কৃষ্ণচূড়ার শহরে সোনালু-জারুলের ক্যানভাস

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:২৪ পিএম, ১০ মে ২০২৫

তানজিদ শুভ্র

ইট-পাথর আর কংক্রিটের ভিড়ে যানজট আর কোলাহল যেন নিত্যসঙ্গী এই শহরে। গ্রীষ্মের তীব্র রোদ আর খরতাপ যেন জীবনের গতি খানিকটা মন্থর করে দেয়। তবে প্রকৃতি যেন থেমে থাকে না। এই তাপদাহের মধ্যেই পথিক বা পর্যটকের জন্য খুলে দেয় রঙিন জানালা। গ্রীষ্ম এলেই শহর জেগে ওঠে আগুনরঙা কৃষ্ণচূড়া, ঝুলন্ত সোনালু আর বেগুনি জারুলে। প্রতি বছর যেন একেকটি রাস্তা, একেকটি চত্বর হয়ে ওঠে জীবন্ত ক্যানভাস; যার শিল্পী এই প্রকৃতি।

গ্রীষ্মের নির্দয় খরতাপে যখন শহর হাঁসফাঁস করে; তখনই যেন হঠাৎ আবির্ভাব ঘটে কৃষ্ণচূড়ার। চৈত্রের শেষ ও বৈশাখের শুরুতে চারপাশ রাঙিয়ে তোলে আগুনরাঙা এই ফুল। সবুজ পাতার মাঝে লাল ফুলের মিশেল যেন এক টুকরো বাংলাদেশের রূপ পায়। ধুলো-বালিতে ঝাপসা রঙিন শহরের কোলাহলে কৃষ্ণচূড়ার লাল যেন এক তীব্র উপস্থিতি। শহরের ব্যস্ত পথে রক্তিম কৃষ্ণচূড়া ঝরে পড়ে রঙিন করে দেয় পথ। রঙিন কৃষ্ণচূড়া প্রেমিকের চোখে প্রেমের অনুরাগ, কবির কলমে রক্ত জাগানিয়া বিপ্লব। কৃষ্ণচূড়ার সঙ্গে হুবহু মেলে আরেক ফুল; রাধাচূড়া। কৃষ্ণচূড়ার মতোই এই গ্রীষ্মে রং ছড়ায়।

আবার ঝুলে পড়ে ছোট ছোট হলুদ ফুল; সোনালু। এ ফুল শহরের কোলাহলের মধ্যে তৈরি করে আলোকময় নীরবতা। যেন দিনের বেলা তারই আলোয় ঝলমল করে শহর। বৈশাখের শুরুতেই ফুলে ফুলে ভরে যায় গাছ। একেকটি গাছ যেন সোনালি ঝাড়বাতির মতো ঝকমক করে। বাতাসে দোল খায়, রোদের আলোতে চকচক করে আর চোখে-মনে একরাশ শান্তি ছড়িয়ে দেয়।

সোনালুর হলুদ রঙে নেই তীব্রতা, নেই অহংকার। আছে শুধু নরম আলো, মায়ার মতো শান্ত একটা রং। বিকেলে অফিস ফেরত মানুষগুলো যখন ক্লান্ত হয়ে ফেরেন, সোনালু ফুলের নিচ দিয়ে হাঁটার সময় গাছটি তাদের ক্লান্তি খানিকটা ভুলিয়ে দিচ্ছে। সোনালু কেবল ফুল নয়, এটি বৈশাখের প্রতীকও বটে। নতুন বছর, নতুন স্বপ্ন, নতুন প্রাণের আহ্বানে যখন বাংলাদেশ জেগে ওঠে; তখন সোনালু তার হলুদ রঙে সেই আনন্দকে আরও বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে।

গ্রীষ্মের আরেক অনবদ্য রং জারুল। তার রং বেগুনি থেকে হালকা গোলাপি আর গঠন থোকা থোকা ফুলের গুচ্ছ। বাংলার চেরি বলা হয় জারুল ফুলকে। এই শহরে জারুল গাছ যেন নিজেই এক রাজসিক চিহ্ন। স্নিগ্ধ কিন্তু দীপ্ত, উজ্জ্বল কিন্তু মার্জিত। জারুল যেন শহরের নারীত্বের প্রতীক, যেখানে রং ও রুচির চমৎকার সহাবস্থান। বেগুনি রঙের ছোট্ট জারুল ফুল পাতার সঙ্গে মিশে গাছকে করে তোলে রাজকীয়। স্নিগ্ধ পরশের জারুল ফুল যখন কোনো জলাশয়ের পানিতে পড়ে ভাসতে থাকে; তখন যেন অনন্য এক অনুভূতি সৃষ্টি করে।

কৃষ্ণচূড়া, সোনালু ও জারুল নিজেদের রঙে শহরকে সাজিয়ে তোলে উৎসবের রঙে। রং ছড়ানো ফুলগুলো মানুষের মনোজগতে রং, প্রেম, নান্দনিকতা আর কবিতার ছোঁয়া দিয়ে যায়। গ্রীষ্মের শহরে প্রকৃতি সাজে এক দারুণ ক্যানভাসে। এই ক্যানভাসে ফুটে ওঠা প্রতিটি গল্প বেঁচে থাকার এক মৃদু প্রেরণা। আর সেইসব প্রেরণা নিয়ে আমরা হাঁটি কৃষ্ণচূড়া, সোনালু আর জারুলের শহরে। যেখানে প্রতিটি ফুলের পাঁপড়িতে লেখা থাকে জীবনের এক নতুন অধ্যায়।

লেখক: শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।