নারীর ক্ষমতায়নই নারী নির্যাতনে বাড়িয়েছে


প্রকাশিত: ০৮:১৪ পিএম, ২৪ মে ২০১৭

নারীর ক্ষমতায়নকে নিজেদের ক্ষমতাহীনতা বলে মনে করছে বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের পুরুষ। আর সেই হীনমন্যতা থেকে তারা নারীর উপর সহিংস আচরণ করছে। এতে করে নারীদের উচ্চশিক্ষা, গতিশীলতা, কর্মসংস্থানের সুযোগ বহুগুণে বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও নারী নির্যাতনের হার এখনও অনেক বেশি।

আইসিডিডিআরবি এবং সহযোগী কয়েকটির সংস্থা পরিচালিত একটি গুণগত গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া গেছে। বুধবার আইসিডিডিআরবি মিলনায়তনে এ গবেষণা প্রতিবেদন উত্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ড. রুচিরা তাবাসসুম নভেদ।

তিনি বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা মোকাবেলায় গৃহীত বিভিন্ন নীতি ও আইনসমূহের সম্ভাব্য প্রভাবগুলো সতর্কতার সঙ্গে মূল্যায়ন করা  উচিত। পরিণামে নারীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন কোনো প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধ করতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

গবেষণাতে দেখা যায়, পুরুষরা দৃঢ়ভাবে মনে করছে যে, দেশের উন্নয়ন-নীতি ও আইন-কানুন তাদেরকে উপেক্ষা করে নারীদের ক্ষমতায়নের প্রসার করছে। এই গবেষণাটি স্ত্রী নির্যাতন সংঘটনের ক্ষেত্রে ব্যক্তি, পরিবার এবং সামাজিক পর্যায়ে বিরাজমান জটিল এবং বহুমুখী কারণগুলো তুলে ধরেছে।

শৈশবে নারী নির্যাতনের প্রত্যক্ষ করা এবং পরিবারিক ও সামাজিক সহিংসতার মধ্যে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা একজন পুরুষকে নির্যাতনকারী হিসেবে তৈরিতে ভূমিকা রাখে। সামাজিক পর্যায়ে, স্ত্রী নির্যাতন প্রজন্মান্তরে লালিত ধ্যান-ধারণা দ্বারা পরিচালিত হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশের কাছে যাওয়ার অধিকার এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা লাভের পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে বেশিরভাগ নারী জানেন না। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার পরিবার, সীমাহীন দুর্নীতি ও আমলাতন্ত্র এবং আর্থিক প্রতিবন্ধকতা (পরিবহন খরচসহ) দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়।

গবেষণা বলছে, ব্যক্তিগত ব্যাপার হিসেবে দেখার কারণে এই ধরনের নির্যাতন সম্পর্কে নারীরা কম অভিযোগ করেন। অন্যদিকে, সামাজিক ধ্যান-ধারণা যেহেতু স্ত্রী নির্যাতনকে সমর্থন করে সেহেতু নির্যাতনকারীদের দোষী সাব্যস্ত হবার সম্ভাবনা অনেক কম।

গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত গবেষণাটি পরিচালিত হয়। ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের পাঁচটি গ্রাম থেকে ৪০টি প্রধান তথ্যপ্রদানকারীর সাক্ষাৎকার, ১১টি দলীয় আলোচনা এবং ২৩টি নিবিড় সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও ৪টি পরিবারের তিন প্রজন্মের নারী এবং ৩টি পরিবারের তিন প্রজন্মের পুরুষের সাক্ষাৎকারও নেয়া হয়।

গবেষণাটি ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (ওডিআই), ইউকে এর অর্থায়নে এবং সমন্বয়ে পরিচালিত হয়েছিল। এই গবেষণায় সহযোগী অংশীদার হিসেবে ভূমিকা রেখেছে আমেরিকার এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়।

ব্র্যাকের ফারহানা হাফিজ, একাত্তর টিভির মোজাম্মেল হক বাবু, নিজেরা করি-র খুশি কবির, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের শাহীন নাম এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল-র সৌম্য গুহ প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। সহযোগী সংস্থা এবং নারীদের প্রতি নির্যাতন হ্রাসে কাজ করছে এনজিওর প্রতিনিধিরা এই সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।

জেপি/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।