শিমুলিয়া ঘাটে টিম মাল্টিমিডিয়ার একরাত

মিরাজ উদ্দিন
ভ্রমণ যদি হয় নদী কিংবা সমুদ্রের কিনারায়, আর রাতের জোনাকির টিপটিপ আলোতে তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই। শুনবো সেদিন পদ্মার মাওয়া শিমুলিয়া ঘাটে টিম মাল্টিমিডিয়া পরিবার একরাতের গল্প।
মোবাইল সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশন (এমআরএ) পুর্নগঠনের পর সবাই একসঙ্গে ভ্রমণে যাবে, এমনটিই কথা ছিল। তবে সময় সংকীর্ণতার কারণে দিনক্ষন নির্ধারেণে দেরি হচ্ছিল।
আরও পড়ুন: সঙ্গীকে নিয়ে দুবাই ভ্রমণে যে ভুল করলে হতে পারে জেল
অবশেষে হঠাৎ করে সকালে হোয়াটসঅ্যাপ মামুন সোহাগ ভাইয়ের মেসেজ এলো। তিনি জানান, সবাই মিলে মাওয়া ট্রিপে যাওয়া হবে রাতে। জনপ্রতি চাঁদা ৫০০ টাকা করে। গাড়ি মগবাজার থেকে রাত ১০টায় ছেড়ে যাবে।
ট্রিপের উদ্দেশ্যে আমি চলে গেলাম কারওয়ান বাজার। সেখারেন গিয়ে দেখলাম এমআরএ’র সাধারণ সম্পাদক আলতাফ ভাই সবাইকে চা-কফি খাওয়াচ্ছেন। আমাকে কিছু খেতে বললেও খেলাম না।
এরপর নির্ধারিত গন্তব্যে গাড়ি আসলে আমরা কয়েকজন উঠলাম। মগবাজারে গাড়ি পৌঁছাতেই আকরাম ভাইসহ অনেকেই হৈ-হুল্লোড় করে গড়িতে ওঠলেন। গাড়ি রওনা হয় মাওয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে।
আরও পড়ুন: লাদাখ ভ্রমণে কখন যাবেন ও কী দেখবেন?
আলতাফ ভাই গণনা করে দেখলেন সবাই এসেছেন কি না। হঠাৎ গাড়ির ভেতর থেকে একজন গান গেয়ে উঠলেন। তারপর থেকে শুরু হলো সবার গান গাওয়ার প্রতিযোগিতা। আমিও আর বসে থাকতে পারলাম না, সবার সঙ্গে গাওয়া শুরু করলাম। কোন ফাঁকে যে পৌঁছে গেলাম মাওয়া ঘাটে তার আন্দাজও হলো না। সবাই গাড়ি থেকে নামলেন।
আকরাম ভাই সবাইকে দল বেঁধে থাকার পরামর্শ দিলেন। এরপর আমরা একদল চলে গেলাম পদ্মার কিনারায়। একটি ফেরিতে ওঠে সেখানেও আবারও গান গাইলাম। ঘণ্টাখানেক সেখানে আড্ডা দেওয়ার পর সবাইকে হোটেলের দিকে ডাক দিলেন আকরাম ভাই।
পেটে তখন প্রচুর ক্ষুধা। মনে করছিলাম খাবার খাওয়ার জন্য ডাকছে,কিন্তু তা না এখন পদ্মার ইলিশ মাছ কিনবে।আকরাম ভাইয়ের মনে হয় হোটেল পূর্বের পরিচিত ছিল। হোটেলের নাম রুপসী বাংলা। বড় তাজা তাজা ১৪ টা ইলিশ নিয়ে নিলেন।বড় বড় মাছ দেখে ছবি না তুলে পরলাম না।
আরও পড়ুন: পাহাড়জুড়ে বিশাল রেস্টুরেন্ট, একসঙ্গে খেতে পারেন ৫৮০০ জন
এবার হোটেলের ভেতরে ঢুকলাম। সামনের বারান্দায় জাকারিয়া ভাই ও ঢাকা পোস্টের আখতারুজ্জামান ভাই বসে বসে কথা বলছিলেন। এরপর ফ্রেশ হয়ে এসি রুমে গেলাম দেখি যায়যায়দিনের ইনচার্জ সাইফুল ভাই বসে আছেন। এরপর বাইরে বের হলাম। বন্ধু হামিদের সঙ্গে এবার একটি কো্ডি ড্রিংকস কিনে পান করলাম।
কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করার পর আকরাম ভাই ফোন দিয়ে জানালেন, খাবার রেডি। এ কথা শুনে দৌ৭ড়ে পৌঁছালাম, কারণ তখন পেটে অনেক ক্ষুধা। তারপর হাত-মুখ ধুয়ে পেছনের একটি টেবিলে বসালাম। গরম ভাতের সঙ্গে ভর্তা পরিবেশন করা হলো। এরপর দেওয়া হলো দুই পিস করে ইলিশ মাছ ভাজা ও সঙ্গে ডাল।
এরই মধ্যে আকরাম ভাই মাছের মাথা নিয়ে হাজির। কার কার লাগবে এই স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন। তবে আমার লাগবে না, কিন্তু বন্ধু হামিদ একটি নিয়ে নিলো। খাবার ঠিকঠাক আছে কি না জানতে চাইলে আলতাফ ভাই, তিনি ঘুরে ঘুরে সবার টেবিল পরিদর্শন করছেন। খাবারের ফাঁকে ফাঁকে জাকারিয়া ভাই, আলতাফ ভাই ও আকরাম ভাই খাবারের কয়েকটি ছবি তুললেন।
আরও পড়ুন: হেঁটে যে রাস্তা আজও শেষ করতে পারেনি কেউ
খাবার শেষে একেক করে বাইরে বের হয়ে হোটেলের সামনে একত্রিত হলেন সবাই। এরপর হোটেলের সামনে একটি ফটোসেশান হলো। এবার সবাই মিলে চললাম পদ্মার কিনারায়। আবারও শুরু হলো সবার গান গাওয়ার প্রতিযোগিতা। এই ফাঁকে আমি কয়েকজন সিনিয়রের সঙ্গে স্মৃতি রক্ষায় কয়েকটি ছবি তুলে নিলাম।
আনন্দঘন সময় কেটে গেল মুহূর্তেই। তখন ভোর ৪টা, আকরাম ভাই সবাইকে ডেকে গাড়িতে ওঠালেন। আমি বাসের মাঝখানের সিটে বসে ঘুম দিলাম।
বাবু বাজার আসার আগেই সানমুন ভাই ডেকে বললেন, মিরাজ তুমি নেমে যাও। ঘুম ভাঙতেই দেখি ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। টিম মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে একরাতে মাওয়ার ঘাটের স্মৃতি আজীবন ভ্রমণের পাতায় থেকে যাবে।
লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী
জেএমএস/এমএস