চার মূলনীতির ওপর দাঁড়িয়ে রাবির শহীদ মিনার

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ১০:৫৩ এএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বাহাত্তরে রচিত দেশের প্রথম সংবিধান এক ঐতিহাসিক দলিল। সেই সংবিধানের চার মূলনীতি ছিল- জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। সংবিধান সংশোধনীতে চার বারের মতো এই মূলনীতির পরিবর্তন, পরিবর্ধন হয়েছে। তবে সেই চার মূলনীতির ওপর এখনো দাঁড়িয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার।

মিনারে চারটি বাহু ১৯৭২ সালের সংবিধানের চারটি মূলনীতির ইঙ্গিত বহন করে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা।

‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক’ শীর্ষক একটি প্রকাশনা থেকে জানা যায়, দেশের অন্যান্য শহীদ মিনারের গড়নের দিক থেকে আলাদা এটি। ছয় কোণা প্ল্যাটফর্মের ওপর লম্বা চারটি স্তম্ভ দিয়ে তৈরি শহীদ মিনারটি। যার নকশা করেন স্থপতি খায়রুল এনাম।

jagonews24

১৯৭২ সালের ৯ মে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ কাজ শেষ হলে ১৯৭৫ সালের ২৩ এপ্রিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এম মনসুর আলী এর উদ্বোধন করেন।

এ শহীদ মিনারে রয়েছে চারটি বাহু যা উল্লম্বভাবে উঠে গেছে উপরের দিকে। বাহু চারটি উপরের দিকে বন্ধনী দ্বারা আবদ্ধ। এর প্ল্যাটফর্মটি কৃত্রিমভাবে তৈরি মাটির টিলার ওপর অবস্থিত। ফলে বেশ কয়েকটি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় শহীদ মিনারের মূল ভিত্তিতে। শহীদ মিনারটির অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো এর ম্যুরাল চিত্র, শহীদস্মৃতি সংগ্রহশালা, উন্মুক্ত মঞ্চ, সুবিস্তৃত খোলা প্রান্তর এবং ফুলর বাগান। আর এসব কিছুর সমন্বয়েই গড়ে উঠেছে অনন্য এই শহীদ মিনার চত্বর।

এক স্নেহময়ী মা ও তার সন্তানদের অবয়ব প্রকাশ করছে এমন একটি ম্যুরাল চিত্র রয়েছে মিনারের পেছনের দিকে। অক্ষয়বট শীর্ষক ম্যুরালটি নানা বর্ণের পোড়া ইট ও পাথরের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়। ম্যুরালটি সূর্যের উপস্থিতিতে শহীদ সন্তানদের বীরত্বকে উপস্থাপন করে। এছাড়া মায়ের অঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসার বিষয়টিও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সেখানে। গঠনশৈলী এবং উপাদানের বৈচিত্র্যে অনন্য এ ম্যুরালটি নির্মাণ করেছেন শিল্পী মর্তুজা বশীর।

jagonews24

এদিকে, শহীদ মিনারের পাদদেশে যেদিক থেকে সূর্য উদয় হয় সেদিকে রয়েছে একটি শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা। এ সংগ্রহশালার ডিজাইন করেন স্থপতি মাহবুবুল হক। সংগ্রহশালায় রয়েছে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের নানা রাজনৈতিক ঘটনাবলির আলোকচিত্র, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নানা শিল্পকর্ম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের আলোকচিত্র, তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা জানান, পাকিস্তানিদের ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্নসহ অনেক কিছু। মোটকথা বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসকে ধারণ করে আছে এ সংগ্রহশালা। শুধু মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসকে ধারণ নয় তার চেতনা ছড়িয়ে দিচ্ছে সবার মাঝে।

সংগ্রহশালার কোল ঘেঁষে রয়েছে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ। এর পেছনের দেয়ালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গ্রাম বাংলার আবহমান দৃশ্য। এটি নির্মাণ করেন শিল্পী ফণীন্দ্রনাথ রায়। এ মঞ্চে মঞ্চস্থ হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান- যার মাধ্যমে ছড়িয়ে যায় বাঙালি সংস্কৃতির প্রাণের ধারা। সর্বোপরি ক্যাম্পাসে আসা দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে শহীদ মিনার চত্বর।

সালমান শাকিল/এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।