শুধু বড় ছেলে নয়, পরিবারের বড় মেয়ের দায়িত্বের চাপ নিয়েও ভাবা দরকার

লাইফস্টাইল ডেস্ক
লাইফস্টাইল ডেস্ক লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৪১ পিএম, ১৬ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশের বহু পরিবারে, সন্তানদের মধ্যে বড় মেয়ে যেন একজন ‘সহকারী মা’ হয়ে ওঠেন। ছোট ভাইবোনদের দেখাশোনা, মায়ের ঘরের কাজের বোঝা ভাগ করে নেওয়া, স্কুলে ভালো রেজাল্ট করা, অতিথিকে আপ্যায়ন করা – এসব কিছুই যেন তার স্বাভাবিক দায়িত্ব।

কিন্তু এই দায়িত্বগুলোর পেছনে থাকে একরাশ অদৃশ্য মানসিক চাপ, যা দীর্ঘদিন ধরে জমতে জমতে এক সময় মানসিক ক্লান্তি, আত্মপরিচয়ের সংকট ও সম্পর্কজনিত সমস্যায় রূপ নেয়।

এই পরিস্থিতিকে আজকাল এক নতুন নাম দেওয়া হয়েছে এলডেস্ট ডটার সিনড্রম বা বড় মেয়ের সামাজিক চাপ।

কী এই এলডেস্ট ডটার সিনড্রম

এটি কোনো অসুখ নয়, বরং একটি মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক চাপের চিত্র। বড় মেয়ে হিসেবে ছোটবেলা থেকে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব ও প্রত্যাশা তাকে নিজের চাওয়া-পাওয়ার চেয়ে অন্যের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিতে শেখায়।

ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন এমন একজন, যিনি সবসময় সঠিক কাজ করতে বাধ্য, পরিবারে সবার সমস্যা সামলানোর ব্যক্তি ও নিজের আবেগ ও ইচ্ছাকে চেপে রাখা একজন নারী।

শুধু বড় ছেলে নয়, পরিবারের বড় মেয়ের দায়িত্বের চাপ নিয়েও ভাবা দরকার

কীভাবে এটা শুরু হয়?

১. ছোটবেলা থেকেই বড় কন্যা সন্তানের ওপর দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয়

‘তুমি তো বড়, তোমাকে বুঝতে হবে।’ ‘তুমি ভালো না হলে ছোটরা কী শিখবে?’ – এই বাক্যগুলো ছোট বয়সেই তার মাথায় অনেক বড় কিছু ঘটনার দায় চাপিয়ে দেয়।

২. সীমাহীন প্রত্যাশা ও কম প্রশংসা

সে ভাল কাজ করলে সেটাকেই স্বাভাবিক মনে করা হয়। সাধারণত কাজের প্রশংসা পান না বড় মেয়ে। তবে ভুল করলে ছাড় নেই!

৩. ভালোবাসার শর্ত

মা-বাবার প্রশংসা মেলে তখনই, যখন সে সাহায্য করে, দায়িত্ব নেয়, পড়াশোনায় ভালো ফল করে। এভাবে সে শিখে ফেলে যে ভালোবাসা মানেই আত্মত্যাগ।

এই ঘটনাগুলোর প্রভাব পড়ে মেয়ে শিশুটি বড় হওয়ার পর। তাই এই চাপ শুধু শৈশবেই নয়, বড় মেয়েদের পরিণত বয়সেও তাদের চিন্তা-ভাবনা ও সম্পর্কের ধরনে গভীর প্রভাব ফেলে। যেমন-

শুধু বড় ছেলে নয়, পরিবারের বড় মেয়ের দায়িত্বের চাপ নিয়েও ভাবা দরকার

>> তারা নিজের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিতে সংকোচ বোধ করেন।

>> দায়িত্ব না নিলে তাদের মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে।

>> ভালোবাসার বিনিময়ে তারা অত্যাধিক ত্যাগ স্বীকার করে ফেলেন।

>> অনেক সময় তারা একতরফা সম্পর্ক টেনে নিয়ে যান।

>> সহযোগিতা চাইতে সংকোচ বোধ করেন, একে দুর্বলতা মনে হয়।

এসবের ফলস্বরূপ অনেক সময় বড় মেয়েরা বিয়ের পরও স্বামী, সন্তান ও শ্বশুরবাড়ির সকল দায়িত্ব একাই নিতে চান, কারণ তাদের ভিতরে গেঁথে থাকে – ‘আমি না করলে আর কে করবে?’

বাইরে থেকে দেখলে হয়তো তারা সফল, সংগঠিত ও দায়িত্ববান মনে হয়। কিন্তু ভেতরে জমতে মানসিক ক্ষতির পাহাড় –

>> আত্মপরিচয়ের সংকট

>> নিয়মিত ক্লান্তি ও মানসিক চাপ

>> ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তা

>> নিজেকে ভালোবাসতে না পারা

এগুলো থেকে তৈরি হয় অবসাদ, আত্মসমালোচনা ও সম্পর্কভঙ্গের মতো জটিল পরিস্থিতি।

শুধু বড় ছেলে নয়, পরিবারের বড় মেয়ের দায়িত্বের চাপ নিয়েও ভাবা দরকার

এই চক্র ভাঙা জরুরি কেন?

নানী থেকে মা, মা থেকে কন্যা – এভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলছে দায়িত্বের এই চক্র। কিন্তু এই চক্র ভাঙা মানে কিন্তু ঘাড় থেকে দায়িত্ব ফেলে দেওয়া নয়। বরং এটি নিজের মূল্যায়ন করা, দায়িত্ব পালনের পর ধন্যবাদ পাওয়া, নিজের অধিকার স্বীকার করতে শেখা। কারণ একজন বড় মেয়ে শুধু অন্যের জন্য নয়, নিজের জন্যও বাঁচতে শিখলে তবেই সে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।

কীভাবে ভাঙবেন চক্র?

>> আত্মমূল্যায়ন
আপনি শুধু তখনই ভালো নন যখন আপনি কিছু করছেন, আপনার ভেতরের ভালো চিন্তা, ভালোবাসার ক্ষমতা – সবই মূল্যায়িত হওয়ার অধিকার রাখে।

>> সাহায্য চাওয়া অভ্যাস করুন
সহযোগিতা চাওয়া লজ্জার নয়, এটা স্বাভাবিক। নিজে নিজে সব করে ফেলার চেষ্টা বন্ধ করুন। অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিন দায়িত্বের চাপ।

>> না বলা শিখুন
সব দায়িত্ব একা নেওয়া সাহস নয়, কখনও কখনও এটি নিজের ওপর অত্যাচার হয়ে যেতে পারে। তাই প্রয়োজনে ‘না’ বলা খুব জরুরি।

>> নিজেকে সময় দিন
অন্যের পাশে দাঁড়ানোর আগে নিজের পাশে দাঁড়াতে শিখুন। নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন কিছু সময় ব্যয় করুন। নিজেকে প্রায়োরিটি দিন।

একজন বড় মেয়ে একা একা এগুলো সব করতে পারবেন না। এর জন্য প্রয়োজন পরিবারের অন্য সদস্যদের সহযোগিতা। একা এই চক্র ভাঙতে গেলে তিনি একা হয়ে যেতে পারেন। তাই সবাই মিলে চেষ্টা করুন পরের প্রজন্মকে আগের প্রজন্মের চেয়ে স্বস্তির জীবন দিতে।

সূত্র: টাইমস্ অব ইন্ডিয়া

এএমপি/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।