পাইরেক্সের দখলে সিরামিকের বাজার

মিলন রহমান মিলন রহমান , জেলা প্রতিনিধি, যশোর
প্রকাশিত: ০৫:৩৭ পিএম, ১০ আগস্ট ২০২৫
দাম তুলনামূলক কম ও দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় কদর বেড়েছে পাইরেক্সের/ছবি-জাগো নিউজ

একসময় গৃহস্থালির তৈজসপত্রে একচেটিয়া বাজার ছিল সিরামিকের। প্রায় সব ঘরেই দেখা মিলতো সিরামিক পণ্যের। কিন্তু বর্তমানে সেই চিত্র পাল্টেছে। দাম তুলনামূলক কম ও দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় কদর বেড়েছে পাইরেক্সের। যদিও সিরামিককে ‘বনেদিয়ানা’র পরিচয়ক হিসেবে বিবেচনা করছেন ক্রেতাদের কেউ কেউ।

যশোরের বড় বাজারের ক্রোকারিজ সামগ্রীর দোকানগুলো ঘুরে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

যশোরের বড় বাজারের এইচএমএম (হাজী মুহাম্মদ মহসীন) সড়কসহ আশপাশের এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৩০টি ক্রোকারিজ সামগ্রীর দোকান রয়েছে। দোকানগুলোতে গৃহস্থালি, রান্নাঘর, ডাইনিংয়ের সব ধরনের তৈজসপত্র পাওয়া যায়। সিরামিক, পাইরেক্স, মেলামাইন, কাচ, স্টিল, প্লাস্টিকসহ যত ধরনের তৈজসপত্র মিলবে এখানে। ফলে গৃহস্থালির এসব পণ্যসামগ্রী কিনতে প্রতিদিনই ভিড় থাকে বড় বাজারের এই দোকানগুলোতে। যশোর ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকেও বড় বাজারের এইচএমএম রোডের দোকানগুলোতে আসেন ক্রেতারা।

‘দামের পাশাপাশি পাইরেক্স পণ্য কাচজাতীয় হওয়ায় এর গ্লেজ বা চাকচিক্য বেশি। এসব কারণে এখন ক্রেতারা অনেক ক্ষেত্রে সিরামিকের পরিবর্তে পাইরেক্সের পণ্য কিনছেন। বাজারে আরএফএল ও নাসির গ্রুপের পাইরেক্স সামগ্রীর চাহিদা বেশি।’

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে সিরামিক, পাইরেক্স, মেলামাইন, কাচ, স্টিলের থালা-বাসন, কাপ-পিরিচ, মগ, প্লেট, বাটি, জগ, গ্লাস, টি-পট, ডিনার সেটসহ গৃহস্থালির সব ধরনের তৈজসপত্র বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে বেচাবিক্রিতে এগিয়ে রয়েছে সিরামিকের জিনিসপত্র। বিশেষ করে সিরামিকের ডিনার সেট, কাপ-পিরিচ সেট, প্লেট, বড় ও ছোট আকারের বাটি, মগ, টি-পট ইত্যাদি সামগ্রীর বেচাবিক্রি বেশি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, সিরামিকের ডিনার সেট (২০ থেকে ৫২ পিস) সাধারণত তিন হাজার ৩০০ থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। আকার ও মানভেদে প্লেট ১৫০-৪০০ টাকা, কাপ সেট (৬ পিস) ৭০০-২০০০ টাকা, মগ ১০০-৪০০ টাকা, ছোট বাটি ৮০-২০০ টাকা, বড় বাটি ২০০-৪০০ টাকা, টি-পট ৫০০-১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে মুন্নু সিরামিক, শাইনপুকুর, আকিজ, ফার সিরামিক, প্রতীক, প্যারাগন, আর্টিসান, আরিয়ান, বিএফসি, বিসিআইসহ অন্তত ১৫টি কোম্পানির সিরামিক পণ্যের বেশি চাহিদা রয়েছে।

‘গত দুই বছরে সিরামিক পণ্যের দাম ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। অথচ পাইরেক্স পণ্যের দাম সিরামিকের তুলনায় গড়ে ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত কম। সে কারণে ক্রেতারা পাইরেক্সের দিকে ঝুঁকছেন। পাইরেক্স কোম্পানিগুলোও সিরামিকের বাজার ধরতে বাড়তি নজর দিচ্ছে। ফলে সিরামিকের বাজারে এর প্রভাব পড়ছে।’

