অসিত বসুর মাশরুম চাষ, মাসে বিক্রি ১০০ কেজি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নড়াইল
প্রকাশিত: ১২:৪০ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
প্রতি মাসে বিক্রি হয় ১০০ কেজি মাশরুম, ছবি: জাগো নিউজ

নড়াইলে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে মাশরুম চাষ। সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামের কৃষক অসিত বসু মাশরুম চাষ শুরু করে সফল হয়েছেন। প্রথমে মাত্র ৫০টি স্পন দিয়ে শুরু করলেও এখন তার খামারে আছে ৭০০ স্পন। ওয়েস্টার জাতের মাশরুম থেকে প্রতিদিন পান ৪-৫ কেজি ফলন। প্রতি মাসে বিক্রি হয় ১০০ কেজি। এতে আয় হচ্ছে ২৫-৩০ হাজার টাকা।

অসিত বসু মাশরুম বিক্রি করছেন অনলাইন ও অফলাইনে। তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের ঘরের এক কোণে শুরু করেন মাশরুম চাষ। খামারের নাম দিয়েছেন অসিত মাশরুম পল্লী সেন্টার। খামারে পলিথিন মোড়ানো প্যাকেট থেকে যখন সাদা সাদা মাশরুম মাথা তোলে; তখনই বোঝা যায় পরিশ্রম বিফলে যায়নি।

অসিত বসুর মাশরুম চাষ, মাসে বিক্রি ১০০ কেজি

অসিতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আধাপাকা টিনের ঘরে পলিথিন মোড়ানো প্যাকেট থেকে বেরিয়ে এসেছে সাদা মাশরুম। পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছিলেন তিনি। খামারের কাজে স্ত্রী ও ছেলে সাহায্য করে থাকেন।

অসিত বসু বলেন, ‘আমি কৃষক পরিবারের ছেলে। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ঢাকায় ১০ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। পরে কৃষি অফিস থেকে চাষের উপকরণ, একটি ঘর, এমনকি মাশরুম দিয়ে চপ তৈরি করে সেগুলো বাজারে বিক্রির জন্য ভ্যান গাড়ি দিয়েছেন। এক মাসের তারুণ্যের মেলায় ১২ থেকে সাড়ে ১২ মণ মাশরুমের চপ বিক্রি করেছি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। ১ থেকে দেড় লাখ টাকা আয় হয়েছে আমার।’

অসিত বসুর মাশরুম চাষ, মাসে বিক্রি ১০০ কেজি

আরও পড়ুন
আনারকলি ফল চাষে সফল ঝিনাইদহের স্টালিন
চারপাশে উঁকি মারছে দীপ্ত লুচি, চেনেন কি?

অসিতের সাফল্যে উৎসাহী হচ্ছেন অন্যরাও। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় ওই এলাকায় আরও ৩০ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মাশরুম চাষে আগ্রহী হয়ে কাজ করছেন। স্থানীয় অনেকেই প্রতিদিন খামারে গিয়ে শিখছেন কীভাবে মাশরুম চাষ করতে হয়। এখান থেকে মাশরুম চাষ শিখে অল্প সময়ের মধ্যেই তারা চাষ শুরু করবেন। খড়কুটো, কাঠের গুঁড়া, গমের ভুসি, ক্যালসিয়াম চুন ও পানি মিশিয়ে তৈরি করেন মাশরুম চাষের উপযোগী পরিবেশ। তারপর জীবাণুমুক্ত করে রাখা হয় ল্যাবে। ২৮ দিন পর প্রস্তুত হয় মাদার টিস্যু। সেখান থেকেই জন্ম নেয় এ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মাশরুম।

নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জমান বলেন, ‘মাশরুম চাষ সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা সেটা তিনি ট্রেনিংয়ে পেয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী তিনি মাশরুম চাষ শুরু করেছেন। এখান থেকে যে মাশরুম উৎপাদন করছেন। উৎপাদিত মাশরুম তিনি বিভিন্ন শ্রেণির ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। তার দেখাদেখি ওই এলাকার অনেক কৃষক মাশরুম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।’

অসিত বসুর মাশরুম চাষ, মাসে বিক্রি ১০০ কেজি

তিনি বলেন, ‘কম খরচে এবং কম ব্যয়ে বাড়ির আশেপাশে অব্যবহৃত জমিতে মাশরুম চাষ করে তারা উপকৃত হতে পারেন। তার সঙ্গে আরও ৩০ জন ছোট উদ্যোক্তা আছেন। তারা দু’দিনের ট্রেনিং নিয়েছেন। একসঙ্গে কাজ করলে এলাকাটি মাশরুম পল্লি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাদের সব সময় কারিগরি সহায়তা দিচ্ছি। মাশরুম একটি পুষ্টিকর ও সুপার ফুড। যা বিশ্বে বহুলভাবে পরিচিত। আমরা চাই, মাশরুমের পুষ্টিকে কাজে লাগিয়ে পারিবারিক পুষ্টি উন্নয়নে সফলতা আনতে।’

হাফিজুল নিলু/এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।