কোটি টাকায় ‘ডিবি হারুনের’ রিসোর্ট রক্ষার অভিযোগ

এসকে রাসেল
এসকে রাসেল এসকে রাসেল , জেলা প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ
প্রকাশিত: ০১:১৭ পিএম, ১২ আগস্ট ২০২৫
ডিএমপির সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের একাংশ। ছবি/জাগো নিউজ

 

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সারাদেশের মতো ছাত্র-জনতা কিশোরগঞ্জেও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বাড়িঘর ও স্থাপনায় ভাঙচুর চালায়। হামলার তালিকায় ছিল সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়ি, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ ও সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের বাড়ি। মিঠামইন সদরে আবদুল হামিদের ভাতিজা শরীফ কামালের একটি রিসোর্টও ভাঙচুর হয়।

অক্ষত ছিল মিঠামইন উপজেলার হোসেনপুর হাওরে অবস্থিত হারুন অর রশিদের ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’। এ রিসোর্টের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ রয়েছে, কৃষকদের জমি জোরপূর্বক দখল করে এটি নির্মাণ করা হয়েছে।

সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের একাংশ। ছবি/জাগো নিউজ

টাকার বিনিময়ে রিসোর্ট রক্ষার অভিযোগ

স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, এক কোটি ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে রিসোর্ট রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছিলেন মিঠামইন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর।

উপজেলা যুবদলের ১ নম্বর সদস্য মাহফুজ আহমেদ দাবি করে বলেন, ‘৫ আগস্টের কিছুদিন পর হারুনের চাচা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মোখলেছুর রহমান ভূঞা এক ব্যাগভর্তি টাকা জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীরের খামারবাড়িতে পৌঁছে দেন। সেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম।’

তার অভিযোগ, এ টাকার বিনিময়েই রিসোর্ট রক্ষার চুক্তি হয়। শুধু তাই নয়, উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর টাকা নিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজনকেও রক্ষা করছেন।

সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের একাংশ। ছবি/জাগো নিউজ

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

এলাকার বাসিন্দা ইসলাম উদ্দিন বলেন, আমাদের এখানে এই রিসোর্টের কোনো দরকার নেই। আমাদের মূল জীবিকা কৃষিকাজ ও মাছ ধরা। জমি দখল করে রিসোর্ট বানানো হয়েছে। জমি হারানো কৃষকরা কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে বিচার চেয়েছেন। আমাদের দাবি, রিসোর্ট ভেঙে গরিব কৃষকদের জমি ফেরত দেওয়া হোক।

আফাজ মিয়া নামের আরেকজন জানান, টাকা লেনদেনের গুঞ্জন সবার কানে এসেছে, কিন্তু মামলা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষকে রিসোর্টে হামলা থেকে বিরত রাখা হয়েছে।

ঘাগড়া ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী রাকিব বলেন, ‘আজ ফ্যাসিস্ট হাসিনার লোকেরা বিএনপির সঙ্গে যোগসাজশ করছে। দলের নাম ব্যবহার করেই সব হচ্ছে। ১৬ বছরের ত্যাগী নেতাকর্মীরা আজ অবহেলিত।’

হাওরের সন্তান গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-অর্থ সম্পাদক মো. মুখলেছুর রহমান আকন্দ বলেন, টাকা লেনদেনের কথা লোকমুখে শোনা যাচ্ছে। হয়ত এই কারণেই রিসোর্টে কোনো হামলা হয়নি বা স্থানীয় এলাকাবাসী পারিবারিক বিরোধে জড়াতে চায়নি।

সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের একাংশ। ছবি/জাগো নিউজ

হোসেনপুর গ্রামের দীলিপ চৌধুরী বলেন, আমার ১ একর ১০ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করা হয়েছে, বিনিময়ে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি।

মানিক মিয়া নামের এক ব্যক্তির দাবি, ৫ একর জমির বিনিময়ে ৫ কোটি টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো অর্থ তিনি পাননি।

অভিযুক্তদের বক্তব্য

জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে হারুনের চাচা আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান ভূঞা বলেন, ‘আমি নিজেই একাধিক মামলার আসামি। জেল খেটে এসেছি। রিসোর্ট রক্ষায় টাকা দেওয়ার কোনো বিষয় জানি না।’

উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘যে টাকা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তার প্রমাণ দিতে বলেন মাহফুজকে। আমি হারুনের রিসোর্ট রক্ষার দায়িত্ব নিইনি। এগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট।’

প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে মাওলা আলী ইন্টারন্যাশনালের কার্যক্রম শুরু

রোববার (১০ আগস্ট) দুপুরে প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে গিয়ে দেখা যায়, মাওলা আলী ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৮ আগস্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে সেখানে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগপ্রাপ্ত ১৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী রিসোর্ট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন।

প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বপন চিশতী জানান, তারা মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কাছ থেকে তিন বছরের জন্য রিসোর্টটি ইজারা নিয়েছেন এবং ইতোমধ্যে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। তবে কত টাকার বিনিময়ে ইজারা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে জানাতে নারাজ তিনি।

এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।