শিক্ষার্থীদের পিঠের ওপর দিয়ে হেঁটেছেন আরেক আ.লীগ নেতা


প্রকাশিত: ০৩:৩৮ পিএম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

চাঁদপুরের ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়নের মধ্যেই এবার জামালপুরের শিক্ষার্থীদের পিঠের ওপর দিয়ে সেতু বানিয়ে হেঁটেছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও ওই বিদ্যালয়ের জমিদাতা।

গত ২৯ জানুয়ারি উপজেলার মাহমুদপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের এক বিদায়ী অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছবি প্রকাশ হলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।

জানা যায়, সেদিন বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক আবদুর রাজ্জাকের বিদায়ী অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে শিক্ষার্থীদের সেতু বানিয়ে এ ঘটনার জন্ম দেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক আবদুর রাজ্জাকের বিদায়ী অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এসএসসি পরীক্ষার্থীদেরও বিদায়ী অনুষ্ঠান হচ্ছিল।

এ উপলক্ষে বিদ্যালয়ের জমিদাতা সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা দিলদার হুসেন প্রিন্স মিয়াকে খুশি করার জন্য শিক্ষার্থীদের দিয়ে সেতু বানিয়ে সেই সেতুর ওপর তাকে হাঁটতে দেয়া হয়। এ সময় ওই শিক্ষার্থীর পরনে সাদা শার্ট ও নীল ট্রাউজার ছিল, যা ওই স্কুলের ড্রেসকোড। এ সময় ওই স্কুলের শারীরিক শিক্ষক হাফিজুর রহমান প্রিন্সের পাশেই উপস্থিত ছিলেন।

এই প্রতিবেদকেরও স্কুল সেটি। পরে এ ব্যাপারে প্রিন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এতো কিছু ভেবে তিনি এটি করেননি। জাস্ট মজা করার জন্য করেছেন। এতে শিক্ষার্থীদের শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে শিক্ষক হাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এটি শারীরিক শিক্ষার একটি অংশ। এতো আলোচনার কিছু নেই।

এ ব্যাপারে মাহমুদপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আসলজ্জামান জানান, ২৯ জানুয়ারি বিদ্যালয়ে দুটি অনুষ্ঠান একসঙ্গে চলছিল। তাই এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা আমি জানি না। তবে স্কাউটের সদস্যরা সেদিন তাদের বিভিন্ন শারীরিক কসরত উপস্থান করেছে। সেটার অংশ হিসেবে তাদের তৈরি করা মানব সেতুর ওপর দিয়ে দিলদার হুসেন প্রিন্স হেঁটে গেলেও তা আমার নজরে আসেনি। 


এদিকে চাঁদপুরের ওই ঘটনার পর ফেসবুকে মাহদুরপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের ওই ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হওয়ার পর আলোচনা সমালেচনার ঝড় ওঠে।

ওমর আলী নামক একজন লিখেছেন, “কান্ধে চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল! ফ্লাইওভার আর দরকার হইবে না! উন্নয়নের রোডম্যাপ ‘আবিষ্কৃত’ হইয়াছে!”

জাহিদ হোসেন সুজন লিখেছেন, ‘এরা মানুষ নামে পশু।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুনির হোসেন লিখেছেন, ‘চলুন চাঁদপুরের নূর হোসেন পাটোয়ারীর মতো জামালপুরের মাহমুদপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পিঠে চড়া দিলদার হোসেন প্রিন্সকেও আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী বানিয়ে দিই।’

‘ভালো করলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক আর অপরাধ করলে অনুপ্রবেশকারী’ খুব সুন্দর স্লোগান....
জাহাঙ্গীর আলম লিখেছেন, ‘কোথায় গেলো মানবতাবোধ। মানুষের বিবেক দিন দিন যেন হারিয়ে যাচ্ছে বুড়িগঙ্গা নদীতে। প্রথমে চাঁদপুর এরপর জামালপুর। এভাবে আর কত দিন চলবে অমানসিক কার্যক্রম।’

আলী আহসান বুলবুল লিখছেন, সবার উদ্দেশ্যে বলছি, উনি উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছেন। সভ্যতা বিসর্জিত এই কাজের জন্য তাকে রাষ্ট্রীয় পদক দেয়া দরকার। এরাই যে হিংস্র জানোয়ার তার প্রমাণ এটাই, এই জানোয়ারের বিরুদ্ধে কঠিন কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কি?

এইচএস/শুভ্র মেহেদী/এএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।