আমরা এখনো সেমিতে খেলার মতো দল হয়ে উঠিনি: আশরাফুল

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১২:৫৫ এএম, ০৭ অক্টোবর ২০২৩

বিশ্বকাপে এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৩তম আসর। এবার নিয়ে সপ্তমবার অংশ নিচ্ছে বিশ্বকাপে। ১৯৯৯ সাল থেকে শুরু করে ২০২৩- প্রতিটি বিশ্বকাপেই সরব উপস্থিতি বাংলাদেশের। এরমধ্যে ২০০৩ বিশ্বকাপে কোনো জয় নেই। বাকিগুলোতে মোট ১৪টি ম্যাচে জয় পেয়েছে টাইগাররা। তবে কোনো বিশ্বকাপে ৩টির বেশি জয় পায়নি কখনো।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে সর্বোচ্চ সেমিফাইনাল খেলার লক্ষ্য নিয়ে। এরবেশি লক্ষ্য নির্ধারণ করারই যেন সাহস পায় না। কিন্তু যে লক্ষ্যটা নির্ধারণ করে, সেটাও অর্জন হয় না।

বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল সরাসরিই বলে দিলেন, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার মতো যোগ্য দল হয়ে উঠতে পারেনি। কেন পারেনি? জাগো নিউজের সঙ্গে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সে ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। বিশ্বকাপ উপলক্ষে মোহাম্মদ আশরাফুলের দেয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব দেওয়া হলো। প্রথম পর্ব পড়ুন এই লিংকে।

জাগো নিউজ: আপনার মতে সাকিবের নেতৃত্বে এই দল বিশ্বকাপে কতদুর যেতে পারে বলে মনে হয়?

আশরাফুল: এমনিতে দলটা অনেক ভাল। ব্যাটিং ও বোলিংয়ে বেশ কিছু কোয়ালিটি ও ট্যালেন্টেড প্লেয়ার আছে। তারপরও আমার মনে হয়, বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলা আর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মত দল হয়ে উঠিনি আমরা। কিছু কিছু জায়গা ও ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়ে গেছে। এই কারণে, আমি অতদুর চিন্তা করছি না। তবে এমনিতে আমি আশা করবো, আমাদের দল ৩টা ম্যাচ জিতবে। এর চেয়ে বেশি যদি জিততে পারে, সেটাই হবে পাওয়া।

জাগো নিউজ: এই যে বললেন সেমিতে খেলা ও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মত দলে হয়ে ওঠেনি টিম বাংলাদেশ, এই না ওঠার পিছনের কারণ কি? সমস্যাটা কোথায়?

আশরাফুল: এখনো আমরা সাড়ে তিনশো রান বলে-কয়ে ও প্রায় সময় করতে পারি না। ৩০০ প্লাস ও সাড়ে তিনশো রান চেজ করার সামর্থ্যও খুব কম। এটা বড় মঞ্চে সফল হতে না পারার পথে অন্যতম বাঁধা এটা। আপনি যদি অনুশীলন ম্যাচগুলো দেখেন, তাহলে দেখবেন আমাদের সেই ৩০০ প্লাস বা সাড়ে ৩০০ রান মিসিং। আমরা এখনো গড়পড়তা ২৭০-এ পড়ে আছি।

জাগো নিউজ: এইযে বললেন যে বড় দলগুলো প্রায়শই ৩০০ থেকে সাড়ে তিনশো রান করে আর সমপরিমাণ রান তাড়া করে ফেলে, আমরা পারি না, সেটা কি সামর্থ্যে কমতি, ঘাটতি? মানসিক সমস্যা নাকি দেশে ভাল উইকেটে ব্যাটিং না করতে করতে এমনটা হয়েছে?

আশরাফুল: প্রথমতঃ আমরাতো দেশে এমন ভাল ব্যাটিংবান্ধব উইকেট তৈরি করিনি। যে কারণে আমাদের ব্যাটাররা ভাল ও ট্রু ব্যাটিং কন্ডিশনে নিজেদের তৈরিই করতে পারেনি। বিশ্বকাপের কয়েক মাস আগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০০ প্লাস করেছে; কিন্তু ভাল ও বড় দলের সাথে আমরা এখনো সেভাবে সাড়ে তিনশো রান করতে পারি না। সামর্থ্যের ঘাটতির পাশাপাশি অভ্যাসটাও অনেক কম।

জাগো নিউজ: কোন ৩টি দলের সাথে জিততে পারে বাংলাদেশ? বাকি দলগুলোর সাথে কি ফল হতে পারে?

আশরাফুল: আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা আর নেদারল্যান্ডসের সাথেই আমাদের জেতার চান্স বেশি বলে আমার ধারণা। এই তিনটি বাংলাদেশের মাস্ট উইন গেম অবশ্যই। বাকিদের সাথে জিততে পারটা হবে অনেক বড় অর্জন, কৃতিত্ব।

জাগো নিউজ: সাকিব বাহিনীর ঘাটতির জায়গা কোনটি?

আশরাফুল: ঘাটতি মানে কি, মূল সমস্যার জায়গা হলো ব্যাটিং। ব্যাটাররা সেট হয়ে আউট হয়ে যায় বা যাচ্ছে। কেউই লম্বা ইনিংস খেলতে পারে না তেমন একটা। কারো ১৩০-১৪০ থেকে দেড়শো রানের ইনিংস খেলার সামর্থ্য তৈরি হয়নি এখনো। আমাদের এখনো দৌড় দেখবেন ৬০ থেকে ৭০, আকর্ষণীয় ৭০ রানের ইনিংস শেষেই আমরা থেমে যাই। যে জায়গায় বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা আর বাবর আজমরা যেদিন রান করেন, সেদিন দেখবেন ১৩০-১৪০ বা ১৫০ করে ফেলেন; কিন্তু আমরা তা পারি না। অতদুর যাই না। যাওয়া সম্ভব হয় না। এই জায়গাটায় ঘাটতি আছে।

জাগো নিউজ: টিম বাংলাদেশের বর্তমান বোলিং নিয়ে কিছু বলুন?

