জীবনের নতুন লক্ষ্য এনামুলের ২১ গোলের রেকর্ড ভাঙা

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৭:৫৩ পিএম, ০২ আগস্ট ২০১৯

নওগাঁ জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার পূর্বে মহাদেবপুর উপজেলায় নির্মিত শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে বিকেল হলেই ফুটবল নিয়ে নেমে পড়েন শ’খানেক কিশোর-যুবক। তাদের প্রশিক্ষণ দেন এনামুল হক। সঙ্গে স্থানীয় দুইজন সাবেক ফুটবলার। এনামুল হক, নামটি চেনাচেনা লাগছে নিশ্চয়ই?

হ্যাঁ, ঘরোয়া ফুটবলে অনন্য এক রেকর্ডের মালিক এই এনামুল হক। পেশাদার ফুটবল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে স্থানীয় ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতা। ২০০৯-১০ মৌসুমে আবাহনীর জার্সি গায়ে ২১ করেছিলেন নওগাঁর এ যুবক। ১০ বছরেও তার সেই রেকর্ড ভাঙতে পারেননি স্থানীয় কোনো ফুটবলার।

এবার নিশ্চয়ই চেনা গেছে এনামুলকে। পেশাদার ফুটবলের তৃতীয় আসরে আবাহনীর জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন এনামুল। ফরাশগঞ্জ থেকে চ্যাম্পিয়ন দলে নাম লিখিয়েই অনন্য এক কীর্তি জড়িয়ে যায় তার সঙ্গে। আবাহনীর হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ে রাখেন বড় অবদান। ২১ গোল করে পান গোল্ডেন বুট।

এনামুলই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া একমাত্র বাংলাদেশি ফুটবলার। বাকি আসরগুলোয় এই পুরস্কার উঠেছে বিদেশিদের হাতে। আগামীকাল (শনিবার) শেষ হতে যাওয়া লিগের একাদশ আসরেও সর্বোচ্চে গোলদাতা হতে যাচ্ছেন একজন ভিনদেশি। লড়াইয়ে আছেন আবাহনীর নাইজেরিয়ান সানডে চিজোবা এবং শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের রাফায়েল ওদোউইন।

মোহামেডানের নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড বুকোলা ওলালেকানের দ্বিতীয় আসরে করা ১৮ গোলের রেকর্ড ভেঙেছিলেন এনামুল তৃতীয় আসরে। আর সপ্তম আসরে এনামুলের ২১ গোলের রেকর্ড ভেঙে ২৬ গোল করেছিলেন শেখ জামালের হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড ওয়েডসন।

প্রিমিয়ার লিগে এক আসরে সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ডটি হাতছাড়া হলেও এনামুলের এখনো আছে দুটি রেকর্ড। এক. বাংলাদেশি ফুটবলার হিসেবে গোল্ডেন বুট জয় এবং দুই. স্থানীয় ফুটবলারদের মধ্যে এক আসরে সবচেয়ে বেশি গোল।

প্রিমিয়ার লিগের প্রথম আসরে স্থানীয়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোল ছিল জাহিদ হাসান এমিলির। আবাহনীর জার্সি গায়ে তিনি করেছিলেন ১২ গোল। ওই বছর ১৬ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জিতেছিলেন ব্রাদার্সের নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড এলিজা জুনিয়র। লিগের দ্বিতীয় আসরে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার লড়াইয়ে দারুণভাবে ছিলেন আলফাজ আহমেদ। শেখ রাসেলের জার্সি গায়ে শেষ পর্যন্ত ১৭ গোল করে থেমেছিলেন দেশের অন্যতম সেরা এই স্ট্রাইকার। ১৮ গোল করে গোল্ডেন বল জিতেছিলেন মোহামেডানের বুকোলা ওলালেকান।

তৃতীয় আসরে গোল্ডেন বুট জেতা এনামুল সপ্তম আসরে মুক্তিযোদ্ধার জার্সি গায়েও শ্রেষ্ঠত্ব ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে ছিলেন। কিন্তু এনামুল সেবার স্থানীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ (১৩টি) গোলদাতা হলেও পারেননি গোল্ডেন বুট পুনরুদ্ধার করতে। শেখ জামালের জার্সি গায়ে নাইজেরিয়ান এমেকা গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন ১৯ গোল করে।

