আমল অনুযায়ীই কি ফল ভোগ করবে মানুষ?

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০৫ পিএম, ০৫ আগস্ট ২০২১

অন্যায়-অপরাধমুক্ত জীবনের অধিকারী ব্যক্তিদের জন্য জান্নাতের ঘোষণা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। যারা সব সময় নেক আমল করে। ভালো কাজে সহায়তা করে। নিজেরা সৎকর্মশীল আবার অন্যকে সৎকর্ম করতে সহযোগিতা ও উৎসাহিত করে। এসব ভালো কাজের বিনিময়ে রয়েছে চিরস্থায়ী জান্নাত। তবে এসব কাজের যার যার আমল অনযায়ী ফল ভোগ কবে মানুষ। কুরআনুল কারিমের অনেক জায়গা রয়েছে এসব বর্ণনা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
১. إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ جَنَّاتُ النَّعِيم - خَالِدِينَ فِيهَا وَعْدَ اللَّهِ حَقًّا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য আছে নেয়ামতে ভরা জান্নাত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা লোকমান : আয়াত ৮-৯)

২. الْيَوْمَ تُجْزَى كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ لَا ظُلْمَ الْيَوْمَ إِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
‘আজ প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের প্রতিফল দেওয়া হবে, আজ কারও প্রতি জুলুম করা হবে না। আল্লাহ হিসাব গ্রহণে তৎপর।’ (সুরা আল-মুমিন : আয়াত ১৭)

৩. وَلِكُلٍّ دَرَجَاتٌ مِّمَّا عَمِلُوا وَلِيُوَفِّيَهُمْ أَعْمَالَهُمْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
‘প্রত্যেকের মর্যাদা তার কর্মানুযায়ী, এটা এ জন্য যে আল্লাহ প্রত্যেকের কৃতকর্মের পূর্ণ প্রতিফল দেবেন এবং তাদের প্রতি অবিচার করা হবে না।’ (সুরা আল আহ্কাফ : আয়াত ১৯)

৪. فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَه - وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ
- ‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।’ (সুরা আজ-জিলজাল : আয়াত ৭-৮)

এ কারণেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে অপকর্ম ও অন্যায় প্রতিরোধের শিক্ষা দিয়েছেন এভাবে-
‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কাউকে অন্যায় কাজ করতে দেখে, তাহলে সে যেন তার হাত (শক্তি) দ্বারা তা প্রতিহত করে; যদি সে এতে অক্ষম হয়, তবে মুখ দ্বারা নিষেধ করবে, যদি সে এতেও অপারগ হয়, তবে সে অন্তর দ্বারা ঘৃণা পোষণ করবে অথ্যাৎ (নিরবে অন্যায় বন্ধের প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়)।’ (মুসলিম)

মনে রাখতে হবে
আল্লাহ তাআলা মানুষের গোপন-দৃশ্যমান সব কাজই দেখেন। আর নিজেদের প্রতিটি কাজেরই হিসাব দিতে হবে। কেননা মানুষের সব কর্মকাণ্ডই লিপিবদ্ধ হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘যা কিছু আকাশসমূহে রয়েছে এবং যা কিছু জমিনে আছে, সব আল্লাহরই। যদি তোমরা মনের কথা প্রকাশ কর কিংবা গোপন কর, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নেবেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেবেন। আল্লাহ সর্ব শক্তিমান।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৮৪)

ভালো ও মন্দ কাজের হিসাব ও প্রাপ্তি
ভালো কিংবা মন্দ হোক প্রত্যেকটি কাজের ব্যাপারেই প্রত্যেককে সুস্পষ্ট হিসাব দিতে হবে। আর এর জন্য পুরস্কার, শাস্তি বা ক্ষমা আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী পেতেই হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন-
‘যে ভালো কাজ করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই করে, আর যে অসৎ কাজ করে, তার প্রতিফলও সে-ই ভোগ করবে। আপনার পালনকর্তা বান্দাদের প্রতি মোটেই জুলুম করেন না।’ (সুরা হা-মিম সাজদা : আয়াত ৪৬)

সুতরাং মানুষের করণীয়
নেক আমলের মাধ্যমে আখেরাতে পাথেয় অর্জনকরা। যেভাবে হাদিসে পাকে বর্ণিত হয়েছে-
হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘দুনিয়া মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে (পিঠ দেখাচ্ছেঢ়) আর আখেরাত সামনে আসছে আর এদের প্রত্যেকেরই সন্তানাদি রয়েছে। তবে তোমরা আখেরাতের সন্তান হও, দুনিয়ার সন্তান হইও না। কেননা এখন আমলের সময়, এখানে (দুনিয়ায়) কোনো হিসাব নেই, আর আগামীকল (আখেরাতে) হিসাব-নিকাশ হবে। সেখানে আমল করার কোনো সুযোগ নেই।’ (বুখারি)

এ চিন্তা থাকা জরুরি-
এমনটি চিন্তা করা ভুল যে, দুনিয়া হচ্ছে আনন্দ-ফূর্তির জায়গা; যখন যা ইচ্ছা করবো, আমাকে কে ধরবে? বরং অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, এ দুনিয়া এক পরীক্ষা কেন্দ্র। আমরা সবাই পরীক্ষা দিচ্ছি, যে ভালো পরীক্ষা দেবে, সে ভালো ফলাফল লাভ করবে; এটাই স্বাভাবিক। কেননা একদিন সবাই মহান প্রভুর সামনে দাঁড়াতে হবে। সে কথা কুরআনে এভাবে তুলে ধরা হয়েছে-
‘আর তারা সবাই আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে। তখন দুর্বল লোকেরা অহংকারীদেরকে বলবে, নিশ্চয় আমরা তোমাদেরই অনুসারী ছিলাম। অতএব, তোমরা আমদের আজাবের কিছুটাও কি দূর করতে পার? তারা বলবে, আল্লাহ যদি আমাদের হেদায়েত দিতেন, তাহলে আমরা অবশ্যই তোমাদের হেদায়েত দিতাম। আমাদের জন্য এখন বিলাপ করা বা ধৈর্য ধারণ করা উভয়ই সমান। রক্ষা পাওয়ার কোনো পথই আমাদের নেই।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ২১)

হজরত সাফওয়ান ইবনে মুহরাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলো, কেয়ামতের দিন আল্লাহ ও ঈমানদার বান্দার মধ্যকার গোপন আলোচনা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আপনি কীভাবে বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে এক ব্যক্তি তার রবের কাছাকাছি হবে, এমন কি রব তার কুদরতি হাত ওই বান্দার ওপর রেখে দু’বার বলবেন, তুমি (দুনিয়ায়) অমুক অমুক কাজ করেছিলে। সে বলবে, জি হ্যাঁ। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি কি এমন কাজ করেছিলে? সে বলবে, জি হ্যাঁ। এভাবে তার কাছ থেকে এর স্বীকৃতি আদায় করা হবে, তারপর বলবেন, আমি দুনিয়ায় তোমার গোনাহ গোপন করে রেখেছি। আজ আমি তা মাফ করে দিচ্ছি।’ (বুখারি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, এমনভাবে জীবন অতিবাহিত করা যেন কোনোভাবে অন্যায় কাজ না হয়। যার যার হাত ও মুখ থেকে যেন অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। নিজের মিথ্যাচারে যেন সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। কেননা প্রত্যেকের কৃতকর্মের জন্য সবাকেই আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি নেক কাজ করার তাওফিক দান করুন। পরকালের কঠিন দিনে ডান হাতে আমল দিয়ে জান্নাতের মেহমান হওয়ার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক জীবন গঠন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।