দাড়ি রাখার বিধান ও উপকারিতা কী?

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৪৬ পিএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

পুরুষের মুখমণ্ডলের দাড়ি মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন; যা তার ধর্মীয় পরিচয় বহন করে। কিন্তু দাড়ি রাখা ফরজ, ওয়াজিব নাকি সুন্নাত তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট, দাড়ি রাখার মাধ্যমে আল্লাহ ও তার প্রিয় রাসুলের সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। দাড়িই কেয়ামতের দিন অন্ধকারের সময় আলো হয়ে জ্বলতে থাকবে। ঈমান ও আমল ঠিক থাকলে দাড়ি রাখা ব্যক্তিদের হাসর হবে নবি-রাসুলগণের সঙ্গে।

আরবি ভাষায় দাড়িকে বলা হয় ‘লিহইয়া’ বা ‘লাহয়া’। যার আভিধানিক অর্থ থুতনিসহ মুখের দুই পাশের হাড়, যার ওপর দাঁতগুলো অবস্থিত। প্রাপ্তবয়সে ওই হাড়ের ওপর যে লোম বা কেশ গজায়, তাকেই হাড়ের নামকরণে লিহইয়া বলা হয়।

দাড়ি রাখা ইসলামের শিআর বা নিদর্শন। এটি সব নবির সুন্নাত। হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) গোঁফ খাটো এবং দাড়ি লম্বা করার নির্দেশ দিতেন। (সহিহ মুসলিম ১/১২৯, ২৫৯)

দাড়ি রাখা ফরজ, ওয়াজিব নাকি সুন্নত তা নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও তা বিশ্বনবিসহ সব নবি-রাসুলের সুন্নাত; তাতে কোনো সন্দেহ নেই। হাদিসে এসেছে- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ১০টি বিষয় সব নবি-রাসুলের সুন্নাত। তার মধ্যে গোঁফ ছোট করা এবং দাড়ি লম্বা করা অন্যতম।’ (মুসলিম)

আবার দাড়ি রাখা যে ওয়াজিব বা আবশ্যক; তা এড়িয়ে যাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। কারণ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন- ‘আল্লাহ ও তার রাসুল কোনো কাজের আদেশ করলে কোনো ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী সে বিষয়ে না বলার ক্ষমতা নেই, যে আল্লাহ ও তার রাসুলের আদেশ অমান্য করে; সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।’ (সুরা আহজাব: আয়াত ৩৬)

আল্লাহ তাআলা এ আয়াতের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহর (সা.) কথার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। এদিক থেকে অনেকেই দাড়ি রাখাকে ওয়াজিব বা আবশ্যক বলেছেন।

হজরত হাসান (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ১০টি স্বভাব এমন ছিল, যেগুলো অবলম্বন করে কওমে লুত ধ্বংস হয়ে গেছে। তার মধ্যে একটি দাড়ি কর্তন করা ও গোঁফ লম্বা করা। (দুররে মনসুর ৫/৬৪৪)।

নবি (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের দাড়ি যেভাবে এবং যেটুকু ছিল; সেটুকু রাখাই মূল বিষয়। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন চিন্তিত হতেন; তখন তিনি নিজ হাতে দাড়ি ধরে তা দেখতেন। (কানজুল উম্মাল ১/৭০১)।

হাদিস শরিফে আছে, হজরত আমর ইবনে শুয়াইব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজ দাড়ির নিচ ও আশপাশ থেকে মুষ্টি পরিমাণের বাইরের অংশ কাটছাঁট করতেন। (শরহু শিরআতিল ইসলাম-২৯৮)। এ হাদিস থেকে স্পষ্ট হয়, রাসুলুল্লাহর (সা.) দাড়ি মোবারক এক মুষ্টির বেশি ছিল এবং এক মুষ্টি পরিমাণ রেখে বাকিটা কর্তন করা যাবে।

বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফয়জুল বারিতে উল্লেখ আছে, এক মুষ্টির কমে দাড়ি কাটা সব ইমামের ঐকমত্যের ভিত্তিতে হারাম। (৪/৩৮০) এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর ইসলামিক স্কলাররা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, দাড়ি রাখা ওয়াজিব। এর সর্বনিম্ন পরিমাপ এক মুষ্টি। এক মুষ্টির পর দাড়ি কাটার অনুমতি আছে। কিন্তু এক মুষ্টির কমে দাড়ি কাটা অথবা মুণ্ডানো সম্পূর্ণ হারাম।

ইসলামে দাড়ি রাখার প্রতি এত জোর দেওয়ার কারণ ধর্মীয় হলেও এটি মুখমণ্ডলের জন্যও উপকারী। সে বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে দাড়ি নিয়ে গবেষণা চালানো হয়। এর ফল প্রকাশ হয় ‘জার্নাল অব হসপিটাল ইনফেকশনে’ ম্যাগাজিনে। গবেষণায় বলা হয়েছে, দাড়িওয়ালাদের চেয়ে দাড়ি কামানো পুরুষদের ত্বকেই মেথিসিলিন-রেসিস্ট্যান্ট স্ট্যাফ অরিয়াস বলে যে জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী; সেটি ৩ গুণ বেশি মাত্রায় পাওয়া গেছে।

যার কারণ হিসেবে গবেষকরা বলছেন, দাড়ি কামাতে গিয়ে মুখের চামড়ায় যে ঘঁষা লাগে, তা ব্যাকটেরিয়ার বাসা বাঁধার জন্য আদর্শ পরিবেশ। অন্যদিকে দাড়ি ব্যাক্টেরিয়ার এ সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে। লন্ডনের গবেষক ড. অ্যাডাম রবার্ট এক গবেষণায় দেখেছেন, দাড়িতে এমন কিছু ‘মাইক্রোব’ থাকে, যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দাড়ি রাখার মাধ্যমে প্রিয় নবির (সা.) নির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। দাড়ি রাখার উপকারিতা পাওয়া ও ক্ষতি থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।