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিরামিকের একচেটিয়া বাজারে এখন পাইরেক্স পণ্য হানা দিতে শুরু করেছে। এর তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, গত দুই বছরে সিরামিক পণ্যের দাম ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সেই তুলনায় পাইরেক্স পণ্যের দাম সিরামিকের তুলনায় গড়ে ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত কম। যেখানে সিরামিকের ডিনার সেট তিন হাজার ৩০০ টাকা থেকে শুরু, সেখানে পাইরেক্সের ডিনার সেট এক হাজার ৭০০ টাকা থেকে শুরু হয়েছে। আর আড়াই থেকে পাঁচ হাজারের মধ্যে ভালোমানের পাইরেক্স ডিনার সেট বাজারে মিলছে।

দামের পাশাপাশি পাইরেক্স পণ্য কাচজাতীয় হওয়ায় এর গ্লেজ বা চাকচিক্য বেশি। এসব কারণে এখন ক্রেতারা অনেক ক্ষেত্রে সিরামিকের পরিবর্তে পাইরেক্সের পণ্য কিনছেন। বাজারে আরএফএল ও নাসির গ্রুপের পাইরেক্স সামগ্রীর চাহিদা বেশি।

পাইরেক্সের দখলে সিরামিকের বাজার

শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা শাহনাজ পারভীন বড় বাজারে এসেছিলেন ডিনার সেট কিনতে। তিনি জানান, আত্মীয়ের বৌভাত অনুষ্ঠানে উপহার দেওয়ার জন্য ডিনার সেট পছন্দ করছেন। সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকায় সিরামিকের যে ডিনার সেট তা পছন্দ হচ্ছে না। অথচ ওই দামে পাইরেক্সের ডিনার সেট অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। তাই পাইরেক্সের ডিনার সেট কিনছেন।

শহরের কারবালা এলাকার বেসরকারি চাকরিজীবী জিয়া উদ্দিন জানান, বাসায় ব্যবহারের জন্য প্লেট ও কাপ-পিরিচ কিনতে এসেছেন। সিরামিকের তুলনায় পাইরেক্সের দাম কম হওয়ায় পাইরেক্সে প্লেট, কাপ-পিরিচ কিনেছেন।

তবে শহরের ঘোপ এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী ডালিয়া সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, সিরামিকের কাপ-পিরিচ সেট ও মগ কিনেছি। পাইরেক্সের তুলনায় দামটা একটু বেশি হলেও এগুলো অনেকদিন ব্যবহার করা যায়। সিরামিকের কিছু কিছু তৈজসপত্রে একটা ‘বনেদিয়ানা’ ভাব আছে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তৈজসপত্রের বাজার ধরতে পাইরেক্স কোম্পানি ও ডিলাররা বাড়তি নজর দিচ্ছেন। বিশেষ করে পণ্য সরবরাহে নানা ধরনের সুবিধাও দিচ্ছেন তারা। এসবের মধ্যে পণ্য সরবরাহের পর মূল্য পরিশোধ, ভেঙে গেলে পরিবর্তন করে দেওয়ার সুবিধা রয়েছে। ফলে অনেক ব্যবসায়ী সিরামিকের পরিবর্তে পাইরেক্স বিক্রিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। লাভও হচ্ছে বেশি।

পাইরেক্সের দখলে সিরামিকের বাজার

এইচএমএম সড়কের ক্রোকারিজ গার্ডেনের স্বত্বাধিকারী আব্দুল্লাহ আল মাছুম জাগো নিউজকে বলেন, বাজারে সিরামিক ও পাইরেক্স দুই ধরনের পণ্যই বিক্রি হচ্ছে। তবে সিরামিকের তুলনায় পাইরেক্সের পণ্যের দাম কিছুটা কম। বর্তমানে পাইরেক্স পণ্যের বিক্রি বাড়লেও সিরামিক পণ্যের বিক্রিও ভালো বলে তিনি দাবি করেন।

বেস্ট সিরামিকসের স্বত্বাধিকারী আজিম হোসেন জানান, গত দুই বছরে সিরামিক পণ্যের দাম ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। অথচ পাইরেক্স পণ্যের দাম সিরামিকের তুলনায় গড়ে ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত কম। সে কারণে ক্রেতারা পাইরেক্সের দিকে ঝুঁকছেন। পাইরেক্স কোম্পানিগুলোও সিরামিকের বাজার ধরতে বাড়তি নজর দিচ্ছে। ফলে সিরামিকের বাজারে এর প্রভাব পড়ছে।

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।