হজের সফরে যে জীবিকা উপার্জন ও কাজ বৈধ


প্রকাশিত: ০৭:১৯ এএম, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬

ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি হজরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘জাহেলিয়াতের যুগে আরবে তিনটি বাজার ছিল। ওকাজ, মুজান্নাহ এবং জুলমাজাজ। ইসলামের আবির্ভাবের পর সাহাবায়ে কেরাম হজের সময় এসব বাজারে ব্যবসা করা গোনাহের কাজ মনে করতেন। অথচ শুধু হজ করাই যাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তাদের জন্য এ সফরে কোনো প্রকার ব্যবসা-বাণিজ্য করা অবৈধ নয়।’

প্রাচীন আরবে জাহেলি চিন্তাধারার অন্যতম একটি ছিল এটি যে হজের সফরে জীবিকা উপার্জনকে তারা খারাপ মনে করতো। পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট ভাষায় এ ভ্রান্তিমূলক ধারণার অপসারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ কেউ ইচ্ছা করলে হজ পালনের সঙ্গে সঙ্গে হালাল জীবিকা উপার্জনে ব্যবসা-বাণিজ্যও করতে পারবে। তবে তা জায়েজ বা বৈধতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আল্লাহ তাআলা কুরআনে এ সম্পর্কে বলেন-

Quran

আয়াতের অনুবাদ

Quran

আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণ
সুরা বাকারার ১৯৮ আয়াতে আল্লাহ তাআলা হজে গমনকারীদের মধ্যে যারা জীবিকা উপার্জন উপলক্ষ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চায়; তা তাদের জন্য বৈধ ঘোষণা করেছেন। অথচ প্রাক ইসলামি যুগে আরবের লোকেরা ইহাকে অবৈধ মনে করতো।

হজরত আবু উমামা তাইমি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করেন, আমরা মুসাফিরদের আরোহনের জন্যেই ভাড়ায় সাওয়ারি দিয়ে থাকি; লোকেরা বলে আমাদের হজ হবে না। হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞাসা করলেন তোমরা কি অন্যদের মতো ইহরাম বাঁধ না? তোমরা কি তাওয়াফ কর না? তোমরা কি জামরাতে প্রস্তর নিক্ষেপ কর না?

আমি বললাম, আমরা এসব আরকান আদায় করি। তখন হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তাহলে তোমাদের হজ হয়েছে। অতঃপর হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক ব্যক্তি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহান দরবারে হাজির হয়ে এ প্রশ্নই করেছিল; যা তুমি (আমাকে) করেছ। তখন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কোনো জবাব প্রদান করেনি।

এমন সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম এ আয়াত নিয়ে হাজির হলেন।

অতঃপর আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মাশআরে হারামের কাছে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেখানে আল্লাহ তাআলাকে গভীর ভালোবাসায় একনিষ্ঠতার সঙ্গে স্মরণ করার নির্দেশ রয়েছে। আর মাশআরে হারাম হলো মুযদালিফার দুটি পাহাড়ের মর্ধবর্তী স্থান। যেখানে রাত যাপন করতে হয় এবং এখানে আল্লাহ তাআলাকে বিশেষভাবে স্মরণ করতে হয়।

সুরা বাকারার ১৯৯নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা কুরাইশ নেতাদের একটি ভ্রান্ত ধারণার অপসারণ করেছেন। আর তা হলো- কুরাইশ গোত্রের লোকেরা আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হতো না; বরং তারা সরাসরি মুযদালিফায় চলে যেতো এবং সেখানে অবস্থান করে ফিরে আসতো। তারা নিজেদেরকে অভিজাত বংশের লোক এবং পবিত্র বাইতুল্লাহর খিদমতে নিয়োজিত লোক বলে নিজেদেরকে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী মনে করতো। তাই সাধারণ মানুষের মতো তারা আরাফাতে হাজির হতো না।

আল্লাহ তাআলা তাদের এ অন্যায় পথা বাতিল ঘোষণা করে আলোচ্য আয়াত নাজিল করে বলেন, ‘মানুষ যেভাবে আরাফাতের ময়দান থেকে প্রত্যাবর্তন করে তোমরাও তেমনি সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করো। গোনাহ মাফে আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনিই ক্ষমাশীল এবং দয়ালু।
 
পড়ুন- সুরা বাকারার ১৯৭ নং আয়াত-

পরিষেশে...
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজের সময়ের বৈধ কাজসমূহকে অবৈধ মনে করা থেকে বিরত রাখুন। হজের প্রতিটি রুকন যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। জাহেলি যুগের সব ভ্রান্ত ধারণা ও আক্বিদা বিশ্বাস থেকে হিফাজত করুন।  আমিন।

এমএমএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।