‘তার বিদায়ে আমাদের হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ০৭:২৩ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়েছেন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে মঞ্চ। ফুলের তোরা আর সজ্জিত ঘোড়ার গাড়িও রয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বেজে উঠলো ব্যান্ড পার্টির বিশেষ বাজনা। চারদিক থেকে শুরু হলো পুষ্পবৃষ্টি। এ যেন এলাহি আয়োজন।

এই আয়োজন বিয়ে কিংবা কোনো আনন্দ অনুষ্ঠানের নয়। এই আয়োজন মূলত এসএম ইসমাইল হোসেন নামে এক শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠান। দীর্ঘ ৪০ বছর শিক্ষকতা শেষে তার অবসরসংক্রান্ত বিদায় বেলাটি স্মরণীয় করে রাখতে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা তাকে জমকালো এই সংবর্ধনা দেয়।

স্থানীয় ও স্কুল সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৫ সালে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চর ভোজেশ্বর শেখপুরা কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিনাবেতনে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এসএম ইসমাইল হোসেন।

যোগদানের কিছুদিনের মধ্যেই কর্মদক্ষতা আর ভালোবাসা দিয়ে মন জয় করে নেন শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের। ১৯৯২ সালে বিদ্যালয়টি সরকারের অধিভুক্ত হলে ৫০০ টাকা বেতন পাওয়া শুরু করেন তিনি। তার চেষ্টায় টিনের ছাউনির ছোট্ট প্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে রূপ নেয় পাকা তিনতলা ভবনে। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি পুরোপুরিভাবে সরকারি হলে সরকার নির্ধারিত বেতন পাওয়া শুরু করেন।

‘তার বিদায়ে আমাদের হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে’

একটানা ৪০ বছর শিক্ষকতা করে এখন তার বয়স ৬৫ বছর। দীর্ঘদিন শিক্ষকতা শেষে মঙ্গলবার বিকেলে অবসর নিলেন তিনি।

এদিকে গ্রামবাসী আর প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তার বিদায় বেলাটিকে স্মরণীয় করতে বিশাল আয়োজনের প্রস্তুতি নেন। শিক্ষাগুরুর সম্মানে সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে করে আর ফুল ছিটিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয় তাকে। এছাড়া তার হাতে তুলে দেওয়া হয় নানা পুরষ্কার।

এমন সংবর্ধনা পেয়ে শিক্ষক এসএম ইসমাইল হোসেন শিকদার আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আমাকে স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বর্তমান শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা যেভাবে বরণ করে বিদায় দিলেন আমার কাছে সত্যিই আনন্দ ও গর্বের। বিদায় লগ্নে আমার খারাপ লাগা কাজ করলেও খুব আনন্দ হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা হেলেনা আক্তার বলেন, আমি নিজে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছিলাম। আমার মেয়েও এই স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করেছে। ইসমাইল স্যার আমাদের খুব যত্নসহকারে সন্তানের মতো পড়াশোনা করিয়েছেন। আমি এখনো সময় পেলে স্যারের কাছে আসি, তার থেকে পরামর্শ নেই। তিনি সেই আগের মতোই স্নেহ করে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তিনি আজ চলে যাবেন শুনে ভীষণ খারাপ লাগছে। তিনি এই স্কুলের একটি রত্ন ছিলেন। স্যারকে সৃষ্টিকর্তা দীর্ঘজীবী করুন।

‘তার বিদায়ে আমাদের হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে’

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী জান্নাতুন ফেরদৌস বলেন, আমার শিক্ষা জীবন শুরু হয়েছে এই বিদ্যালয় স্যারের হাত ধরেই। তিনি নিজের সন্তানের মতো আমাদের বড় করেছেন। আমি এখন কলেজে পড়াশোনা করি। এই স্কুলের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। স্যারের এই বিদায়বেলায় আমার ভীষণ খারাপ লাগছে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুরুল ইসলাম গাজী বলেন, মাত্র দুই বছর হলো আমি এখানে যোগদান করেছি। স্যার কখনো সহকর্মী হিসেবে নয়, ছোট ভাইয়ের মতো সব সময় দেখে রেখেছেন। তাকে বিদায় দিতে আমাদের হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। স্যার যেন সবসময় ভালো থাকেন এটাই প্রত্যাশা করি।

অনুষ্ঠানের আয়োজক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী আলামিন বেপারী বলেন, আজকের এই দিনটি আমাদের জন্য বেদনার। কেননা আমরা আমাদের শিক্ষাগুরুকে বিদায় দিচ্ছি। যিনি দীর্ঘ ৪০ বছর আমাদের ও আমাদের সন্তানদের সুশিক্ষায় আলোকিত করেছেন। আমরা তার কাছে চীর কৃতজ্ঞ। সৃষ্টিকর্তা তাকে সুস্থ রাখুন।

বিধান মজুমদার অনি/জেডএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।