বিসিবি নির্বাচনে নতুন মোড়
ফের বাতিল হতে পারে ১৫ ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ
সমঝোতা, টানাপোড়েন। ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার আশীর্বাদপুষ্ট আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন বিএনপিপন্থী প্যানেলের মধ্যে ঢাকার ক্লাব কোটার ১২ পরিচালক নিয়ে যে সমঝোতার কথা শোনা যাচ্ছিল, তা কি শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যাচ্ছে? সোমবার গভীর রাতের খবর কিন্তু এটাই।
মঙ্গলবার সকালে অতিনাটকীয় ঘটনা না ঘটলে শেষ পর্যন্ত হয়তো সমঝোতার উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে। আগেই জানা, ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট কোটায় ১২ পরিচালকের মধ্যে পরিচালক বণ্টনের সমঝোতা বা ভাগাভাগির একটা প্রস্তাব এসেছে। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের পক্ষে তথা ক্রীড়া উপদেষ্টার সমর্থনে ৩ পরিচালক এবং তামিম ইকবালের পক্ষে ৯ পরিচালক। এই ৯ঃ৩ অনুপাতেই আলোচনা চলছিল। কিন্তু সে আলোচনাটা প্রায় ভেস্তে যাওয়ার পথে।
কারণ তামিম ইকবালপন্থী বিএনপি প্যানেল থেকে গতকাল সোমবার গভীর রাতে ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, তারা আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে সভাপতি মেনেই ঢাকার ক্লাব কোটায় ১২ পরিচালক চান। অর্থাৎ ৯ঃ৩ বা ১০ঃ২ কিংবা ১১ঃ ১ নয়, তামিমপন্থীরাই ১২ পরিচালক পদে নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
জানা গেছে, তামিম ইকবাল, ফাহিম সিনহা, রফিকুল ইসলাম বাবু, টি স্পোর্টসের ইশতিয়াক সাদেক ও শানিয়ান তানিম এই ৫-৬ জনের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল রাত বারোটার দিকে ক্রীড়া উপদেষ্টার বাসায় যান এবং তার সঙ্গে কথা বলেন। মোটামুটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশেই কথা আগাচ্ছিল। কিন্তু একপর্যায়ে তামিম ইকবাল বলে বসেন যে, আমাদের এই ১২ জনই থাকবে এবং আমরা এই ১২ জনই নির্বাচন করতে আগ্রহী।
ওদিকে ক্রীড়া উপদেষ্টাও অনড় তার পছন্দের তিন পরিচালককে রাখতে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ৯ঃ৩ থেকে ১০ঃ২ বা ১১ঃ১, সেটা বাদ দিয়ে যখন ১২ঃ০ হয়ে চাইলেন তামিমরা; তখন ক্রীড়া উপদেষ্টা একপর্যায়ে বলে বসেন-তাহলে আপনারা আপনাদের মতো নির্বাচন করেন, আমি আমার মতো আগাব।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে যখন দুই পক্ষের সমঝোতার সম্ভাবনা ভেস্তে গেছে। এখন শুরু হয়েছে নতুন গুঞ্জন। নতুন করে সেই ১৫ ক্লাবের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নজরদারিতে থাকা এই ১৫ ক্লাবকে আবারও নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হতে পারে। বলে রাখা ভালো, সমঝোতা হয়েই ছিল মূলত ১৫ ক্লাবকে ফিরিয়ে আনা নিয়ে।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, দুদক এবং বিসিবির রায়ে যে ১৫ ক্লাবকে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল; সেই ১৫ ক্লাবকে নজরদারি মুক্ত করে ওই ক্লাবগুলোর কাউন্সিলরদের নির্বাচন করার সুযোগ করে দিয়েছিল কমিশন। কিন্তু এখন নতুন করে আবারও রিট করে সেই ১৫ ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ স্থগিত করার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
তাতে করে এই ১৫ ক্লাবের কাউন্সিলরদের কাউন্সিলরশিপ থাকবে না এবং সেখানে ইফতিখার রহমান মিঠু, বোরহান হোসেন পাপ্পু, মঞ্জুরুল আলমসহ তামিমপন্থিদের অন্তত ৩-৪ জন পরিচালকের কাউন্সিলরশিপ বাতিল হয়ে যাবে। এই ১৫টি ভোটই ধারণা করা হয় তামিম প্যানেলের।
ভাবছেন হঠাৎ ক্রীড়া উপদেষ্টা কেন এত কঠোর অবস্থানে? জানা গেছে, ক্রীড়া উপদেষ্টা যে পছন্দের তিনজন পরিচালক রাখতে চেয়েছিলেন ঢাকার ক্লাব কোটায়; তার একজন হলেন-ফারুক আহমেদ। তাকে সরিয়ে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে বোর্ড প্রেসিডেন্ট করা হলেও মাসখানেক আগে আবার ফারুক আহমেদকে ডেকে নিয়েছিলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা এবং তিনি বোর্ডে চান ফারুক আহমেদকে।
তামিমপন্থীদের বৈঠকে ফারুক আহমেদের বিষয়েই বেশি আপত্তি এসেছে। তারা ওই ৯ঃ৩, ১০ঃ২ বা ১১ঃ১-এ রাজি হননি মূলত ফারুক আহমেদকে নির্বাচনে না চাওয়ায়। এখন একদিকে তামিমপন্থিরা ফারুক আহমেদকে না রাখার পক্ষে অনড়, অন্যদিকে ক্রীড়া উপদেষ্টা তাকে চান।
এই দুইয়ের টানাপোড়েনে শেষ পর্যন্ত ৯ঃ৩, ১০ঃ২ বা ১১ঃ১ সমঝোতার প্রস্তাব প্রায় ভেস্তে যাওয়ার পথে। হয়তোবা আজ দুপুর নাগাদ রিট হতে পারে। যদি সেটা হয়, তবে ১৫ ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ বাতিল হতে পারে। এমনটা হলে একটা নতুন মেরুকরণের নির্বাচন হবে ঢাকার ক্লাব কোটায়। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে তখন, কে কয়টি পরিচালক কোটা পান, সেটি আগাম আন্দাজ করা কঠিন হয়ে যাবে।
এআরবি/এমএমআর/জিকেএস