শেষ হতে যাওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের একাদশ আসরে স্থানীয়দের মধ্যে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১৭ গোল করেছেন আবাহনীর নাবিব নেওয়াজ জীবন। অবশ্য তার লক্ষ্যও ছিল না এনামুলের রেকর্ড ভাঙা। যে কয়টা গোল করেছেন এ সময়ের দেশের প্রধান স্ট্রাইকার, লক্ষ্য ছিল তার চেয়েও কম।

১৭ গোল করে জীবন ছুঁয়েছেন স্থানীয় ফুটবলারদের মধ্যে এক আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭ গোল করা আলফাজ আহমেদকে। এবারের লিগে স্থানীয়দের মধ্যে জীবনের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া অনেকটাই নিশ্চিত। তার পেছনে থাকা বসুন্ধরা কিংসের মতিন মিয়ার গোল ১১ টি। শনিবার মতিনের দলের শেষ ম্যাচ। লিগের শেষ ম্যাচে ৬ গোল করে জীবনকে ছোঁয়া বলতে গেলে দুঃসাধ্য ব্যাপার।

আগামী মৌসুমে জীবন আরো বেশি গোল করার ঘোষণা দিয়েছেন। ‘আমি এবারের লিগের আগে বলেছিলাম ১৫/১৬ টি গোল করতে চাই। করেছি ১৭ টি। আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। এখন আগামী মৌসুমে আমার লক্ষ্য এনামুল ভাইয়ের রেকর্ড ভাঙা। সবার কাছে বলছি, আগামী লিগে ২০ গোল করবো। কিন্তু মনে মনে লক্ষ্য থাকবে ২১ গোলের বেশি করে এনামুল ভাইয়ের রেকর্ডটি যেন ভাঙতে পারি’-শুক্রবার জাগো নিউজকে বলছিলেন নাবিব নেওয়াজ জীবন।

লিগে স্থানীয় ফরোয়ার্ডরা কেন গোলে পিছিয়ে থাকেন বিদেশিদের চেয়ে? এ প্রশ্নের উত্তরে মজার তথ্য দিলেন তৃতীয় আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা এনামুল হক, ‘আমাদের (স্থানীয়) ফরোয়ার্ডদের গোল করার প্রবণতা কম। আরেকটি বিষয় হলো-হিংসের প্রবণতা। আমিও নিজেও এসব মোকাবিলা করেছি। গোলের ভালো পজিশনে থাকলেও হিংসায় অনেকে বল দিতে চান না। আমি গোল পাবো না, আরেকজন করে ফেলবে-এই মানসিকতা কাজ করে আমাদের স্থানীয়দের মধ্যে। না হলে স্থানীয় স্ট্রাইকাররা প্রতিটি আসরেই আরো বেশি গোল পেতো।’

এক নজরে ১১ আসরে স্থানীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতারা

প্রথম আসর : ১২ টি-আবাহনীর জাহিদ হাসান এমিলি
দ্বিতীয় আসর : ১৭ টি-শেখ রাসেলের আলফাজ আহমেদ
তৃতীয় আসর : ২১ টি-আবাহনীর এনামুল হক (লিগের সর্বোচ্চ)
চতুর্থ আসর : ১৬ টি-মুক্তিযোদ্ধার মিঠুন চৌধুরী
পঞ্চম আসর : ৬ টি-মুক্তিযোদ্ধার মিঠুন চৌধুরী
ষষ্ঠ আসর : ৭টি-আবাহনীর সাখাওয়াত হোসেন রনি
সপ্তম আসর : ১৫ টি- মোহামেডানের ওয়াহেদ আহমেদ
অষ্টম আসর : ১৩ টি-মুক্তিযোদ্ধার এনামুল হক
নবম আসর : ৮ টি-আরামবাগের সাজিদ ও মোহামেডানের তৌহিদুল আলম সবুজ
দশম আসর : ৮ টি-চট্টগ্রাম আবাহনীর তৌহিদুল আলম সবুজ
একাদশ আসর : ১৭ টি-আবাহনীর নাবিব নেওয়াজ জীবন (সম্ভাব্য)

আরআই/এমএমআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।