কোন বাইক কতটা শক্তিশালী বুঝবেন কীভাবে
বাইক কেনার আগে সবাই একটিই প্রশ্ন করেন বাইকটি কি শক্তিশালী? গতি, পিকআপ, লোড বহন, লং রাইড, ওভারটেক সবকিছুতেই একটি শক্তিশালী বাইক আলাদা পারফরম্যান্স দেয়। কিন্তু শক্তি বা পারফরম্যান্স শুধু বিজ্ঞাপনের কথায় বোঝা যায় না। কিছু নির্দিষ্ট প্রযুক্তি ও বাস্তব পরীক্ষার মাধ্যমেই বোঝা সম্ভব একটি বাইক আসলে কতটা শক্তিশালী।
১. ইঞ্জিন সিসি
বাইকের ইঞ্জিন সিসি হলো শক্তির একটি মূল সূচক। সাধারণত সিসি যত বেশি, বাইক তত বেশি শক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম। যেমন ১০০-১২৫ সিসি বাইক শহরের কমিউটারদের জন্য যথেষ্ট, যেখানে ১৫০-২০০ সিসি বাইক দ্রুত পিকআপ দেয় এবং হাইওয়েতে ভালো পারফরম্যান্স করে। তবে শুধু সিসি দেখে শক্তি বিচার করা ঠিক নয়, ইঞ্জিনের প্রযুক্তিও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
২. হর্সপাওয়ার ও টর্ক
বাইকের প্রকৃত শক্তি বোঝার জন্য হর্সপাওয়ার ও টর্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। হর্সপাওয়ার নির্দেশ করে বাইক সর্বোচ্চ কত শক্তি উৎপন্ন করতে পারে, আর টর্ক নির্দেশ করে বাইক কত দ্রুত ত্বরান্বিত হবে। একটি শক্তিশালী বাইকে সাধারণত টর্ক বেশি থাকে, যা লোড বা চড়াই-উতরাইতে পারফরম্যান্স ভালো রাখে।
৩. ইঞ্জিন টেকনোলজি
শুধু সিসি নয়, ইঞ্জিনের প্রযুক্তিও শক্তি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ। ডিওএইচসি বা সিওএইচসি প্রযুক্তি, ফুয়েল ইনজেকশন, লিকুইড কুলিং সিস্টেম এবং উন্নত ইসইউ টিউনিং ইঞ্জিনকে দীর্ঘ সময় ধরে স্থিতিশীল পারফরম্যান্স দিতে সক্ষম করে। প্রযুক্তি যত উন্নত, বাইক তত শক্তিশালী অনুভূত হয়।
৪. পাওয়ার-ওজন অনুপাত
একটি বাইকের ওজন ও শক্তির অনুপাত তার প্রকৃত পারফরম্যান্স বোঝায়। কম ওজনের ১৫০ সিসির বাইক অনেক সময় বেশি ওজনের ১৭০ সিসির বাইকের চেয়ে দ্রুত পিকআপ দেয়। তাই শক্তি বিচার করতে শুধু সিসি নয়, পাওয়ার-ওজন অনুপাত দেখাই কার্যকর।
৫. থ্রটল রেসপন্স
শক্তিশালী বাইক দ্রুত থ্রটল রেসপন্স দেয়। হালকা অ্যাক্সিলারেশনেই গতি বেড়ে যায় এবং ওভারটেক করতে কম সময় লাগে। টেস্ট রাইডে বাইক কত দ্রুত পিকআপ দেয় তা শক্তি নির্ধারণের একটি সহজ ও কার্যকর উপায়।
৬. গিয়ারবক্সের পারফরম্যান্স
গিয়ারবক্সের স্মুথনেসও বাইকের শক্তি ও পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে। শক্তিশালী বাইক সহজে গিয়ার শিফট হয়, মাঝারি আরপিএম থেকেও গতি ধরে রাখে এবং হাই স্পিডে কম্পন কম থাকে। গিয়ারবক্স ঠিক না থাকলে শক্তিশালী ইঞ্জিনও ভালো পারফরম করতে পারে না।
৭. চড়াই ও লোড টেস্ট
বাস্তবে বাইক কতটা শক্তিশালী, তা চড়াই বা লোডে টেস্ট করেই বোঝা যায়। দুজন বসে বা চড়াই রাস্তায় বাইক কত দ্রুত পিকআপ দেয়, কম গিয়ারে টর্ক কেমন, এসবই প্রকৃত শক্তি নির্ধারণে সাহায্য করে।
৮. হাই স্পিডে স্থিতিশীলতা
শক্তিশালী বাইক হাই স্পিডে দ্রুত চললেও স্থিতিশীল থাকে। কম কম্পন, স্টেবল হ্যান্ডলিং এবং সঠিক ব্রেকিং ইঞ্জিনের শক্তিকে নিরাপদে ব্যবহার করার সুযোগ দেয়। হাই স্পিডে অস্থির বাইক কখনো শক্তিশালী ধরা যায় না।
৯. ব্রেকিং ও চ্যাসিস
শক্তিশালী ইঞ্জিনের সঙ্গে মানানসই ব্রেকিং ও চ্যাসিস অপরিহার্য। ডুয়েল ডিস্ক ব্রেক, এবিএস এবং শক্তিশালী সাসপেনশন থাকলে বাইক শক্তিশালী হলেও নিরাপদ থাকে। ব্রেক ও চ্যাসিস না মানালে পারফরম্যান্স কমে যায়।
১০. লং রাইডে ইঞ্জিন স্থিতিশীলতা
দীর্ঘ সময় চালালে বাইক কতটা শক্তিশালী, তা বোঝা যায় ইঞ্জিন ওভারহিট হয় কি না, টপ স্পিড কমে যায় কি না, অস্বাভাবিক শব্দ হয় কি না। লং রাইডে স্থিতিশীল ইঞ্জিনই প্রকৃত শক্তিশালী বাইকের পরিচয় দেয়।
আরও পড়ুন
বৃষ্টিতে বাইকের সাইলেন্সারে পানি ঢুকলে কী করবেন?
বাইকের ‘এবিএস সিস্টেম’ আসলে কী জানেন?
সূত্র: অটোকার ইন্ডিয়া, বাইক অ্যাডভান্স
কেএসকে/জেআইএম