নীলফামারীতে আ.লীগের প্রার্থী নিয়ে দ্বন্দ্ব, বিএনপির সঙ্কট


প্রকাশিত: ০৫:৩৪ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

নীলফামারী জেলার ৫৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রত্যাশীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে, বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে প্রার্থী নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে তারা। জাপা একক প্রার্থীর চেষ্টা করলেও বিভিন্ন ইউনিয়নে জামায়াত সমর্থিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

দলীয়ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের প্রতিটি ইউনিয়নের প্রার্থীদের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে চেয়ারম্যান প্রার্থীর চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জামায়াত ডিমলার ৬টি, জলঢাকার ১০টি, কিশোরগঞ্জের ৫টি, সৈয়দপুরের ৩টি, নীলফামারীর সদরের ৬টি, ডোমারের ৫টিসহ ৩৫টি ইউনিয়নে প্রার্থী নিশ্চিত করেছে। জাপা শুধু ডিমলার ৮টি চূড়ান্ত করলেও অন্য ইউনিয়নের প্রার্থী চূড়ান্তের কাজ করছে।

নীলফামারীর ডিমলার কোন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী না থাকায় ২টি ইউনিয়নে তৃণমূলের ভোট ও ১টিতে তৃণমূলের পরাজিত প্রার্থীর ভোট ছিনতাই করার ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা দাবি করেন, তৃণমূলের ভোটে চেয়ারম্যান প্রার্থী চূড়ান্ত করা হলে টাকার কারণে জনপ্রিয় ব্যক্তিরা বাদ পড়তে পারেন। জনেণের কাছে জনপ্রিয় নয় এমন ব্যক্তিরা টাকার কারণে তৃণমূলের ভোট তাদের পক্ষে নিচ্ছেন।

খালিশা চাপানি ইউনিয়নের তৃণমূলের কাছে পরাজিত আ.লীগ চেয়ারম্যান প্রাথী আবুল কাশেম অভিযোগ করেন, বিজয়ী আতাউর রহমান সরকার ২ লাখ টাকা নিয়ে ভোট কিনে বিজয়ী হয়েছে। অপরদিকে খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের সভাপতি হামিদুল ইসলাম ও সম্পাদক জিকরুল ইসলাম টাকার কাছে পরাজিত হয়েছেন মর্মে জাগো নিউজকে অভিযোগ করেন। তারা বলেন, খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের যুবলীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমকে আ.লীগের রাজনৈতিক কোন কার্যক্রমে মাঠে পাওয়া যায়নি। গত শুক্রবার তৃণমূলের ভোটে উক্ত ইউনিয়নের সভাপতি হামিদুল ইসলাম ১৬ ও সম্পাদক জিকরুল ইসলাম ১৮ ভোট পায়।

অপরদিকে যুবলীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ২৬ ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হামিদুল ইসলাম ভোট বাক্স ও ফলাফল শিট ছিনতাই করে নেন মর্মে বিজয়ী প্রাথী জাহাঙ্গীর আলমের অভিযোগ করেন। বাকী ৭টি ইউনিয়নের তৃণমূলের মতামত বাকি থাকলে অপেক্ষাকৃত জনসমর্থন কম সম্পন্ন প্রার্থীরা তৃণমূল ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন আর হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা।

নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার কেন্দ্রের নীতিমালার আলোকে প্রার্থী ও মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য সোমবার বিকালে তৃণমূলের ভোট স্থগিত করার নির্দেশ প্রদান করেন মর্মে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। আগামীকাল বুধবার বালাপাড়া ইউনিয়নের আ.লীগের নেতৃমূলের ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে না মর্মে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন।

ডিমলার ১০টি ইউনিয়নে আগামী ২৩ এপ্রিল ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৯৩ জন প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য তদবির শুরু করেছে। অপরদিকে জাপা ৮টি ও জামায়াত ৬টি ইউপিতে তাদের প্রার্থী নিশ্চিত করেছে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে এখন মাঠে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি। এমনকি ২০১১ সালের ১২জুন বিএনপির সমর্থিত ৬ জন চেয়ারম্যান বিজয়ী হলেও কেউ ধানের শীষ মার্কায় নির্বাচন করছেন না।

নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও ডিমলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব উদ্দিন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির আলোকে প্রতিটি ইউনিয়নে আ.লীগের একক প্রার্থী নিশ্চিত করা হবে। নীলফামারী আওয়ামী লীগের সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক মমতাজুল হক জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নের তালিকা উপজেলা কমিটির মাধ্যমে আসলে তা কেন্দ্রে পাঠানো হবে।

বিএনপির জেলা সম্পাদক সামচুজ্জামান জামান জাগো নিউজকে বলেন, বিএনপি প্রতিটি ইউনিয়নের একক প্রার্থী দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। প্রতিটি ইউনিয়ন কমিটির মতামতের ভিত্তিতে একক প্রার্থী নিশ্চিত করা হবে। তবে তিনি অবাধ সুষ্টু নিরপেক্ষ ভোট অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।

জাতীয় পাটির জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য জাফর ইকবাল সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, নীলফামারীর প্রতিটি ইউনিয়নে জাপা একক প্রার্থী নিশ্চিত করা লক্ষ্যে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ডিমলার ৮টি ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী নিশ্চিত করা হয়েছে। নীলফামারী সদরের ৫টি ইউনিয়নের প্রার্থী দ্রুত চূড়ান্ত হবে।   
 
জাহেদুল ইসলাম/এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।