস