গ্র্যান্ড রিভারভিউ সিনেপ্লেক্স
অনুমোদন নেই, তবুও চলছে সিনেমা প্রদর্শনী
অনুমোদন ছাড়াই নিয়মিতভাবে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করছে রাজশাহী শহরের বহুল আলোচিত ‘গ্র্যান্ড রিভারভিউ সিনেপ্লেক্স’। চলচ্চিত্র প্রদর্শন আইন লঙ্ঘন করে দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুমোদন পেতে তারা আবেদন করেছেন। যদি প্রশাসনের আপত্তি থাকে তাহলে তারা বন্ধ করে দেবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর কাজিহাটা এলাকায় অত্যাধুনিক এই মাল্টিপ্লেক্স হলে সম্প্রতি একাধিক বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। কিন্তু হলটির নেই বৈধ প্রদর্শন লাইসেন্স বা জেলা প্রশাসনের অনুমোদন।

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, রাজশাহী জেলায় একটিমাত্র হলের অনুমতি আছে। সেটি হলো ‘রাজতিলক হল’। এটি নগরীর উপকণ্ঠ কাঁটাখালীতে অবস্থিত। এর বাইরে আর কোনো হলের অনুমতি নেই। গ্র্যান্ড রিভারভিউ সিনেমা হল এখনো চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন পায়নি। তাদের লাইসেন্সের আবেদনের একটি কপি আছে। তবে সেটি ফায়ার সার্ভিসের ত্রুটির কারণে বাতিল হয়ে যায়।
চলচ্চিত্র প্রদর্শনী নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৬৫ অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া কোনো প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা আইনত অপরাধ। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।

রাজশাহী গ্র্যান্ড রিভারভিউ সিনেপ্লেক্সের তথ্যমতে, ২০২২ সালে তারা ‘পরাণ’ সিনেমা দিয়ে তাদের প্রদর্শনী শুরু করেন। এরপর ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তাদের হালপ্রযুক্তির একটি সিনেমা হল ‘জিআরভি সিনেপ্লেক্স’ উদ্বোন করেন। এক পর্দার প্রেক্ষাগৃহটি গ্র্যান্ড রিভারভিউ হোটেলের অংশ হিসেবে যাত্রা করে। প্রথম দিন থেকে জিআরভি সিনেপ্লেক্সে প্রদর্শিত হচ্ছে আমদানি করা ভারতীয় সিনেমা ‘ডানকি’। প্রতিদিন বিকেল ৩টা, সন্ধ্যা ৬টা ও রাত ৯টায় শো চলে এখানে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন ক্যাটাগরির টিকিট কেটে সিনেমা দেখা যায় এখানে। টিকিটের দাম ইকোনমি ৩৫০ টাকা, বিজনেস লেন ৪০০ টাকা ও ভিআইপি ৭০০ টাকা। এখন পর্যন্ত হলটিতে ৩৫-৪০টি সিনেমা প্রদর্শন করা হয়েছে। বর্তমানে প্রদর্শন করা হচ্ছে ইংরেজি চলচ্চিত্র ‘সুপারম্যান’।
গ্র্যান্ড রিভারভিউ হোটেলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ইসফা খায়রুল হক শিমুল বলেন, ‘আমরা রাজশাহী শহরে একমাত্র সিনেমা হলটি পরিচালনা করছি। শাকিব খানের দুটি সিনেমা ছাড়া প্রায় সব সিনেমাতেই আসন ফাঁকা ছিল। প্রতি মাসে আমাদের রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়। এটি লসে চলছে। তারপরও রাজশাহীবাসীর জন্য এটি পরিচালনা করা হয়।’

লাইসেন্স বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে চলচ্চিত্র সমিতি ও প্রোডিউসারের লাইসেন্স আছে। শুধু ডিসি অফিসের (অনাপত্তি পত্র) এনওসি নেই। সেটির জন্যও আমরা আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তৎকালীন মেয়র লিটন আমাকে বিএনপির রাজনীতির অজুহাতে এটি বাতিল করে দেন। ফায়ার সার্ভিসের অজুহাতে তারা এটি বাতিল করে দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে রাজশাহী শহরের সবচেয়ে বেশি ফায়ার সেফটি ব্যবহার করা আছে। তারপরও তারা এটি দেননি (অনুমতি দেননি)। তারা না দিলেও আমরা এটি চালাচ্ছি। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। কেউ বন্ধ করতেও বলেননি। যদি কেউ বন্ধ করতে বলেন, তাহলে বন্ধ করে দেবো।’
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার এস এম রকিবুল হাসান বলেন, “রাজশাহীতে একটিমাত্র হলের অনুমতি আছে। সেটি হলো ‘রাজতিলক হল’। এটি কাঁটাখালিতে অবস্থিত। এর বাইরে আর কোনো হলের অনুমতি নেই। গ্র্যান্ড রিভারভিউ সিনেমা হল এখনো চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন পায়নি।”
তিনি আরও বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া সিনেমা প্রদর্শনী করা আইনগতভাবে অপরাধ। তারা একটি আবেদন করেছিলেন। সেটি ফায়ার সার্ভিসের আপত্তির জন্য দেওয়া হয়নি। এরপর আবারও সেগুলো ইমপ্রুভ করে দিতে বলা হয়েছিল। তারা সেগুলো পূরণ করলে আমরা তাদের অনুমতি দিয়ে দেবো। তবে এখন প্রদর্শনীর বিষয়ে তাদের নোটিশ ও শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
সাখাওয়াত হোসেন/এসআর/জিকেএস