আশরাফুল: আমাদের বোলিংটা এখন দারুন। বেশ এক্সাইটিং বোলিং এখন আমাদের। আমাদের বোলাররা এখনো ২৭০ রানকে ডিফন্ড করছে। বা করার সাহস দেখাচ্ছে। যদিও আমি জানি না যে বিশ্বকাপে আমরা ওই রান করে তা পারবো কি না? মোট কথা, আমাদের বোলিং অ্যাটাক এবার বেশ ভাল।

জাগো নিউজ: ভাল মানে কেমন ভাল?

আশরাফুল: বেশ ভাল। আমি যতগুলো বিশ্বকাপ খেলেছি, তার মধ্যে এবারের বোলিংটা সবচেয়ে ভাল। ধারালো। সবদিক থেকে ব্যালান্সড। শক্তিশালী।

জগো নিউজ: কিভাবে ভাল, একটু বিস্তারিত ব্যাখা দেবেন কি?

আশরাফুল: প্রথমতঃ আমাদের পেস বোলিং ইউনিটটা অনেক সমৃদ্ধ। বেশ শানিত। আগের বিশ্বকাপ দলগুলোয় একজন বা দুজন পেসার থাকতো ১৩০ প্লাস কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারতো; কিন্তু এবার যারা আছে তারা সবাই ১৩৫-১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারে। এটা অবশ্যই একটা বড় দিক। পেসারদের যারাই খেলছে, তারাই ভাল বল করছে। করণীয় কাজগুলো ঠিকঠাকমত করে ফেলছে। স্পিন ব্যাকআপও আছে দারুণ। সমান দুজন করে বাঁ-হাতি ও অফস্পিনার আছে। তারা অনেকদিন ধরে ভাল খেলছে।

জাগো নিউজ: আমরা ২০০৭ থেকে আগের বার পর্যন্ত প্রতিবার বাংলাদেশ অন্তত একটি চমক দেখিয়েছে। এবার কি সে সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় আপনার?

আশরাফুল: টিমতো অনেকগুলো আছে। দক্ষিণ আফ্রিকা আছে। নিউজিল্যান্ডও আছে। যদিও নিউজিল্যান্ডের বোলিং ভাল। আসলে আমি যে ৩ দলের সাথে জেতার আশা করছি, ওই দল তিনটি ছাড়া বাকিরা অনেক বেটার দল। দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড এমনকি অস্ট্রেলিয়ার সাথেও ভাল করার সম্ভাবনা আছে। যদি ব্যাটিংয়ে ভাল রান করতে পারি।

জাগো নিউজ: আশরাফুলের চোখে এবারের বিশ্বকাপে ফেবারিট কে বা কারা?

আশরাফুল: আমার মনে হয় ভারত আর ইংল্যান্ড ফাইনাল খেলবে। আর টপ ফোরে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের সম্ভাবনাই বেশি। ভারতের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। আমার মনে হয়, ২০১১ সালের মত এবারো দেশের মাটিতে ভারতই হবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। যেহেতু তাদের হোম কন্ডিশন, একটা অনেক বড় অ্যাডভানটেজ। প্রচুর অলরাউন্ডার। ব্যাটাররা ফর্মে আছে। জাসপ্রিত বুমরা ফেরায় ভারতের শক্তি অনেক বেড়ে গেছে। ভারত বধ হবে খুব কঠিন হবে।

জাগো নিউজ: উপমহাদেশের মাটিতে ট্র্যাক রেকর্ড ভাল, তারপরও আপনি কি পাকিস্তানকে হিসেবের মধ্যে আনছেন না?

আশরাফুল: পাকিস্তানের পেস আক্রমণ খুব ভাল; কিন্তু ইনিংসের মাঝামাঝি রানের গতি নিয়ন্ত্রনে রাখা আর ব্রেক থ্রু আনার মত স্পিনার কম। সেটা বড় দুর্বলতা। এটা পাকিস্তানের বড় ঘাটতি। তা পুষিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে বড় কিছু করা কঠিন।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশের কারো কি বিশ্বকে চমকে দেয়ার সম্ভাবনা আছে?

আশরাফুল: হ্যা আছে তো। জুনিয়র তামিম, লিটন আর শান্ত আছে। ব্যাটসম্যানরা সবাই পারে চমকে দিতে।

জাগো নিউজ: জুনিয়র তামিম সম্পর্কে আপনার মতামত কি?

আশরাফুল: আমি ওকে ৫ বছর আগে দেখেই আকৃষ্ঠ হয়েছিলাম। তখন মোহামেডানের বিপক্ষে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দারুণ এক সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে মাঠ গরম করে ফেলেছিল তানজিদ তামিম। তখনই দেখেছি, বুঝেছি যে এই তরুণের সামর্থ্য আছে। ভাল খেলোয়াড়। বেশ ভাল খেলোয়াড়। পেস আর স্পিন দুই- ধরনের বোলিংয়েই ভাল খেলে। আমার মনে হয় পরবর্তীতে সুপারস্টার হওয়ার মত সামর্থ্য আছে তানজিদ তামিমের মধ্যে।

এআরবি/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।