দিন বদলায় কিন্তু তাদের ভাগ্য বদলায় না


প্রকাশিত: ০৯:২২ এএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
সর্তা খালে রফিকের টিনের স্টিমারে চড়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ পারাপার হয়।

স্বাধীনতার ৪০ বছরেও ভাগ্য বদলায়নি ফটিকছড়ি ও রাউজান উপজেলার মানুষের। একটি সেতুর অভাবে প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই দুই উপজেলার লক্ষাধিক জনগণকে। সর্তা খালের উপর একটি সেতুর অভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, যাতায়াত ও শিক্ষাক্ষেত্রেও পিছিয়ে আছে এইসব এলাকার মানুষ।

উত্তর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও রাউজান উপজেলার ২০ কিলোমিটার সীমান্ত পথ। এতে একমাত্র বাঁধা রাক্ষুসী সর্তা খাল। ব্যবসা-বাণিজ্য, যাতায়াত শিক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য এ খালের উপর সেতু নির্মাণ দুই জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি।  

সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, সর্তা খালের কমিটি বাজার ঘাটে রফিকুল ইসলাম (৪৫) নামের এক ব্যক্তি টিনের ড্রাম, গাছ আর বাঁশের তৈরি এক ভেলায় শত শত মানুষ এপার থেকে ওপার আনা নেয়া করছেন। পারাপারের জন্য তিনি জনপ্রতি ৫-১০ টাকা করে নিচ্ছেন।

স্থানীয় লোকজন রফিকের এই ভেলাকে টিনের স্টিমার বলে ডাকে। রফিক জানান, এটি আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগ। এক সময় এখানে আমার বাবা বাশেঁর সাঁকো তৈরি করে লোকজন পারাপার করাতেন।
 
আদিকাল থেকে ফটিকছড়ির কমিটি বাজার, ধর্মপুর, বখতপুর, আজাদী বাজার, রমজু মুন্সীর হাট রাউজানের হলদিয়া, সিন্নিবটতল, ফকিরটিলা, ডাবুয়া, ইয়াছিন নগর এলাকার মানুষ বর্ষায় নৌকা যোগে এবং শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেটে খাল পারাপার হন।

গত কয়েক বছর যাবৎ স্থানীয়রা শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে পারাপার হন। বর্ষা নামলেই সর্তা নদী বাঁধ সাধে। সর্তার ভাঙন, দু’পাড়ের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের খামখোয়ালীপনায় দীর্ঘদিন যাবৎ এখানে কোনো সেতু নির্মাণ হয়নি।

ধর্মপুর কমিটি বাজারের ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ, আজিজুল হক, আবদুল মাবুদ বলেন, দিন বদলায়-মানুষ বদলায় কিন্তু সর্তা পাড়ের মানুষের ভাগ্য বদলায় না।

এখানে একটি সেতু নির্মাণ হলে দু’পাড়ের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ও যাতায়াত সহজ হবে। প্রতি বছর দু’পাড়ের শত শত কোমলমতি শিশু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয় শুধুমাত্র যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে।
 
ধর্মপুর কমিটি বাজার এ. সামাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পৃষ্টপোষক আবু জাফর আলম বলেন, রাউজান অংশের সর্তা নদীর উপর ৫টি সেতু নির্মিত হয়েছে। ফটিকছড়ি অংশে একটিও হয়নি।

কমিটি বাজার ঘাটে একটি সেতু নির্মাণ করলে রাউজান হলদিয়া রাবার বাগান থেকে চট্টগ্রাম শহরে পৌঁছানোর সহজতম পথ হবে এই সড়ক।
 
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স সার্জন ডা. মুহাম্মদ মুহসিন বলেন- দুই উপজেলার ২০ কিলোমিটার সীমান্ত পথে স্বাধীনতার ৪০ বছরেও একটি সেতু না হওয়া খুবই দুঃখজনক। কমিটি বাজার ঘাটে একটি সেতু নির্মাণে দু’পাড়ের মানুষের হৃদয়ের সেতু বন্ধন বাস্তবে রূপ নেবে।

এ ব্যপারে ফটিছড়ির উপজেলা প্রকৌশলী মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, এখানে একটি সেতু নির্মাাণ এই এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি। কিন্তু আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি না পেলে কোন ব্যবস্থা নিতে পারি না।   

ফটিকছড়ির সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, দু’পাড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখ ঘুচাতে সর্তা খালের কমিটি বাজার ঘাটে একটি সেতু নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর। এজন্য একটি প্রকল্প তৈরি করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি।

এসকেডি/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।