ভাড়াই পরিশোধ হচ্ছে না কেরানীগঞ্জ ব্যবসায়ীদের
রাজধানীর কেরানীগঞ্জের পোশাক ব্যবসায় এবার মন্দাভাব যাচ্ছে। ঈদ বাজারের ভরা মৌসুমেও ক্রেতার অভাবে অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা।
ক্রেতা না থাকায় সার্বিক খরচ মিটিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এমনকী কোনো কোনো ব্যবসায়ী নিয়মিত দোকান ভাড়াও পরিশোধ করতে পারছেন না। ফলে অনেকেই গুটিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
কেরানীগঞ্জের বস্ত্র ব্যবসায়ী খোকন শরিফ। গত সাত বছরের বেশি সময় ধরে এখানে তিনি পোশাক তৈরির ব্যবসায় জড়িত। সুবর্ণ ফ্যাশনস’র এই মালিক জাগো নিউজকে বলেন, ব্যবসায় চরম মন্দাভাব বিরাজ করছে। চার মাস ধরে দোকান ভাড়ার টাকা পরিশোধ করতে পারছি না। মালিক প্রায় সময় ভাড়ার টাকার জন্য চাপ দেন। অনেক সময় দোকান ছেড়ে দিতেও বলেন।
তিনি বলেন, সাত বছরের বেশি সময় ধরে কেরানীগঞ্জে ব্যবসা করছি। এমন খারাপ অবস্থা কখনও হয়নি। গত বছর ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হয়েছে। এ বছর গড়ে বিক্রি হচ্ছে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা। কোনো কোনো দিন বিসমিল্লাহও হয় না। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে ব্যবসা টিকিয়ে রাখব বুঝতে পারছি না।

ব্যবসায় এমন মন্দাভাবের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়েছে। প্রতিনিয়তই খরচ বাড়ছে। কিন্তু মানুষের আয় সেভাবে বাড়ছে না। আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে উৎসবের পোশাক বাজারে। ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে।
শুধু খোকন শরিফের ব্যবসার ক্ষেত্রে নয়, কেরানীগঞ্জের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশেই এমন মন্দাভাব বিরাজ করছে। গত রোববার (১১ জুন) কেরানীগঞ্জ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এম আর গার্মেন্টস’র এক বিক্রয়কর্মী বলেন, রোজার ঈদে কেরানীগঞ্জের ব্যবসা মূলত রমরমা হয়ে ওঠে শবে বরাতের পর। প্রথম রোজা থেকে ১০ রোজা পর্যন্ত সব থেকে বেশি বিক্রি হয়। পরে বিক্রি কিছুটা কমলেও ঈদের আগের দিন পর্যন্ত মার্কেট জমজমাট থাকে। তবে এবার বিক্রি খুবই কম। গত বছরের তুলনায় বেচাবিক্রি অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। গতবার প্রতিদিন গড়ে এক লাখ টাকা বিক্রি হলেও এবার ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে না।
‘ব্লু ড্রিম’র মো. আকাশ বলেন, কেরানীগঞ্জে ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচ হাজারের বেশি ব্যবসায়ী আছেন। প্রায় সবারই ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দেখেন, সব দোকানই ক্রেতাশূন্য। ক্রেতা না থাকলে মাল বিক্রি করব কার কাছে। আর মাল বিক্রি করতে না পারলে ব্যবসা টিকে থাকবে কীভাবে?

তিনি বলেন, এমন কোনো পোশাক নেই যা কেরানীগঞ্জে পাওয়া যায় না। নামিদামি ব্র্যান্ডের পোশাক থেকে গার্মেন্টসের সাধারণ পোশাকও পাওয়া যায় এখানে। দেশের প্রত্যেক জেলা ও থানা শহরের ব্যবসায়ীরা কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাল সংগ্রহ করেন। অন্যান্য মার্কেটের তুলনায় এখানে দাম তুলনামূলক কম। মাত্র ৩০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে নামিদামি ব্র্যান্ডের শার্ট-প্যান্ট পাওয়া যাচ্ছে।
মো. আশরাফুল আলম নামের অপর এক ব্যবসায়ী জাগো নিউজকে বলেন, আগে কেরানীগঞ্জে আমার ২০টি মেশিন ছিল। রোজা ও কোরবানি ঈদ আসার দুই মাস আগ থেকেই কর্মীরা রাত-দিন কাজ করত। কিন্তু গত দুই বছর ধরে আর সে অবস্থা নেই। যে কারণে ব্যবসার পরিসরও ছোট হয়ে এসেছে। এখন মাত্র নয়টি মেশিন চলে। জানি না, এ মেশিনগুলো ভবিষ্যতে চালু রাখতে পারব কিনা?
এমএএস/এসআই/আরএস/এমএআর/আরআইপি