মৌসুমের নতুন ফলের ব্যাপারে যে নির্দেশনা দিয়েছে কোরআন

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৫০ পিএম, ২৮ মে ২০২৪

একেক মৌসুমে আল্লাহ আমাদের একেক রকম ফলফলাদি দান করেন। আমাদের অঞ্চলে বিশেষত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে অনেক নতুন নতুন ফল বাজারে আসে। তাজা ও রসালো ফলের সুঘ্রাণে চারপাশ ভরে ওঠে।

এসব ফল আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত আমাদের ওপর। তাই মৌসুমের নতুন ফল পেলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত। আল্লাহ তাআলা কোরআনে তার এ নেয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন, পাশাপাশি আমাদের কিছু দিক-নির্দেশনাও দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,

وَهُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡشَاَ جَنّٰتٍ مَّعۡرُوۡشٰتٍ وَّ غَیۡرَ مَعۡرُوۡشٰتٍ وَّ النَّخۡلَ وَ الزَّرۡعَ مُخۡتَلِفًا اُکُلُهٗ وَ الزَّیۡتُوۡنَ وَ الرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَّ غَیۡرَ مُتَشَابِهٍ کُلُوۡا مِنۡ ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثۡمَرَ وَ اٰتُوۡا حَقَّهٗ یَوۡمَ حَصَادِهٖ وَ لَا تُسۡرِفُوۡا اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ

আর তিনিই (আল্লাহ) সৃষ্টি করেছেন লতাগুল্ম বিশিষ্ট আর লতা-বিশিষ্ট নয় এমন উদ্যানরাজি, খেজুর গাছ ও বিভিন্ন স্বাদের খাদ্যশস্য, একই ধরনের ও আলাদা ধরনের যায়তুন ও ডালিম। যখন ফল ধরে তখন ফল খাও, আর ফসল তোলার দিন হক আদায় কর, অপচয় করো না, নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। (সুরা আনআম: ১৪১)

এ আয়াতে আল্লাহ তার এ নেয়ামতের কথা উল্লেখ করে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন এসব ফল খাওয়ার পাশাপাশি এগুলোর হক আদায় করতে। অর্থাৎ যারা ফল চাষ করে, তাদের দায়িত্ব ফল হাতে এলে ওই ফলের জাকাত ও উশর আদায় করা যা ওয়াজিব। এছাড়া উৎপন্ন ফল থেকে যথাসাধ্য অসহায় ও দরিদ্রদের দান করা।

এ দায়িত্বটি শহুরে মানুষজনের ওপরও বর্তায় যারা সাধারণত ফল উৎপাদনে জড়িত থাকে না, বাজার থেকে কিনে খায়। মৌসুমের নতুন ফল বাজারে এলে নিজে কিনে খাওয়ার পাশাপাশি দরিদ্র প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও কাজের লোকদেরও ওই ফল কিনে দেওয়া উচিত, খাওয়ানো উচিত। অনেকেরই এ সব ফল নিজেরা কিনে খাওয়ার সামর্থ্য থাকে না। মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হলো নিজেদের সব রকম নেয়ামতে দরিদ্রদের শরিক করা। সুরা মাআরিজে মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَالَّذِينَ فِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُومٌ لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ
আর যাদের ধন-সম্পদে রয়েছে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতদের নির্ধারিত হক। (সুরা মাআরিজ: ২৪, ২৫)

এরপর আল্লাহ আমাদের নিষেধ করছেন অপচয় বা সীমালঙ্ঘন করতে। আল্লাহ সীমালঙ্ঘন পছন্দ করেন না। ইসলামে সব ব্যাপারে মধ্যপন্থা পছন্দনীয়। উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ ফল খেতে বলেছেন। কিন্তু কেউ যদি অতিরিক্ত আহার করে, তা অপচয় ও সীমালঙ্ঘন। অতি ভোজনে স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেউ যদি দানের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে, নিজের ও পরিবারের জন্য না রেখে সব ফলফলাদি দান করে দেয়, তাও সীমালঙ্ঘন। সব ক্ষেত্রে পরিমিতিবোধ বজায় রাখতে হবে। কোরআনের আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন,

وَ لَا تَجۡعَلۡ یَدَکَ مَغۡلُوۡلَۃً اِلٰی عُنُقِکَ وَ لَا تَبۡسُطۡهَا کُلَّ الۡبَسۡطِ فَتَقۡعُدَ مَلُوۡمًا مَّحۡسُوۡرًا

তুমি বদ্ধমুষ্টি (কৃপণ) হয়োনা এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়োনা; তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হবে। (সুরা ইসরা: ২৯)

অনেক সময় প্রাচুর্যের কারণে আমরা ফলফলাদিসহ অন্যান্য খাবার নষ্টও করে থাকি। খাবো বলে জমিয়ে, রাখি খেতে পারি না। কাউকে দেই না, দান করি না। দীর্ঘদিন পড়ে থেকে খাবার পঁচে নষ্ট হয়। এটাও অপচয় ও সীমালঙ্ঘন। কোরআনে অপচয়কারীদের শয়তানের ভাই বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,

وَلا تُبَذِّرْ تَبْذِيراً إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُوراً

কোনভাবেই অপব্যয় করো না; নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ। (সুরা ইসরা: ২৬, ২৭)

ওএফএফ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।