মৌচাষ করে আপেলের আয় ৪ লাখ টাকা

সাজেদুর আবেদীন শান্ত
সাজেদুর আবেদীন শান্ত সাজেদুর আবেদীন শান্ত , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৪:১১ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০২১

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার গুমানীগঞ্জের পারগয়ড়া গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে আপেল মাহমুদ। তিনি দীর্ঘ আঠারো বছর ধরে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মৌচাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। দুই ভাই-বোনের মধ্যে আপেল সবার বড়। ছোট বোন পড়াশোনা করেন। আপেল আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে বেশিদূর পড়াশোনা করতে পারেননি। ২০০৩ সালে মাধ্যমিক পাস করেই ইতি টানেন পড়াশোনার। মাধ্যমিকের পরপরই পাশের গ্রামের এক বড় ভাইয়ের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মৌচাষ দেখে আগ্রহী হন। এরপর পঞ্চগড়ের কাজি অ্যান্ড কাজি এগ্রো ফার্ম থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে মৌমাছির দুটি বাক্স কিনে চাষ শুরু করেন।

আপেল মাহমুদ বলেন, ‘অভাবের সংসারে বেশি পড়ালেখা করতে পারিনি। এদিকে পড়ালেখা ছেড়ে বেকার সময় কাটাচ্ছিলাম। পড়াশোনা তেমন নেই আর চাকরির বাজারও ভালো না। তাই আমার এক বড় ভাইয়ের মৌচাষ করা দেখে আমিও মৌচাষে উদ্বুদ্ধ হই এবং পঞ্চগড় থেকে দুইটা মৌ বক্স কিনে চাষ শুরু করি। মৌচাষ যখন শুরু করি; তখন এ সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা ছিল না। এরপর বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) থেকে মৌচাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিই এবং আমার মৌমাছির খামার বড় করি।’

jagonews24

আপেলের মৌমাছির খামারের নাম ‘মাহমুদ মৌ খামার’ ও মধু প্ল্যান্টের নাম ‘পুষ্টি ন্যাচারাল’। বর্তমানে আপেলের ভ্রাম্যমাণ মৌমাছির খামারে প্রায় ১০০টিরও বেশি মৌ বক্স রয়েছে। এর একেকটি বক্স থেকে গড়ে ৩-৪ কেজি করে মধু পাওয়া যায়। একেকটি মৌ বক্সের ভেতর কয়েকটি করে মৌমাছি থাকার ফ্রেম বা চাক আছে। এদের একেকটি ফ্রেম বা চাককে মৌ কলোনী বলে। একটি মৌ বক্সের ভেতর প্রায় ৫-৭টি মৌ কলোনী থাকে। আর এ মৌ কলোনীর ভেতর একটি করে রানী মৌমাছি থাকে। সাধারণত ফ্রেমে শ্রমিক মৌমাছিরা বাহিরে গিয়ে ফুল থেকে মধু আহরণ করে এসব কলোনীতে আসে এবং মধু জমা করে। এ মধু জমা হয়ে গেলে এগুলো নিষ্কাশন যন্ত্রের সাহায্যে সংগ্রহ করা হয়। পরে তা বাজারজাত করার জন্য প্রস্তুত করা হয়।

আপেল মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা সাধারণত কয়েক মাস সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করি। এরপর আমরা আরেকটি সরিষা ক্ষেতে যা আরও দেরিতে বোনা হয়, সেখান থেকে মধু সংগ্রহ করতে যাবো। এ ছাড়া আমরা ধনিয়া ও কালোজিরা থেকে মধু সংগ্রহ করবো। সেখান থেকে মধু সংগ্রহ হলে লিচু ফুলের মাঠে মধু সংগ্রহ করতে যাবো। এরপর সর্বশেষ কুমড়ো ফুলের মাঠ থেকে মধু সংগ্রহ করবো। এরপর একমাস মৌমাছিগুলো অবসর সময় কাটায়। এ সময়ে আমাদের আলাদা খরচ হয়। মৌমাছিগুলোকে তখন চিনি জাতীয় খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয়।’

jagonews24

আপেল মাহমুদের মৌমাছির খামারে বর্তমানে পাঁচজন কর্মচারী আছেন। তিনি তার কাজের চাপের ওপর কর্মচারী হ্রাস বা বৃদ্ধি করেন। আপেল যেখানে কাজে যান; সেখানেই কর্মচারীদের সাথে নিয়ে যান। তিনি কর্মচারীদের কাজের ভিত্তিতে মাসিক ৫-৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দেন।

মিরাজ নামের একজন আপেলের খামারে কাজ করেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আপেল ভাই খুব ভালো মানুষ। আমি আপেল ভাইয়ের খামারে নিয়মিত কাজ করি। ভাই আমাদের মাস শেষে নিয়মিত বেতন দেন। আমি আপেল ভাইয়ের খামারের সাফল্য কামনা করছি।’

jagonews24

আপেল মাহমুদের খামারে সব মিলিয়ে প্রায় ৫ লাখ টাকার মৌচাষের সরঞ্জাম আছে। এ থেকে আপেল প্রায় প্রতি মৌসুমে সব খরচ বাদ দিয়ে ৩-৪ লাখ টাকা আয় করেন। তিনি সরিষা ফুলের মধু কেজিপ্রতি ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি করেন। এ মধু তারা খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করেন। এ ছাড়াও কিছু কোম্পানি তার কাছ থেকে এ মধু সংগ্রহ করেন।

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।