বরিশালে শতবর্ষী ডিসি লেকে দেওয়াল নির্মাণ নিয়ে প্রতিবাদ-মামলা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরিশাল
প্রকাশিত: ০৭:১১ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০২৫

বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী বেলস পার্ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা শতবর্ষী ডিসি লেক দেওয়াল দিয়ে ঘেরার প্রতিবাদে ধারাবাহিক বিক্ষোভ চলছে নগরীতে। নির্মাণ বন্ধের দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচী, মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন নাগরিকরা। সবশেষ এ নিয়ে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে প্রতিবাদ।

জানা যায়, দেওয়াল নির্মাণ বন্ধে মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নগরীর কাউনিয়া ব্রাঞ্চ রোডের বাসিন্দা মো. হাফিজ আহমেদ বাবলু মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে এ মামলা করেন। বিচারক মো. সাদিক আহম্মেদ অভিযোগ আমলে নিয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

জানা গেছে, নগরীর রাজা বাহাদুর সড়কে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং জেলা ও দায়রা জজের বাসভবনের বিপরীতে বড় জলাধারটি ‘ডিসি লেক’ নামে পরিচিত। অসামাজিক কার্যকলাপ, মাদকসেবীদের আড্ডা ও লেকের মাছ চুরির অভিযোগে দেওয়াল ও গ্রিল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে লেকটি। এ নিয়ে অনেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। নগরবাসীর ব্যানারে কয়েক দিন ধরে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও অংশ নেন।

বরিশাল গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ নিলু বলেন, ‘এই লেকটি ডিসির ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, এটা বরিশালবাসীর সম্পদ। কিন্তু বর্তমান জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন অনেকটা আমলাতান্ত্রিক প্রভাব দেখিয়ে উন্মুক্ত জলাশয়ে দেওয়াল দিয়ে এটিকে অবরুদ্ধ করছেন।’

বরিশালে শতবর্ষী ডিসি লেকে দেওয়াল নির্মাণ নিয়ে প্রতিবাদ-মামলা

মহানগর বাসদের সদস্যসচিব মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘এই লেকটি দেওয়াল দিয়ে আটকে দিলে আর কোনো উন্মুক্ত জলাশয় থাকবে না বরিশাল মহানগরীতে। তাই এটি উন্মুক্ত রাখার দাবি জানাই।’

এর আগে ‘বরিশালের সর্বস্তরের নাগরিক’ ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম খসরু, বিএনপি বরিশাল জেলার (দক্ষিণ) সদস্যসচিব আবুল কালাম শাহিনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশর মানুষ উপস্থিত ছিলেন। পরে বিক্ষোভ করেন তারা। সেসময় বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে দখলদারির মনোভাব সৃষ্টির অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা।

বেলস পার্কে আসা দর্শনার্থী সুবীর মিত্র বলেন, মাদক সেবন, ‘ছিনতাইয়ের ভয়ে ডিসি লেক দেওয়াল দিয়ে ঢেকে ফেলা উচিত হবে না। ভিআইপি এই এলাকায় ডিসি-এসপির বাসভবন। সেখানেই যদি মাদক সেবন আর ছিনতাই হয়, তাহলে নগরবাসী কী নিরাপদ আছে?’

আরেক দর্শনার্থী নাজলা আক্তার মিম বলেন, ‘নগরীর অন্যতম উন্মুক্ত জলাধার ডিসি লেক দর্শনার্থীদের জন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম স্পট। সেটাকে দেওয়াল দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা ঠিক হবে না।’

ডিসি লেকের প্রাচীর নির্মাণ বন্ধের দাবিতে আন্দোলনকারী মহানগর সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সংগঠক ফারজানা আক্তার বলেন, ‘গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে ২ শতাধিক মানুষ স্বাক্ষর দিয়েছেন। প্রশাসন নগরবাসীর আবেগ, অনুভূতির হয়ত গুরুত্ব দিচ্ছে না। এর প্রতিবাদে আরও বড় কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নামব আমরা।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেছেন ‘তরুণ-তরুণীরা লেকের পাশে গভীর রাত পর্যন্ত সময় কাটানোর নামে অশ্লীলতা করে। এছাড়া সেখানে মাদকসেবীদের আড্ডা হয়, লেক থেকে মাছ চুরি করে, ছিনতাই হয়। এগুলো বন্ধ করতে লেকে ফেন্স (বেড়া) দেওয়া হচ্ছে। এতে লেক মোটেও আড়াল হবে না।

শাওন খান/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।