পাবনা
অসময়ে যমুনার ভাঙন, দিশেহারা তিন গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার
পাবনার বেড়ায় নৌ-চ্যানেল সচল রাখতে ড্রেজিংয়ে গতিপথ বদলেছে যমুনা নদীর। ফলে প্রবল স্রোতে অসময়ে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এতে হুমকিতে পড়েছে উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের অন্তত এক হাজারেরও বেশি পরিবার।
স্থানীয়রা বলেছেন, ভাঙন না থামলে নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে মসজিদ, মাদরাসা, কবরস্থান ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর।

ভাঙন আতঙ্কে থাকা এলাকাবাসী ও পাউবো সূত্র জানায়, গত দুই বছরে যমুনার ভাঙনে পাঁচ শতাধিক পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়েছে। হাজারেরও অধিক বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। গত কয়েক বছর ধরে বর্ষার আগেই যমুনা ভাঙন তাণ্ডব চালাচ্ছে।
সূত্রটি আরও জানায়, স্রোত এদিকে না থাকায় নদী ছিল দূরে। কিন্তু পূর্বে অবৈধভাবে ড্রেজিংয়ে বালু উত্তোলন ও নৌ চ্যানেল সচল রাখতে অব্যাহতভাবে ড্রেজিংয়ের ফলে নদী গতিপথ পাল্টেছে। ফলে স্রোত এসে এসব এলাকায় আঘাত হানায় ভাঙন তালিকায় চরের নতুন নতুন গ্রাম অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। গত দুই মাস ধরে যমুনার তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের নেওলাইপাড়া, বাটিয়াখরা ও মরিচাপারা গ্রামের বাসিন্দাদের আশঙ্কা বেড়ে চলেছে।
আশঙ্কার কথা জানিয়ে ভাঙন এলাকা বাটিয়াখড়া গ্রামের বাসিন্দা আফতাব হোসেন বলেন, এই তিনটি গ্রামে এক হাজারেরও বেশি পরিবারের বসবাস। সবাই আতঙ্কে রয়েছেন। পূর্বের ভাঙনগুলোতে এক হাজার বিঘার মতো জমি নদী খেয়েছে। এবারও শুরু হয়েছে। এভাবে চললে আমাদের বাড়িঘর, মসজিদ, মাদরাসা, গোরস্তান সবকিছু ভেঙে নদীতে চলে যাবে।
নেওলাই গ্রামের গৃহবধূ মজিরন বেওয়া জানান, চর এলাকার প্রায় সব মানুষের সংসার চলে জমিজমা চাষবাসের ওপর। এদিকে একের পর এক জমি নদীতে চলে যাচ্ছে। গত দুই বছর ছাড়া আমার বিয়ের পর এ ধরনের ভাঙন দেখি নাই। ভাঙন থামাতে সরকার ব্যবস্থা না নিলে তাদের সব শেষ হয়ে যাবে বলেও জানান এ গৃহবধূ।

নদীপাড়ের আরেক বাসিন্দা আরশেদ বলেন, এখানকার জমিগুলোতে গম, বাদাম ও তিল থেকে শুরু করে অন্যান্য ফসল আবাদ হতো। এখন সেগুলো নদীর ভেতর। এখন যেসব জমি দেখা যাচ্ছে ভাঙন না থামলে এগুলোও যাবে। এভাবে যদি ফসলি জমি হারাতে থাকি তাহলে আমরা কৃষকরা বাঁচবো কীভাবে?
নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু দাউদ বলেন, এরইমধ্যে তীরবর্তী ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন।
এ বিষয়ে পাবনার বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মো. হায়দার আলী বলেন, ভাঙন রোধে নেওলাইপাড়ার ৭১০ মিটার নদী এলাকায় ৭টি প্যাকেজে একটি কাজের অনুমোদন হয়েছে। এরইমধ্যে তিনটি প্যাকেজের কাজ চলমান রয়েছে। এর আওতায় ২৫০ কেজির জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে আমাদের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও ডিজাইন টিম ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ চলছে।
আলমগীর হোসাইন নাবিল/এমএন/জিকেএস