বুড়ি বাঁধে মাছ ধরার উৎসবে হাজারো মানুষ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও
প্রকাশিত: ০৬:০৯ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
ঠাকুরগাঁওয়ের সুক নদীর বুড়ি বাঁধ মাছ শিকারে মেতেছেন হাজারো মানুষ

কেউ ভেলায় বা ছোট নৌকায়, কেউবা পানিতে কোমরজল ডুবে জাল ফেলছেন সারি বেঁধে। সঙ্গে হাজারো মানুষের কলরব-সব মিলিয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সুক নদীর বুড়ি বাঁধ যেন এক উৎসবের মেলা। প্রতি বছরের মতো এবারও বাঁধটিতে শুরু হয়েছে মাছ ধরার উৎসব। এই অনন্য উৎসব দেখতে ও এতে অংশ নিতে নদীজুড়ে ভিড় করেছেন হাজারো মানুষ।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধের জলকপাট খুলে দেওয়ার পর থেকেই নদীর দুই পাড়ে মানুষের ঢল নামে। শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল থেকে শত শত মানুষ জাল, খইলসা ও নৌকা নিয়ে বাঁধের পানিতে নেমে পড়েন। রাতভর মাছ ধরার পর ভোর হতেই শিকারিরা ধরা মাছ নিয়ে ডাঙ্গায় ফিরে আসেন।

বুড়ি বাঁধে মাছ ধরার উৎসবে হাজারো মানুষ

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও সদরের আকচা ও চিলারং ইউনিয়নের সংযোগস্থলে অবস্থিত বুড়ি বাঁধ, যা দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে। প্রতি বছর বাংলা কার্তিক মাসের শুরুতে বাঁধের জলকপাট খুলে দেওয়া হয়, আর এ সময় আশপাশের এলাকা থেকে হাজারো মানুষ ছুটে আসেন মাছ ধরতে ও দেখতে। তিন থেকে চার দিনব্যাপী এই উৎসবে নদীজুড়ে ধরা পড়ে দেশীয় প্রজাতির নানা মাছ- টাকি, পুটি, মলা, ফলি, শিং, শোল, টেংরা- যা ভালো দামে বিক্রি হয় বাঁধ পাড়ের অস্থায়ী বাজারে।

বুড়ি বাঁধে মাছ ধরার উৎসবে হাজারো মানুষ

স্থানীয়দের দাবি, আগের মতো এখন আর তেমন বড়বড় মাছ মেলে না। একজন স্থানীয় মৎস্যজীবী বলেন, আগে রিং জাল দিয়ে অনেকে আগেভাগেই মাছ ধরে ফেলত, তাই এখন মাছ কিছুটা কমে গেছে। কিন্তু তবুও এই উৎসবটাই আমাদের আনন্দের জায়গা-সবাই মিলে একসঙ্গে মাছ ধরা, হাসি-আনন্দ ভাগাভাগি করা যায়।

বুড়ি বাঁধে মাছ ধরার উৎসবে হাজারো মানুষ

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথা মতে, ১৯৫২ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ২ হাজার ৩৮৮ হেক্টর জমির ওপর নির্মাণ করে বুড়ি বাঁধটি, যা পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে সংস্কার করা হয়। চলতি বছর বাঁধটির মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার হেক্টর উঁচু জমির আমন ধানের সেচের চাহিদা পূরণ করা হয়েছে- যা ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, আমরা বুড়ি বাঁধে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে কাজ করছি। এ বছর একাধিকবার অভিযান চালিয়ে রিং জাল ধ্বংস করা হয়েছে। আগামীতে যেন আরও বেশি মাছ পাওয়া যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মানুষ এখন বিনোদনের জায়গা খুঁজে পায় না, তাই এই বাঁধের উৎসব তাদের আনন্দের এক কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

তানভীর হাসান তানু/কেএইচকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।