টমেটো চাষে দ্বিগুণ লাভবান হচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ চাষিরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ০১:৪৩ পিএম, ০৫ জানুয়ারি ২০২০

মৌলভীবাজারে টমেটো চাষে লাভবান হচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ চাষিরা। যারা অন্যের জমি ইজারা নিয়ে টমেটো চাষ করেন। এতে ফলন ভালো হয়েছে, দামও ভালো। জেলায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হলেও সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে সদর এবং কমলগঞ্জ উপজেলায়।

কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখোলা চা-বাগান এলাকায় কৃষকরা জমি ইজারা নিয়ে টমেটো চাষ করেছেন। এদের বাড়ি চাষের জায়গা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে। তারা বিভিন্ন স্থানে মালিকদের কাছ থেকে জমি ইজারা নিয়ে টমেটো চাষ করেন। ইতোমধ্যে পাকা টমেটো বিক্রি চলছে। কিছু টমেটোয় হলুদ ও লালচে রং ধরছে।

পাত্রখোলা ক্লাব এলাকায় উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ৩০ জন চাষি আলাদাভাবে প্রায় ৯০ বিঘা জমি এক বছরের জন্য লিজ নিয়ে টমেটো চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমি ৫-৭ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন। পার্শ্ববর্তী আদমপুর ইউনিয়নের মধ্যভাগের কৃষক মো. তওহীদ দুই বছর ধরে এখানে টমেটো চাষ করছেন। এবার তিনি ৫ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেন। এক বিঘা জমিতে শ্রমিক, বাঁশ, চারা, সার ও কীটনাশক বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা। একটি চারার দাম ৮-১০ টাকা। তার প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ৬ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। ভাদ্র মাস থেকে টমেটো বিক্রি শুরু হয়েছে। চৈত্র মাস পর্যন্ত টমেটো বিক্রি করতে পারবেন। শুরুতে পাইকারি ৭০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি করেছেন। এখন ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন।

টমেটো চাষি মো. শিমুল বলেন, ‘আগে ধান চাষ করতাম। খুব একটা লাভ হতো না। এখন টমেটো চাষ করে লাভবান হচ্ছি। আমি ৮ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছি। খরচ হয়েছে ৯ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে ১১ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছি। আরও ৬-৭ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব।

চাষিরা জানান, তাদের জমিতে ১২০-১৩০ জন শ্রমিক কাজ করেন। জমি থেকেই প্রায় দুই কোটি টাকার টমেটো বিক্রি হবে। তবে এখানে কৃষি বিভাগের লোকজন না আসার অভিযোগ তাদের। শুধু ওষুধ কোম্পানির লোকজনই আসেন।

কাটাবিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ধলাই নদের পাড় ঘেঁষে ১২ জন কৃষক টমেটো চাষ করেছেন। কাটাবিল এলাকার টমেটো চাষি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এবার টমেটোর বাজার ভালো। তবে আমাদের সমস্যা হচ্ছে, টমেটোর গাছ মরে যায়। গাছ ঢলে পড়ার কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। কৃষি বিভাগের কোনো পরামর্শ পাই না। ওষুধ কোম্পানির লোকজন ওষুধ বিক্রির জন্য বোঝাতে আসেন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, এ বছর জেলায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আগাম বারি-৪ ও বারি-৮, ইকোপ ও রাজা জাতীয় টমেটো চাষ হয়েছে। এরমধ্যে আছে কলম করা চারার গ্রীষ্মকালীন টমেটো। প্রতি হেক্টরে প্রায় ২২ টন টমেটো উৎপাদিত হয়েছে। কলম করা চারা বিক্রি করেও অনেক চাষি লাভবান হয়েছেন। একজন কৃষক পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, ‘শুরুতে ১৫০ টাকা খুচরা বিক্রি হয়েছে। এখনো ৫০-৬০ টাকা টমেটোর কেজি। চা-বাগান এলাকায় আমাদের লোকজন কম যায়। কৃষকদেরও হয়তো যোগাযোগ কম। কৃষি উপ-সহকারীদের না পাওয়ার কথা নয়। সমস্যার কথা বললে কেন পরামর্শ পাবে না? কৃষকদের সমস্যার কথা বলতে হবে।’

রিপন দে/এসইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।