তাসবিহ শেষ হওয়ার আগে ইমাম সিজদা থেকে উঠে গেলে কী করবেন?
নামাজে ইমামের অনুসরণ করা মুক্তাদি মুসল্লিদের জন্য ওয়াজিব। প্রত্যেকটি কাজেই তাকে অনুসরণ করতে হবে। ইমাম যখন রুকু বা সিজদায় যান, তখন রুকু বা সিজদায় যেতে হবে, যখন রুকু-সিজদা শেষ করে বসেন বা দাঁড়ান তখন বসতে ও দাঁড়াতে হবে।
রুকু বা সিজদায় গিয়ে মুক্তাদি তিনবার বা একবার তাসবিহ পড়ার আগে যদি ইমাম রুকু-সিজদা শেষ করে বসে বা দাঁড়িয়ে যান, তাহলে তখনও মুক্তাদির কর্তব্য ইমামকে অনুসরণ করে রুকু ও সিজদা শেষ করে বসে বা দাঁড়িয়ে যাওয়া। আরও তাসবিহ পড়ার জন্য ইমামের অনুসরণ না করার সুযোগ নেই।
হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ইমাম নির্ধারণ করা হয় তার অনুসরণের জন্যই। তাই ইমাম যখন রুকু করেন তখন আপনারাও রুকু করুন এবং তিনি যখন রুকু থেকে মাথা ওঠান তখন আপনারাও মাথা ওঠাবেন। (সহিহ বুখারি: ৬৫৪)
ইমামের আগে রুকু-সিজদা থেকে ওঠা যাবে না
একইভাবে ইমামের আগে রুকু বা সিজদায় চলে যাওয়া অথবা ইমামের আগে রুকু বা সিজদা থেকে দাঁড়িয়ে যাওয়াও নিষিদ্ধ। ইমামের আগে সিজদা থেকে উঠে যাওয়ার ব্যাপারে সাহাবিদের সাবধান করে আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ইমামের আগে সিজদা থেকে যে ব্যাক্তি মাথা তোলে, সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ তার মাথার আকৃতি গাধার মাথার মত করে দিতে পারেন! (সহিহ মুসলিম: ৪২৭)
তাই নামাজে পরিপূর্ণরূপে ইমামের অনুসরণ করতে হবে। সিজদা থেকে ইমামের আগে মাথা ওঠানোর ব্যাপারে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

কেউ যদি ভুল করে সিজদা থেকে ইমামের আগে মাথা তুলে ফেলে, তাহলে ভুল বোঝার পর আবার সিজদায় চলে যাবে এবং ইমামের সাথে সিজদা থেকে উঠবে। ইমাম যদি আবার সিজদায় যাওয়ার আগেই উঠে যান অথবা কেউ যদি অজ্ঞতাবশত অর্থাৎ শরিয়তের এ নির্দেশনার ব্যাপারে না জানার কারণে আর সিজদায় না যায়, তাহলেও নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে।
কিন্তু কেউ যদি শরিয়তের বিধান জানার পরও ইচ্ছাকৃত ইমামের আগে মাথা তোলে এবং আর সিজদায় না যায়, তাহলে তার নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
রুকু-সিজদায় তিনবার তাসবিহ পড়া সুন্নত
সাধারণ অবস্থায় রুকু-সিজদায় কমপক্ষে তিন তিনবার তাসবিহ পড়া সুন্নত, পাঁচবার বা সাতবারও পড়া যায়। ইচ্ছা করে তিনবারের কম পড়া অনুচিত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আপনাদের কেউ যখন রুকু করেন তখন তিনবার ‘সুবাহানা রাবিবয়াল আযীম’ বলবেন এবং যখন সিজদা করেন তখন তিনবার ‘সুবহানা রাবিবয়াল আ’লা’ বলবেন। যখন এভাবে তিনবার করে তাসবিহ পড়বেন, তখন তার রুকু ও সিজদা পূর্ণ হবে। আর এটি হল তাসবিহ আদায়ের সর্বনিম্ন পরিমাণ। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা)
তবে তিনবার তাসবিহ পড়া যেহেতু ফরজ বা ওয়াজিব নয়, তাই তিনবার তাসবিহের কম পড়লেও নামাজ আদায় হয়ে যাবে। ইমাম বা একা নামাজ আদায়কারী যদি রুকু ও সিজদায় ভুল করে বা ইচ্ছাকৃত একবার বা দুবার তাসবিহ পড়লেও নামাজ বাতিল হবে না বা সাহু সিজদাও ওয়াজিব হবে না।
আর মুক্তাদি ইমামের অনুসরণ করে রুকু-সিজদায় গিয়ে ইমাম রুকু-সিজদায় থাকা অবস্থায় তিন, পাঁচ বা সাতবার তাসবিহ পড়তে পারেন। কিন্তু ইমাম উঠে গেলে তাকে অনুসরণ করতে হবে। ইমাম উঠে যাওয়ার পরও তাসবিহ পড়ার সুযোগ নেই যেমন আমরা ওপরে উল্লেখ করেছি।
ওএফএফ/এমএস