শুধু টেকনিক, স্কিল, মানসিকতায় সমস্যাই নয়, অভিজ্ঞতাও কম ব্যাটারদের
ভক্তরা চরম হতাশ। প্রিয় দল খুব খারাপ খেলছে। আফগানিস্তানের সাথে শেষ দুই ওয়ানডে দেখে মনে হয়েছে সাইফ হাসান ছাড়া বাকিরা ব্যাটিং ভুলে গেছেন। কারণ, ওই দুই ম্যাচে সাইফই একমাত্র ব্যাটার যিনি দুই অংকে পা রেখেছেন। বাকিদের রান ছিল টেলিফোন ডিজিটের মত ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ ও ০ ।
অনেকেই টাইগার ব্যাটারদের স্কিল, টেকনিকে বড় ধরনের ত্রুটি খোঁজার চেষ্টা করছেন। আবার বিশেষজ্ঞদের মত টি-টোয়েন্টি বেশি খেলে খেলে মানসিকতাটাই টি-টোয়েন্টি কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। তাই ওয়ানডে খেলতে নেমে আগের মত আর করণীয় কাজগুলো ঠিকমত করতে পারছেন না টাইগাররা।
মোহাম্মদ আশরাফুল, নাজমুল আবেদিন ফাহিমের মত এক্সপার্টরাও কিন্তু তাই মনে করেন। তাদের ধারনা টেকনিক্যাল আর ট্যাকটিক্যাল কারণের চেয়েও ওয়ানডেতে খারাপ খেলার প্রধান কারণ হচ্ছে, মানসিকতা।
বাংলাদেশের ব্যাটারদের মাইনসেটটা হয়ে গেছে টি টোয়েন্টি কেন্দ্রীক। ৫০ ওভার আর ২০ ওভারের খেলার যে বিস্তর ফারাক, আকার, ধরন, গতি, প্রকৃতি সবই যে ভিন্ন, সেটা ঠাউরে অ্যাপ্রোচ ও অ্যাপ্লিকেশন ঠিক করতে গিয়েই ব্যর্থ হচ্ছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা এবং সেটাকেই মূল কারণ বলে ধরা হচ্ছে।
পাশাপাশি আরও একটি বিষয় আছে। তা হয়ত অনেকেরই চোখ এড়িয়ে গেছে। তাহলো ‘অভিজ্ঞতায় ঘাটতি।’ খুব ভালমত লক্ষ্য করলে দেখবেন, গত ২/৩ সিরিজ ধরে যারাই খেলছেন, বিশেষ করে ওয়ানডে সিরিজে যাদের দিয়ে ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট সাজানো হচ্ছে গড়পড়তা তাদের ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা বেশ কম।
ব্যাটারদের মধ্যে অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ (১১১ ম্যাচ), সাবেক অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত (৫৫), তাওহিদ হৃদয় (৪১) ছাড়া বাকিদের অভিজ্ঞতা অনেক কম। মিডল অর্ডারে যারা খেলছেন সেই জাকের আলী (১২), শামীম পাটোয়ারী (৭) আর নুরুল হাসান সোহানদের (১০) আছে হাতে গোনা কটি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা।
ভুলে গেলে চলবে না, দীর্ঘদিন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ ছিলেন ‘পঞ্চ পান্ডবের’ চার তারকা তামিম ইকবাল (২৪৩ টি), মুশফিকুর রহিম (২৭৪), সাকিব আল হাসান (২৪৭), আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ওয়ানডে ২৩৯টি। তামিম ওপেন করলেও মুশফিক, সাকিব ও রিয়াদ ৪ থেকে ৬ নম্বর পজিশনটা আগলেছেন দীর্ঘদিন। এক কথায় ওপরে তামিম আর মিডল অর্ডারে মুশফিক, সাকিব ও রিয়াদই ছিলেন আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক।
শুধু আস্থার প্রতিকই নন, ওয়ানডেতে রান তোলায়ও তামিম, মুশফিক, সাকিব ও রিয়াদ চারজনই সবার ওপরে। এখন তাদের জায়গায় খেলছেন কারা? তাদের কার নামের পাশে কয়টি ওয়ানডে ম্যাচ? তা খুঁটিয়ে দেখলেই বেরিয়ে আসবে এক বিরাট শূন্যতা, ঘাটতি ও কমতি।
ওপরে নাজমুল হোসেন শান্ত (৫৫) ছাড়া শুধু তাওহিদ হৃদয় ৪১টি ওয়ানডে খেলেছেন। আর শামীম পাটোয়ারী (৭), জাকের আলী অনিক (১২) ও নুরুল হাসান সোহানের (১০) ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা খুবই কম। একই অবস্থা ওপরেও। আফগানদের সাথে টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডেতে মোটামুটি ভাল খেলা সাইফ হাসানের এটাই ছিল অভিষেক ওয়ানডে সিরিজ। তার ম্যাচ মোটে ৩টি। নাইম শেখেরও ওয়ানডে মোটে ৯ টি।
আর তানজিদ তামিম খেলেছেন ২৮ ম্যাচ। ম্যাচ খেলায় (১১১ টি) সবচেয়ে অভিজ্ঞ যিনি, সেই মেহেদি হাসান মিরাজ তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দলকে কিছুই দিতে পারেননি। তাই অভিজ্ঞতায় কমতি এ মুহূর্তে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের বড় সমস্যা। সংকটে, বিপদে এবং ম্যাচের বাঁক বদলের সময়গুলোয় যে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন, বাংলাদেশ ব্যাটিং লাইনআপে তার কমতি পরিষ্কার।
মোটকথা, বাংলাদেশ দল শুধু নামি ও তারকা তামিম, সাকিব, মুশফিক ও রিয়াদকে মিস করছে না, তাদের অভিজ্ঞতাকেও অনেক বেশি মিস করছে। তারা দীর্ঘ ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিপর্যয় ও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হাল ধরতে শিখেছিলেন। কখন কিভাবে খেলতে হবে? কোন সময় কার ওপর চড়াও হতে হবে? কখন রয়ে-সয়ে আবার কোনো সময় কার বিপক্ষে চড়াও হতে হবে?
কোন সময় তেড়েফুঁড়ে মারতে হবে? এসব মুশফিক, সাকিব আর রিয়াদরা খুব ভাল জানতেন। তারা বিপদে, সংকটে ভয় না পেয়ে বুক ভরা সাহস, আস্থা, আত্মবিশ্বাস আর ধৈর্য্য ও বুদ্ধি খাটিয়ে ব্যাটিং করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে দলকে সাফল্যের বন্দরে ভেড়াতে পারতেন।
তাই তামিম, মুশফিক, সাকিব ও রিয়াদরা পরিণত হয়ে যখন একসঙ্গে খেলেছেন, তখন বাংলাদেশের ভাল খেলার রেকর্ড অনেক বেশি। জয়ের পাল্লাও ছিল অনেক ভারী। এখন তারা নেই। সবই কমেছে। এখনকার তরুণদের কাছে রশিদ খান রীতিমত মূর্তিমান আতঙ্ক। রশিদ খানের বলকে কিভাবে মোকাবিলা করতে হবে, তা না জেনে না বুঝে এলোমেলো ব্যাট ছুড়ে মরন ডেকে আনছেন তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলী, শামীম পাটোয়ারী, সোহান ও সাইফরা। তাই সংকটে পুরো ব্যাটিং লাইনআপ বালির বাঁধের মত ভেঙ্গে পড়ছে।
এআরবি/আইএইচএস/