পাকুড়িয়া গণহত্যা দিবস আজ


প্রকাশিত: ০৫:৪৮ এএম, ২৮ আগস্ট ২০১৬

আজ ২৮ আগস্ট। নওগাঁর মান্দা উপজেলার পাকুড়িয়া গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে কাক ডাকা ভোরে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকুড়িয়া গ্রামের চারিদিক ঘিরে ফেলে।

এরপর গ্রামের যুবক ও বয়স্কদের ধরে এনে স্থানীয় ইউনাইটেড হাইস্কুলের মাঠে (বর্তমানে শহীদ বাজার) জড়ো করে। বাড়িঘর লুটপাট করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সম্ভ্রমহানি করে অসংখ্য মা বোনের।

সেদিন গ্রাম থেকে প্রায় দেড়শ মানুষকে জোর করে ধরে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে কয়েক দফায় মেশিনগান ও স্টেনগানের গুলি বর্ষণ ও ব্রাশ ফায়ার করে হানাদার বাহিনী। নিহত হন ১২৮ জন মুক্তিকামী বাঙালি। শুধু ব্রাশ ফায়ার করে ক্ষান্ত হয়নি তারা মৃত্যু নিশ্চিত করতে বেনেটে দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। তবে এ সময় গায়ে রক্ত মেখে নিঃশ্বাস বন্ধ রেখে মরে যাওয়ার ভান করে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান ১৮ জন।

পরে কয়েক দিনের ব্যবধানে মারা যান আহতদের মধ্যে অনেকেই। সে সময় পাকুড়িয়া পরিণত হয়েছিল এক বিধবা পল্লীতে। যারা শরীরে বুলেটের চিহ্ন নিয়ে বেঁচে আছেন তারাসহ সেই সময়কার এলাকার স্থানীয় লোকজন আজও সেই দিনের স্মৃতির কথা মনে করে আঁতকে উঠেন। আজও কেঁদে ওঠেন হারানো স্বজনদের কথা মনে করে।

Naogaon-Pakuria

নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের দেলুয়াবাড়ী বাজার থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে একটি ছোট পাকা রাস্তা বয়ে গেছে। সড়কের শুরুতেই লাগানো সাইনবোর্ডে লেখা আছে ‘১২৮ জন শহীদের রক্তাক্ত প্রান্তর এই পথে’। গ্রামটিতে গেলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

স্বাধীনতার পর বাজারের নাম দেয়া হয়েছে ‘শহীদ বাজার’। পুরো বধ্যভূমি ঘেরাও করে একটি সুদৃশ্য ফটক নির্মাণ করা হয়েছে। নিচু ইটের দেয়াল দিয়ে ঘেরা হয়েছে শহীদদের কবরের স্থান। ছোট্ট জায়গায় এক একটি কবরে একাধিক লাশ দাফন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ফটকের দেয়ালে শ্বেত পাথরে খোদাই করে লেখা রয়েছে মাত্র ৭১ জন শহীদের নাম। অপর পাশে লেখা আছে আহত ১৭ জনের নাম।

স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হলেও এই দিনে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় স্থানীয়ভাবে অনুষ্ঠান করা হলেও সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না। অবিলম্বে সরকারিভাবে পাকুড়িয়া গণহত্যার ইতিহাস, শহীদদের কথা মুক্তিযুদ্ধের দলিলে লিপিবদ্ধ, স্মৃতি রক্ষার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দিনটিকে সরকারিভাবে পালনের দাবি জানিয়েছেন শহীদের পরিবার ও এলাকাবাসী।

আব্বাস আলী/এসএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।