আখেরি চাহার সোম্বার তাৎপর্য কী?

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩০ পিএম, ২০ আগস্ট ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত

ইরান, ইরাক, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ কিছু মুসলিম দেশে ‘আখেরি চাহার সোম্বা’ বা সফর মাসের শেষ বুধবার বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন হিসেবে পালিত হয়। বাংলাদেশে এই দিনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিভাবে বন্ধ রাখার পাশাপাশি অফিস-আদালতে দিনটিকে ঐচ্ছিক ছুটির দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনেকে এই দিনে বিশেষ নামাজ বা অন্যান্য আমলও করে থাকেন।

আখেরি চাহার সোম্বার ফজিলতের কারণ হিসেবে যা বলা হয় বা বিশ্বাস করা হয় তা হলো, ১১ হিজরির শুরুতে হজরত মুহাম্মদ (সা) গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ক্রমেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তিনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে, নামাজের ইমামতি পর্যন্ত করতে পারছিলেন না। ২৮ সফর বুধবার তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। দিনটি ছিল সফর মাসের শেষ বুধবার। এই দিন কিছুটা সুস্থবোধ করায় তিনি গোসল করেন এবং শেষবারের মতো নামাজে ইমামতি করেন। মদিনাবাসী সুস্থতার খবর পেয়ে দলে দলে নবিজিকে (সা.) দেখতে আসেন। অনেক সাহাবি এই খুশিতে দান-সদকা করেন। নবিজি (সা.) এই দিন জীবনের শেষ গোসল করেন। তাই এই দিনে অজু-গোসল করে ইবাদত-বন্দেগি করা উচিত, নবিজির (সা.) প্রতি দরুদ পাঠ করা উচিত।

কিন্তু নির্ভরযোগ্য ইসলামি গবেষক ও পণ্ডিতগণ ‘আখেরি চাহার সোম্বা’র সাথে সম্পর্কিত এসব ধারণা অর্থাৎ এই দিন নবিজির (সা.) সুস্থ হওয়া, শেষ গোসল ও নামাজ আদায় করা, সাহাবায়ে কেরামের দান-সদকা করা এবং এই দিনটিকে বিশেষভাবে পালন করা, বিশেষ নামাজ আদায় করা ইত্যাদি নির্ভরযোগ্য বলে মনে করেন না। তাদের মতে, রাসুল (সা.) কখন অসুস্থ হয়েছিলেন, কতদিন অসুস্থ ছিলেন এবং কোন দিনে সুস্থ হয়েছিলেন—এসব বিষয়ে সহিহ হাদিসে কোনো নির্দিষ্ট দিন-তারিখ নেই। বরং বিভিন্ন বর্ণনায় ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া যায়।

ইবনে ইসহাক ও ইবনে হিশামসহ প্রখ্যাত ইতিহাসবিদরা রাসুলের (সা.) অসুস্থতার সময়কাল নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। কিন্তু কোথাও শেষ বুধবার সুস্থ হওয়ার কথা নেই। বরং সহিহ হাদিসে প্রমাণ আছে, বুধবারের পরও তিনি গোসল করেছিলেন এবং নামাজ আদায় করেছিলেন।

বিশেষত এমন কোনো দিনকে বিশেষ ইবাদত বা খুশির দিন হিসেবে নির্ধারণের প্রমাণ নেই। সাহাবিরা নবিজির (সা.) ওফাতের আগে বা পরে কখনও এই দিনটিকে খুশির দিন হিসেবে পালন করেছেন, এই দিনে বিশেষ কোনো ইবাদত বা নামাজ আদায় করেছেন—এ রকম কিছুও নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায় না।

তাই এই দিনকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করে পালন করা বা এই দিনে বিশেষ কোনো ইবাদত বা নামাজ আদায় করা ঠিক নয়।

ইসলামের উৎস হলো কোরআন ও রাসুলের সুন্নত অর্থাৎ তার কথা, কাজ ও সমর্থন। কোরআন ও রাসুলের সুন্নত ছাড়া অন্য কোনো সূত্রে আমলের নতুন কোনো দিবস বা ধরন উদ্ভাবন করে তাকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করলে তা হয় দ্বীনের মধ্যে নতুন উদ্ভাবন বা বিদআত। রাসুল (সা.) তার উম্মতকে দ্বীনের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত বিষয় বা বিদআত থেকে বেঁচে থাকতে বলেছেন। রাসুল (সা.) বলেন, সব নতুন উদ্ভাবিত বিষয় থেকে বেঁচে থাকুন, সব নতুন উদ্ভাবিত বিষয়ই বিদআত আর সব বিদআতই পথভ্রষ্টতা। (সুনানে তিরমিজি, সুনানে আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)

ওএফএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।