ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন তারা


প্রকাশিত: ০৯:৪৩ এএম, ১২ জুন ২০১৭
ছবি-মাহাবুব আলম

চার লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ পোশাকের পাইকারি মার্কেট কেরানীগঞ্জে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন আহম্মেদ হোসেন। শুরুতে পায়জামা-পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, শার্ট ও ফতুয়া সেলাই এবং বোতাম লাগানোর জন্য পাঁচটি মেশিন নিয়ে ব্যবসায় নামেন তিনি।

ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে আহম্মেদ হোসেনের ব্যবসার পরিসর। একটি-দু’টি করে তার মেশিনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭টিতে। চার লাখ টাকার মূলধন বেড়ে ২৪ লাখ টাকায় পৌঁছায়। পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যবসার পরিসর প্রায় চার গুণ এবং মূলধনের পরিমাণ ছয় গুণ বাড়ান এই ব্যবসায়ী।

এই হিসাবে নিজেকে একজন সফল ব্যবসায়ী ভাবতে পারেন আহম্মেদ হোসেন। কিন্তু কেরানীগঞ্জের বর্তমান ব্যবসার পরিস্থিতিতে তিনি নিজেকে ‘ব্যর্থ ব্যবসায়ী’ হিসাবে মনে করছেন। ধীরে ধীরে যে ব্যবসা তিনি বড় করেছেন, এখন সেই ব্যবসার পরিসর তাকে ছোট করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে আহম্মেদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, কেরানীগঞ্জের ছোট পরিসরে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করি। প্রথমে পাঁচটি মেশিন নিয়ে কাজ শুরু করলেও পরে তা দাঁড়ায় ১৭টিতে। কর্মীদের দিয়ে পায়জামা-পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, শার্ট ও ফতুয়া সেলাই এবং এগুলোর বোতাম লাগানোর কাজ করাই।

তিনি বলেন, চার লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করে এখন ২৪ লাখে দাঁড়িয়েছে। প্রথমে খুব ভালো ব্যবসা হতো। কিন্তু গত দুই বছর ধরে ব্যবসা খারাপ। কাজ কমে গেছে। কাজ না থাকায় মেশিন অলস পড়ে থাকে। কিন্তু মেশিন ফেলে রাখা যায় না। ফেলে রাখলে তা নষ্ট হয়ে যায়। তাই ১৭টির মধ্যে সাতটি বিক্রি করে দিয়েছি।

আহম্মেদ হোসেন বলেন, তার কারখানায় নারী-পুরুষসহ ১১ জন কারিগর কাজ করেন। কর্মীদের বেতন ও কারখানার ভাড়া সব মিলিয়ে প্রতি মাসে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। এখন এমন হচ্ছে, মাসে লাখ টাকারও কাজ পাই না। কারখানা ভাড়া, কর্মীদের খরচ মিটাব কীভাবে?

ব্যবসা মন্দার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূলত ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের পণ্য সরবরাহ করি। এর মধ্যে বেশিরভাগই ফুটপাতে ব্যবসা করেন। ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় ফুটপাত তুলে দেয়ায় হকাররা ব্যবসা করতে পারছেন না। ফলে ব্যবসা অর্ধেকে নেমে এসেছে। কর্মীদের বেতন দিয়ে কারখানা টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, যাদের পুঁজি বেশি তারা বড় কাজ করেন। মন্দার বাজারেও টিকে আছেন। আমাদের পুঁজি কম, দুই বছর ব্যবসা মন্দা হলে কীভাবে টিকে থাকব? তাই এ ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে। আমার মতো অনেক ছোট ব্যবসায়ী ইতোমধ্যে ঝরে গেছেন। গ্রামের জমি বেচা টাকা আর ব্যাংক লোন নিয়ে ব্যবসা করছি। আমাদের সহযোগিতা করার মতো কেউ নেই। এভাবে ব্যবসা চলতে থাকলে ফতুর হয়ে যাব।

businesss

কেরানীগঞ্জের আরেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ‘টপ কালেকশন’র মো. আনোয়ার হোসেন। এক সময় কেরানীগঞ্জে অন্যের দোকানে বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় করে ২০০৮ সালে পাঁচ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে যৌথভাবে ছোট একটা দোকান ভাড়া নিয়ে শুরু করেন ব্যবসা।

২০১০ সালে একা পথ চলা শুরু করেন আনোয়ার হোসেন। সে সময় তার মূলধন ছিল ছয় লাখ টাকার মতো। বর্তমানে গুদারাঘাট সংলগ্ন মার্কেটে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার স্বল্প মূলধন বেড়ে অনেকটা মাঝারি আকার ধারণ করেছে। পুঁজি দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখ টাকার ওপরে। দোকানে কর্মচারী রেখেছেন তিনজন।

তিনি বলেন, আমি যখন ব্যবসা শুরু করি তখন কেরানীগঞ্জের ব্যবসা রমরমা। কোনো রকমে একটি দোকান দিয়ে বসতে পারলেই বিক্রির ধুম পড়ে যেত। দেশের এমন কোনো প্রান্ত নেই যেখান থেকে ব্যবসায়ীরা মাল কিনতে কেরানীগঞ্জে আসতেন না। এখনও আসেন। তবে আগের সেই অবস্থা এখন আর নেই। ব্যবসায়ীরা এখন কেরানীগঞ্জের পাশাপাশি অন্যান্য মার্কেট থেকেও মাল কেনেন।

আনোয়ার বলেন, আগে জেলা মার্কেটে দোকান ছিল। মাস ছয়েক হয়েছে সেখান থেকে শিফট করে এখানে এসেছি। ওই জায়গার ভাড়া ছিল অনেক বেশি। ব্যবসার পরিস্থিতি ভালো না, তাই খরচ কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। ওই স্থানের তুলনায় এখানে ভাড়া প্রায় অর্ধেক। কিন্তু বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারব কিনা জানি না?

কেরানীগঞ্জের ব্যবসায় হঠাৎ মন্দাভাব দেখা দিল কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জের সব পণ্য স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হয়। নামিদামি ব্র্যান্ডের স্টিকার লাগিয়ে বিক্রি করা হয়। তবে দাম নেয়া হয় অনেক কম। মূলত কেরানীগঞ্জের পোশাকের ক্রেতা নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের। ঢাকার ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা যেসব পোশাক বিক্রি করেন তার বেশিরভাগই কেরানীগঞ্জের। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে মানুষের খরচ বহুগুণ বেড়ে গেছে। আবার ফুটপাতেও হকাররা আগের মতো বসতে পারছেন না।

এছাড়া কেরানীগঞ্জে প্রতিযোগী ব্যবসায়ীর সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। এসব কারণে মূলত ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। 

এসআই/এমএএস/এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।