শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা ফিফটি-ফিফটি
স্বপ্ন সফল হওয়ার চেয়ে আর মাত্র একধাপ দূরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। ২০১২ সালে এই সম্ভাবনাটা একবার উঁকি দিয়েছিল। শুধু উঁকি দেয়াই নয়, খুব কাছেও চলে এসেছিল; কিন্তু ২ রানের আক্ষেপ বাংলাদেশের ক্রিকেটে যেন চিরন্তন হয়েই থাকবে। ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে পরাজয়ের পর সারা দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কান্না দেখেছিলাম। আগে থেকে তো জানা ছিলই, তখন আবারও বুঝলাম- বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেটকে কতটা ভালোবাসে। সেই ভালবাসার প্রতিদান দেয়ার আরেকটা সুযোগ সামনে চলে এলো।
আমরা দ্বিতীয়বারের মতো খেলছি এশিয়া কাপের ফাইনালে। আগেরবার প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। সেই পাকিস্তানকে হারিয়েই এবার আমরা ফাইনালে উঠেছি। শিরোপায় হাত দেয়ার মাঝে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পরাক্রমশালী ভারত। মহেন্দ্র সিং ধোনির দলকে হারাতে পারলেই আমরা প্রথমবারের মতো হয়ে যাবো এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন।
বেশ কিছুদিন ধরেই ওয়ানডে ক্রিকেটে পরিণত হয়েছি সুপার পাওয়ারে। দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তান থেকে শুরু করে কোনো দলকেই এখন আর আমাদের কাছে অপরাজেয় মনে হয় না। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের প্রমাণ করার ঢের বাকি ছিল। এবারের এশিয়া কাপ সেই প্রমাণটাও এনে দিলো। আমরা এখন টি-টোয়েন্টিতেও ফেভারিট।
গত একটি বছর সাফল্যের যে ধারাবাহিকতা, তার চূড়ান্ত ফসল ঘরে তোলার সময় এসে গেছে। এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে হারাতে পারলেই সেই কাঙ্খিত গন্তব্যেও পৌঁছে যাওয়া যাবে। তবে, ফাইনাল জয়টা মোটেও সহজ হবে না বাংলাদেশের জন্য। কারণ টি-টোয়েন্টিতে ভারত অপ্রতিরোধ্য। এই দলটিকে হারানো কঠিন।
কাগজে কলমে অবশ্যই এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারত ফেভারিট। কিন্তু সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় কোনোমতেই বাংলাদেশকে পিছিয়ে রাখা যাবে না। সুতরাং, এশিয়া কাপের ফাইনালটা হয়ে যাচ্ছে ফিফটি ফিফটি সম্ভাবনার। মোটকথা কাগজে-কলমে ভারত এগিয়ে থাকলেও সম্ভাবনাটা তৈরি হয়েছে ফিফটি-ফিফটি।
তাহলে প্রশ্ন হলো- বাংলাদেশ শিরোপা জিততে হলে কী করতে হবে? সোজা উত্তর। দলে এমন কোনো সুপার ক্লাস পারফরমার নেই যে, একাই একটি ম্যাচ বের করে নিয়ে আসবে। জিততে হলে ফাইনালেও মাশরাফিদের একটি ‘দল’ হয়ে উঠতে হবে। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং এই তিন ডিপার্টমেন্টেই সমানতালে ভালো করতে হবে। তাহলেই কেবল বাংলাদেশের জয় সম্ভব।
অনেকেই ফাইনালে উইকেট নিয়ে কথা বলছেন দেখলাম, যে উইকেটের ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করছে। কিন্তু আমি মনে করি টি-টোয়েন্টিতে এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। এখানে উইকেট কেমন হবে সেটা বিষয় নয়, বিষয় হলো- এটা টি-টোয়েন্টি। যেকোনো এক ওভারেই খেলার মোড় ঘুরে যেতে পারে। সুতরাং, ব্যাটে তো অবশ্যই ভালো করতে হবে, তবেই বোলারদের ওপর চাপ কমবে এবং বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
লেখক: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ওপেনার