হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশিত: ০৮:০৬ পিএম, ১২ আগস্ট ২০২৫

পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মার পানি প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ সেন্টিমিটার করে বাড়ছে।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয় ১২ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। আর মাত্র এক মিটার অর্থাৎ ১৩ দশমিক ৮০ উচ্চতা হলে পদ্মার পানি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।

এদিকে, নদী রক্ষা বাঁধ উপচে পানি উপজেলার ধাপাড়ি, আরামবাড়িয়া, ইসলামপুরসহ নদী তীরবর্তী গ্রামে প্রবেশের উপক্রম হয়েছে। নদী তীরবর্তী ফসলি জমিতে পানি উঠে গেছে।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই

উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নে শত শত একর জমির কলাবাগান এখন পানির নিচে। এখানকার শাক-সবজির জমিতে পানি উঠতে শুরু করেছে। ফলে এখানকার ফসল নষ্ট হতে শুরু হয়েছে। চরাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গোখাদ্যের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। চরে গোখাদ্যের অভাবে গবাদিপশু নিয়েও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। চরের গরু-মহিষের বাথান ভেঙে গরু-মহিষ নিয়ে সবাই চলে আসছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১৫ গাডারের মধ্যে ১৪টি গাডার পানির নিচে আরেকটি গাডারের কাছে পানি উঠতে শুরু করেছে। পানি বাড়ার গতি এভাবে অব্যাহত থাকলে আজ রাতের মধ্যে ১৫ নম্বর গাডারের নিকট পানি পৌঁছে যাবে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠা টি স্টল, খাবার দোকান, ফলমূল ও খেলনার দোকানপাটে পানি উঠতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দোকান সরিয়ে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নিচের ফুচকা বিক্রেতা মনোয়ারা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, যেখানে আমার ফুচকার দোকান ছিল সেখানে পানি উঠে গেছে। এজন্য দোকান সরিয়ে নিয়েছি। যারা ব্রিজের নিচে বেড়াতে আসতো তারা আসতে পারছে না। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে দুই একদিনের মধ্যে পুরো হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে পানি চলে আসবে।

ফল বিক্রেতা আশরাফ হোসেন বলেন, দোকান সকালে সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছি। দোকানে পানি উঠলে অসুবিধা হতো না।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই

আমজাদ হোসেন (৬৫) নামে এক দর্শনার্থী বলেন, দুই মাস আগে এসে দেখেছিলাম নদীতে পানি নেই বললেই চলে। নদীজুড়ে চর ছিল। আজ দেখছি নদী ভরে গেছে। অনেকেই দোকানপাট সরিয়ে নিচ্ছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে সব দোকানপাট তলিয়ে যাবে।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে কর্মরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক (রিডার) হারিফুন নাঈম ইবনে সালাম জাগো নিউজকে বলেন, মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। সোমবার পানির উচ্চতা ছিল ছিল ১২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। প্রতিদিন গড়ে পানির উচ্চতা বাড়ছে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইলিয়াস হোসেন বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ১৩ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। মঙ্গলবার এ পয়েন্টে পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয় ১২ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। বিপদসীমা থেকে এক মিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে পানি। তবে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে কিনা তা এখনি বলা যাচ্ছে না।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মমিন জাগো নিউজকে বলেন, পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ফসলি জমি পানিতে ডুবতে শুরু করেছে। এখানকার কলাবাগানেও পানি উঠেছে। ফলে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

শেখ মহসীন/এএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।