বিপদ

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:০৯ পিএম, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

সাইফুল ইসলাম সুমন

তিন অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ বিপদ। কিন্তু এর গভীরতা অনেক। এ শব্দটির সঙ্গে ছোট-বড় সবাই পরিচিত। প্রাপ্তবয়স্ক এমন কেউ নেই, যে বলবে- আমি কখনো বিপদে পড়িনি।

বিপদ কখনো বলে আসে না। যে কোনো সময়, যে কোনো লোকেরই বিপদ হতে পারে। তাই বিপদ থেকে বেঁচে থাকতে খুব সাবধানে পা বাড়াতে হয়। অনেক সময় এমন হয় যে, যদি কেউ একবার বিপদে পড়ে, তাহলে চারদিক থেকে যেন বিপদ আসতেই থাকে। মনে হয় যেন বিপদ একটি অন্যটির সঙ্গে সম্পর্কিত।

কারো উপর যতি কোনো একটি বিপদ আসে তবে ঐ বিপদটিই যেন চতুর্দিক থেকে বিপদ আসার দরজা খুলে দেয়। এমন অনেক বাস্তব উদাহরণ কম-বেশি আমাদের সবার জানা। এখন প্রশ্ন আসতে পারে-
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের বিপদ দেন কেন?

বিপদ বান্দার কর্মের প্রতিফল। যা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। তবে সব সময় এটি মানুষের আমলের কারণে হয় না। আল্লাহ তাআলা কখনো কখনো তাঁর প্রিয় বান্দার ওপর পরীক্ষা হিসাবেও চাপিয়ে দেন বিপদ। হাদিসে পাকে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো- মানুষের মধ্যে কারা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ে? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, নবি-রাসুলগণ। এরপরে আল্লাহ তাআলা যাকে যত বেশি ভালোবাসেন তাকে তত বেশি বিপদ দিয়ে পরীক্ষায় ফেলেন।

মনে রাখতে হবে
মানুষ ঈমানদার হোক কিংবা কাফের; নেককার হোক কিংবা পাপী; সবার জীবনেই বিপদ আসে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- যদিও আমরা বিপদ-আপদ অপছন্দ করি; তারপরও আমাদের জীবনে বিপদ আসে কেন? কিংবা আল্লাহ আমাদের পরীক্ষায় ফেলেন কেন?

মানুষের স্বাভাবিক এ প্রশ্নের উত্তর আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে তুলে ধরেছেন এভাবে-
اَحَسِبَ النَّاسُ اَنۡ یُّتۡرَکُوۡۤا اَنۡ یَّقُوۡلُوۡۤا اٰمَنَّا وَ هُمۡ لَا یُفۡتَنُوۡنَ - وَ لَقَدۡ فَتَنَّا الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ فَلَیَعۡلَمَنَّ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ صَدَقُوۡا وَ لَیَعۡلَمَنَّ الۡکٰذِبِیۡنَ
মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি। ফলে আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন, কারা সত্য বলে এবং অবশ্যই তিনি জেনে নেবেন, কারা মিথ্যাবাদী।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ২-৩)

এ আয়াত মুমিন মুসলমানের জন্য বিপদে ধৈর্যধারনের অনুপ্রেরণা। কেননা ইসলামের প্রথম যুগে ঈমানদার সাহাবাদেরকেও বিপদে ধৈর্যধারনের চরম পরীক্ষা দিতে হয়েছে। সে সময়ের চিত্র এমন ছিল-
পবিত্র নগরী মক্কায় কেউ ইসলাম গ্ৰহণ করলেই তার ওপর বিপদ আপদ ও জুলুম-নিপীড়নের পাহাড় ভেঙ্গে পড়তো। এ পরিস্থিতি যদিও দৃঢ় ঈমানের অধিকারী সাহাবাদের অবিচল নিষ্ঠার মধ্যে কোনো প্রকার দোদুল্যমানতা সৃষ্টি করেনি তবুও মানবিক প্রকৃতির তাগিদে অধিকাংশ সময় তাদের মধ্যেও চিত্তচাঞ্চল্য পেরেশানি সৃষ্টি হতো। এরকম পরিস্থিতে একবার হজরত খাব্বাব ইবনে আরত বলেন-
‘যে সময় মুশরিকদের কঠোর নির্যাতনে আমরা ভীষণ দুরবস্থার সম্মুখীন হয়ে পড়েছিলাম; সে সময় একদিন আমি দেখলাম নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাবাঘরের দেওয়ালের ছায়ায় বসে রয়েছেন। আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি আমাদের জন্য দোয়া করেন না?

একথা শুনে তাঁর চেহারা আবেগে-উত্তেজনায় রক্তিমবর্ণ ধারণ করলো এবং তিনি বললেন, ‘তোমাদের আগে যেসব মুমিনদল অতিবাহিত হয়েছে তারা এর চাইতেও বেশি নির্যাতিত হয়েছিলো। তাদের কাউকে মাটিতে গর্ত করে তার মধ্যে বসিয়ে দেওয়া হতো এবং তারপর তার মাথার ওপর করাত চালিয়ে দুটুকরো করে দেওয়া হতো। এটা তাদেরকে দ্বীন হতে টলাতে পারত না। লোহার চিরুনি দিয়ে শরীরের হাড়-গোশত ও শিরা-উপশিরা সব কিছু ছিন্নভিন্ন করে দিত। এটা তাদেরকে দ্বীন হতে সরাতে পারেনি। আল্লাহর কসম! আল্লাহর এ দ্বীনকে অবশ্যই পূর্ণতা দান করবেন। তখন একজন উষ্ট্রারোহী সানআ হতে হাজারামাউত পর্যন্ত সফর করবে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেও ভয় করবে না। অথবা তার মেষপালের জন্য নেকড়ে বাঘের ভয়ও করবে না। কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়ো করছ।’ (বুখারি, মুসনাদে আহমাদ)

অথচ আমাদের চারপাশে এমন অনেকে আছেন, যারা সামান্য বিপদে পড়লেই ‘হায় হায়’ করে কপাল চাপড়ে থাকে আর বলতে থাকে- আল্লাহ কি আমাকে ছাড়া আর কাউকে দেখল না!

এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বিপদ যত বড়; এর প্রতিদানও তত বড়। আর আল্লাহ পাক যখন কাউকে ভালোবাসেন তখন তাকে পরীক্ষা করেন। এ পরীক্ষায় যে খুশী থাকে, তার জন্য আল্লাহ পাকও খুশী হয়ে যান আর যে রাগান্বিত হয়, তার জন্য তিনিও রেগে যান।’ (তিরমিজি)

সুতরাং বিপদের সময় হতাশ না হয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রাখা ও ধৈর্য ধারণ করা ঈমানের একান্ত দাবি। এভাবে দৃঢ় মনোবল রাখতে হবে যে, ‘আধার কেটে গেলে যেমন আলো আসে আল্লাহ তাআলার ঘোষণা অনুযায়ী বিপদে ধৈর্যধারণ করলে তার প্রতিদানও তিনি দেবেন।’

আল্লাহ তাআলা মহামারি করোনা, বজ্রবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্পসহ যাবতীয় রোগ-ব্যাধিতে মৃত্যু ও অসুস্থতায় সবাইকে ধৈর্যধারণ করার মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফিক দিন। তার রহমতের চাদরে নিজেদের জড়িয়ে নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ সাংবাদিক সমিতি।

এমএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।