জার্সি নিলামে তুলতে চান ‘সোনার হরিণ’ ধরার আরেক নায়ক টিপু

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:১৬ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০২০

ম্যাচে গোল না হলেই কোচের চোখ চলে যেতো ডাগআউটে বসা শাহাজউদ্দিন টিপুর ওপর। ইশারা দিতেন মাঠে নামার প্রস্তুতি নিতে। টিপু নামতেন, গোল করতেন, ম্যাচ জেতাতেন।

বদলি হিসেবে মাঠে নেমে গোল করে করে ঢাকার ফুটবলের এক সময়ের এই স্ট্রাইকারের নামের সঙ্গে লেগে যায় ‘সুপার সাব’ তকমা। এই টিপুর একমাত্র গোলেই ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডু সাফ গেমস ফুটবলের সেমিফাইনালে ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। পরে ফাইনালে আলফাজের গোলে নেপালকে হারিয়ে বাংলাদেশ ফুটবলে প্রথম স্বর্ণ জেতে সাফ গেমসে।

ফাইনালের নায়ক আলফাজ আহমেদ একদিন আগে জাগো নিউজের কাছে ওই ফাইনালের ১০ নম্বর জার্সি নিলামে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন করোনাভাইরাসে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে।

একইভাবে ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারে চারজাতি টুর্নামেন্ট জেতা অধিনায়ক প্রয়াত মোনেম মুন্নার জার্সিটিও নিলামে ওঠানোর আগ্রহ দেখিয়েছেন তার স্ত্রী সুরভী মোনেম। সাবেক ফিফা রেফারি তৈয়ব হাসান বাবু ২০১৩ সালে কাঠমান্ডুতে ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যেকার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের বাঁশি বাজিয়েছিলেন প্রথম দক্ষিণ এশিয়ার রেফারি হিসেব। কয়েকদিন আগে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন ওই জার্সিটি নিলামে ওঠানোর।

ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিশ্বকাপের ব্যাটটি নিলালে বিক্রি হয়েছে ২০ লাখ টাকায়। নিলামে ব্যাট তুলতে চেয়েছেন আরেক ক্রিকেটার মুশফিকুর রহীম। মোহাম্মদ আশরাফুলও ঘোষণা দিয়েছেন তার রেকর্ড গড়া ব্যাট দুটি নিলামে তোলার। এসব খবর চোখে পড়েছে শাহজউদ্দিন টিপুর। তাইতো তার ১৯৯৯ সালের সাফ গেমসের ১৯ নম্বর জার্সিটি নিলামে ওঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি। সন্ধ্যায় সিলেট থেকে ফোনে তিনি জার্সি বিক্রির আগ্রহের কথা জানিয়েছেন জাগো নিউজকে।

Tipu

জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ২০০৮ সাল পর্যন্ত। ৬ বছরের মতো খেলেছেন আবাহনীতে। মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা, ব্রাদার্স ও রহমতগঞ্জের জার্সিতেও ঢাকার মাঠ দাপিয়েছেন টিপু। বদলি হিসেবে হ্যাটট্রিক করার অভিজ্ঞতাও আছে তার।

যুব ফুটবলে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে বদলি হিসেবে নেমে হ্যাটট্রিক করেছিলেন মাত্র ৭ মিনিটে। ঘরোয়া লিগে আবাহনীর জার্সিতে বদলি হিসেবে নেমে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ফরাশগঞ্জের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে। ওই লিগের দ্বিতীয় পর্বে সব ম্যাচেই গোল করেছিলেন টিপু। অল্পের জন্য সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া হয়নি তার।

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন আয়োজিত প্রথম বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের প্রথম গোল করেছিলেন টিপু। আবাহনীর জার্সিতে তিনি গোল করেছিলেন মালয়েশিয়া লাল দলের বিরুদ্ধে। যে দলটি শেষ পর্যন্ত ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরেছিল। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের প্রথম গোলদাতা হিসেবে ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে তার নাম।

১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডুতে অষ্টম সাফ গেমসের সেমিফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। ইরাকি কোচ সামির শাকির আক্রমণভাগে রেখেছিলেন আলফাজ আহমেদ ও মিজানুর রহমান ডনকে।

বদলি হিসেবে শাহাজউদ্দিন টিপুকে সাধারণত শেষ দিকেই নামাতেন কোচ। কিন্তু সেমিফাইনালে ইরাকি কোচ দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই টিপুকে নামান ডনের পরিবর্তে। ৬৪ মিনিটে ‘সুপার সাব’ টিপু গোল করেন ভারতের বিরুদ্ধে।

বাকি সময় ওই গোল ধরে রেখে বাংলাদেশ উঠে যায় ফাইনালে। তারপর ফাইনালে আলফাজের দেয়া ৪৪ মিনিটের গোলে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে সোনার হরিণ হয়ে যাওয়া সাফ গেমসের স্বর্ণের দেখা পায় লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।

দেশের এই দুঃসময়ে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায় মানুষের পাশ দাঁড়াচ্ছেন অনেকে। শাহাজউদ্দিন টিপুও তার সাধ্যমতো দেশের অসহায় মানুষদের পাশে থাকতে চান।

‘করোনাভাইরাসে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে সেটা জাতীয় ইস্যু। আমি যে দেশের পতাকা বুকে নিয়ে খেলেছি, সেই দেশের অনেক মানুষ এখন খাদ্যের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তাই আমি সাফ গেমসে যে ১৯ নম্বর জার্সি গায়ে ভারতের বিরুদ্ধে গোল করে দেশকে ফাইনালে তুলেছিলাম ওই জার্সিটা বিক্রি করতে চাই। যা পাই তাতে অসহায় মানুষের যতটুকু উপকার হয় সেটাই হবে আমার দেশের মানুষের জন্য সামান্য কিছু করা’- সিলেট থেকে বলছিলেন শাহাজউদ্দিন টিপু।

আরআই/আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।