কেঁচো সারে ভাগ্য বদল চুয়াডাঙ্গার আসাবুল হকের
চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার আলোকদিয়া ইউনিয়নের পীতম্বরপুর গ্রামে আসাবুল হকের ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরির প্রকল্প। এ জৈব সারের মান ভালো এবং চাহিদা থাকলেও যোগ্য মূল্য না পাওয়ায় হুমকির মুখে এ প্রকল্প। আসাবুলের প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স না থাকায় প্যাকেটজাত করে বাজারজাত করতে পারছেন না। দেশের অনেক স্বনামধন্য সার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান তার কাছ থেকে কম মূল্যে কিনে তা বেশি লাভে সারাদেশে বিক্রি করছে।
ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারে ভাগ্য বদলে গেছে আসাবুল হকের। অনেকটা শূন্য থেকে শুরু করে এখন পুঁজি কোটি টাকার বেশি। নিজের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি কর্মসংস্থান হয়েছে শতাধিক মানুষের। একই সঙ্গে কৃষি জমির স্বাস্থ্য সুরক্ষাও হচ্ছে। তিনি আগ্রহী বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে উৎসাহিত করছেন।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলোকদিয়া ইউনিয়নের পীতম্বরপুর গ্রামের আবু বক্কর ও লতিফুন নেছার বড় ছেলে আসাবুল হক। এক সময় চা-দোকানি ছিলেন। স্ত্রী শাহানাজ পারভীন, চার ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সংসার। পরিবারের সবাইকে নিয়ে অভাব-অনটনে দিন কাটতো। ভাগ্য বদলের আশায় শুরু করেন গাড়ল পালন। এতে কিছুটা স্বচ্ছলতা আসে। তার মতো নিম্ন আয়ের মানুষ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। সেই থেকে পেছনে তাকাতে হয়নি।
একটি বাড়ি একটি খামার কুষ্টিয়া থেকে ২০১৪ সালে ৭ দিনের প্রশিক্ষণ নেন আসাবুল হক। প্রশিক্ষণ শেষে ২০১৫ সালে ৭ হাজার টাকা ঋণ তুলে ৫টি রিং কিনে বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারের প্রকল্প শুরু করেন। আসাবুল বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রমে ভাগ্য বদলাতে শুরু করেছে। সঙ্গে শুরু হয় দরিদ্র নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের ৭টি স্থানে শুরু করেছি উৎপাদন। সাথে আছে জৈব সার, রেডিমিক্স সয়েল, কোকোডাস্ট, হাড়ের কুচি, শিঙকুচি, নিম খৈলসহ নানা উপকরণ।’
আরও পড়ুন
• রঙিন ফুলকপি চাষে স্বপ্ন দেখছেন কৃষক
• ১ একর ৬০ শতক জমির টমেটো নষ্ট হলো
তিনি বলেন, ‘দেশের নামকরা অনেক প্রতিষ্ঠান আমার কাছ থেকে কেঁচো সার কিনে প্যাকেটে বাজারজাত করে লাভবান হচ্ছে। আজ পর্যন্ত সরকারি কোনো সহযোগিতা পাইনি। ২০১৯ সাল থেকে বহু চেষ্টা করেও প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স করতে পারিনি। লাইসেন্স পেলে এ কেঁচো সার দেশব্যাপী প্রসার লাভ করবে। এতে দেশের কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবো।’
আসাবুল হকের ছেলে ইয়াসিন বলেন, ‘আমাদের ভার্মি কম্পোস্ট প্রজেক্টে কাজ করছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। বর্তমানে আমাদের ‘কৃষি খামার’ নামের ভার্মি কম্পোস্টের চাহিদা দেশব্যাপী। অনলাইন ও অফলাইনে চলছে বিক্রি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার উদ্যোক্তা আসাবুল ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করছেন। আমরা তাকে নানাভাবে পরামর্শ দিচ্ছি। তার লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য নমুনা সংগ্রহ করে যশোরে পাঠিয়েছিলাম। কিছু সমস্যার কারণে ফলাফল ভালো আসেনি। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য যা যা করণীয়, সেই পরামর্শ দিয়েছি। আসাবুলের ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার যেন বেশি হয়; সেজন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি। এই সার উৎপাদনে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।’
তিনি বলেন, ‘তার যদি প্রয়োজন হয়। আমরা বিভিন্ন ব্যাংকে কথা বলে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। আমি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছি এবং তার এই ভার্মি কম্পোস্ট সার যেন ব্যবহার হয়। সেজন্য কৃষক ভাইদের বিভিন্ন প্রদর্শনীসহ বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা করবো।’
হুসাইন মালিক/এসইউ/জেআইএম