এক বছর ধরে কিশোরীর ওপর অমানবিক নির্যাতন, মামা-মামি আটক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি চাঁদপুর
প্রকাশিত: ১০:৪৬ এএম, ০৭ মার্চ ২০২৫

১৬ বছর বয়সী কিশোরী রোজিনা আক্তার। প্রায় এক বছর ধরে মামার বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছে। আর পুরো এসময়টা পরিবার থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয় রোজিনাকে। বাসায় থাকার নামে তার ওপর দিনের পর দিন চলে নির্যাতন।

সারা শরীরে জখমের চিহ্ন। থেঁতলে ফেলা হয়েছে সামনের দুই পায়ের আঙুল। হাত-পা-পিঠে কাটা দাগ ও আগুনের ছেঁকা। রোজিনার শরীরের ক্ষতচিহৃ দেখে যে কারও গা শিউরে উঠবে।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিকেলে চাঁদপুর শহরের বিষ্ণুদী মাদরাসা রোড এলাকার একটি ভবনের চারতলা থেকে স্থানীয়রা উদ্ধার করেন রোজিনাকে। পরে পুলিশ এসে অভিযুক্তদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে সেই অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা দেয় ওই কিশোরী।

এক বছর ধরে কিশোরীর ওপর অমানবিক নির্যাতন, মামা-মামি আটক

রোজিনা চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের চৌরাস্তা এলাকার আহমদ ভূইয়ার মেয়ে।

স্থানীয় যুবক মোরশেদ আলম, হেলাল ও বেলাল জানান, মাদরাসা রোডে ৪-৫ মাস ধরে ভাড়া থাকছেন রোকেয়া-রুবেল দম্পতি। তাদের দুই সন্তান। একজন প্রতিবন্ধী। মূলত তাদের দেখাশোনা ও বাড়ির কাজ করার জন্য আপন ভাগিনিকে নিয়ে আসেন রুবেল। কিন্তু রুবেল ও তার স্ত্রী মেয়েটাকে দিনের পর দিন অমানবিক নির্যাতন করে গেছেন।

তারা আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্যাতন থেকে বাঁচতে দরজা খুলে পালিয়ে যায় ওই কিশোরী। পরে স্থানীয় এক খালা তাকে দেখতে পেয়ে বাসায় নিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে এলাকার লোকজন ওই ভবনে ঢুকে তালা লাগিয়ে দেন। ওই সময় বাসায় শুধু রুবেল ছিলেন। তার স্ত্রী ছিলেন বাইরে। আমরা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে তার স্ত্রী থানায় এলে তাকেও আটক করা হয়।’

এদিকে এক বছর পর মেয়ে রোজিনার শরীরের আঘাতের চিহ্ন দেখে থানার মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন বাবা আহমদ ভূইয়া। পাশাপাশি মেয়েও কান্নায় ভেঙে পড়ে।

কিশোরীর বাবা আহমদ ভূইয়া বলেন, ‘আমার মেয়েকে আমার আপন শ্যালক এক বছর আগে নিয়ে এসেছে। এই এক বছরে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। আমার মেয়েকে বাড়িতে আনার কথা বললে রুবেল আজকাল বলে এক বছর পার করে দেয়। আমার মেয়েকে এভাবে দেখতে হবে জীবনে কল্পনাও করিনি। তারা আমার মেয়েকে শেষ করে ফেলেছে। মেয়ের পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন। আমি এর বিচার চাই।’

jagonews24

নির্যাতনের শিকার কিশোরী জানায়, মামা-মামি প্রতিদিন নির্যাতন করতেন। দা, ছুরিসহ বিভিন্ন জিনিস দিয়ে শরীরে আঘাত করতেন। ব্লেড ও দা দিয়ে পিঠ কেটে ফেলেন। মাঝে মধ্যে গরম খুন্তি দিয়ে ছেঁকা দিতেন। পায়ের আঙুলগুলো থেঁতলে দেওয়া হয়েছে। পেটানোর কারণে দুই হাত ফুলে গেছে। ঠিকমতো খাবারও দিতেন না। কিছু হলেই নির্যাতন করা হতো।

রোজিনা বলে, ‘আজকে (বৃহস্পতিবারি) মামি বাসায় ছিল না। তাই মামাকে ফাঁকি দিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে যাই। আমার মামি আমার সঙ্গে যা করেছে, তার বিচার চাই।’

চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাহার মিয়া বলেন, অভিযুক্ত দুজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শরীফুল ইসলাম/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।