হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের টার্গেট বুড়িগঙ্গার তীরে


প্রকাশিত: ১০:১৫ এএম, ১২ জুন ২০১৭
ছবি : মাহবুব আলম

ঢাকার অদূরে বুড়িগঙ্গার তীরঘেঁষা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আগানগর এলাকায় গেলেই চোখে পড়বে হুলুস্থুল অবস্থা। এটি যেন পোশাক মার্কেট-কারখানার এক বিশাল বাণিজ্য নগরী।

এলাকার প্রতিটি মার্কেট, দোকান কিংবা কারখানায় এখন শুধু রঙ-বেরঙের পোশাক। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পাইকারি ক্রেতাদের ভিড়ে জমে উঠেছে কেরানীগঞ্জের এ পোশাক নগরী। মার্কেটের ব্যবসায়ীদের আশা, এবার তারা হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য করবেন।

market

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা দেশের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশই পূরণ করছে কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টস কারখানাগুলোর পোশাক। প্রতিটি ঈদ-পূজাসহ যেকোনো উৎসবে এখানকার কারখানায় তৈরি হয় নিত্য-নতুন ডিজাইনের পোশাক।

এবার ঈদের জন্য থ্রি-পিস, ফ্রক, মেয়েদের বাহারি পোশাক, ছোটদের রঙ-বেরঙের পাজামা-পাঞ্জাবি, বড়দের জন্য পাঞ্জাবি, জিন্সপ্যান্টসহ বিভিন্ন পোশাকের সমাহার দেখা গেছে কেরানীগঞ্জের মার্কেটগুলোতে।

market

গতকাল রোববার কেরানীগঞ্জের আগানগরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বাহারি পোশাকের পাইকারি দোকানগুলো সাজানো হয়েছে নানা ডিজাইনের প্যান্ট-শার্ট, পাঞ্জাবি, গেঞ্জি ও থ্রি-পিস দিয়ে।

দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসছেন পাইকারি ক্রেতারা। পছন্দসই পোশাক কিনে কার্টন ও পিকআপভ্যানে চলে যাচ্ছে গন্তব্যে। পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দিন যতই গড়াচ্ছে পাইকারি পোশাক ক্রেতাদের ভিড় ততই যেন বাড়ছে।

market

কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল আজিজ শেখ জাগো নিউজকে বলেন, আশুলিয়া-গাজীপুরের গার্মেন্টস কারখানাগুলোর পোশাক বিদেশে রফতানি হয়। কিন্তু কেরানীগঞ্জের কারখানাগুলোর পোশাক দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে।

তিনি জানান, এখানকার পাইকারি দোকানগুলোতে ২৫০ থেকে ৭০০ টাকায় জিন্সপ্যান্ট বিক্রি হয়। সেগুলোই খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকায়। এসব প্যান্টের ডিজাইন ও কাপড়ের মান আন্তর্জাতিক মানের। বিদেশ থেকে কাপড় এনেও এখানে পোশাক তৈরি হয়।

market

এবার কেরানীগঞ্জে চীন ও ভারতীয় ডিজাইনের পোশাক তৈরি হয়েছে বেশি। এ ধরনের পোশাকে বেশি মাত্রায় ডিজাইন থাকে। এমন ডিজাইনের কারণে উৎপাদন কমার পাশাপাশি পোশাকের দাম বেড়ে যায়। এজন্য এবার পোশাকের উৎপাদন কম, কিন্তু চাহিদা বেশি।

তিনি আরও জানান, প্রতি বছর এখানে হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। ঈদকে কেন্দ্র করে এ বাণিজ্য আরও জমে ওঠে। এবারও জমে উঠেছে। তবে বেচাকেনা কিছুটা কম।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার ঈদে কেরানীগঞ্জ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার তৈরি পোশাক বিক্রি হবে। যার সবই স্থানীয় কারখানাগুলোতে তৈরি। পোশাকের মানও কোনো অংশে কম নয়।

market

তারা বলেন, টানা ২০-২৫ বছর ধরে এখানে তৈরি হয়েছে এ পোশাক শিল্প। বর্তমানে এখানে কারখানার সংখ্যা প্রায় আট হাজার। শোরুম রয়েছে দুই হাজারের মতো। কারখানাগুলোতে কাজ করেন ৫০ হাজার নারীসহ অন্তত দুই লাখ শ্রমিক। স্যান্ডো গেঞ্জি ছাড়া ছেলে-মেয়েদের বাকি সব ধরনের পোশাকই এখানে তৈরি হয়।

কেরানীগঞ্জের তৈরি জিন্সপ্যান্টের রয়েছে বিশেষ চাহিদা। একই সঙ্গে শার্ট ও পাঞ্জাবির রয়েছে ব্যাপক সুনাম।

মাগুরা জেলার বেবি প্লাজার ‘লাকি ফ্যাশনস’র মালিক ইলিয়াস হোসেন এসেছেন পোশাক কিনতে। তিনি জানান, দোকানে বিক্রির জন্য কেরানীগঞ্জ থেকেই নিয়মিত পোশাক কেনেন। এখানে বিদেশ থেকে আমদানি করা পোশাকও পাওয়া যায়। তাই পাইকারি মার্কেট হিসেবে কেরানীগঞ্জ অদ্বিতীয়।

market

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনে ভালো। যে কারণে এবার আগেভাগেই ক্রেতারা আসতে শুরু করেছেন।

তিনি জানান, কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টস কারখানা এলাকায় সরকারি ব্যাংক ছাড়াও বেসরকারি অন্তত ২৫টি ব্যাংকের শাখা রয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীদের টাকা সঙ্গে আনার প্রয়োজন হয় না। অনলাইন ব্যাংকিংয়ের কারণে এখানে এসেই টাকা তুলে পোশাক কিনতে পারেন তারা। তবে টিটি করেও টাকা আনছেন অনেকে।

এমনকি জেলা-উপজেলা পর্যায়ের দোকানিরাও নিয়মিত এখান পোশাক কিনতে আসেন।

এমএ/এসআর/এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।